খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ বরিশালের তৎকালীন গৌরনদী থানা বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট গ্রামের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা পরবর্তী বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও বাকাল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্যা মনা রানী ব্যানার্জী (৭৬) বিভিন্নরোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় দীর্ঘদিন ধুকে ধুকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজবাড়িতে ইহলোক ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্বামী, ২ পুত্র, ৩ কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, নাতী-নাতনী রেখে গেছেন। আজ শুক্রবার সকাল দশটায় মরহুমার লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজা শেষে পাশ্ববর্তী কোটালীপাড়া উপজেলার শুয়াগ্রামের পুরাতন বাড়ির পারিবারিক গোরস্তানে সমাধিস্থ করা হবে।
একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা মনা রানী ব্যানার্জীর মৃত্যুর খবরে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে আসে। শেষবারের জন্য একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পয়সারহাট গ্রামের তার বাড়িতে ছুটে যান আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মনা রানী ব্যানার্জীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোর্কাত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ, বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপি, জনতা ব্যাংকের পরিচালক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বাবলু, গৌরনদী পৌরসভার মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান হারিছ, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু, অনলাইন গৌরনদী ডট কমের সম্পাদক খোকন আহম্মেদ হীরা প্রমুখ।
আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট গ্রামের খ্রীষ্ট্রিয় সম্প্রদায়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা বি.কে রনজিতের স্ত্রী নারী মুক্তিযোদ্ধা মনা রানী ব্যানার্জির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মনা রানী ব্যানার্জি দীর্ঘদিন থেকে শ্বাশকষ্টসহ বিভিন্নরোগে আক্রান্ত হয়ে শষ্যাশয়ী ছিলেন। বিভিন্নস্থানে তাকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার অসহায় পরিবার আরো অসহায় পরে পরেন। তার বড়পুত্র শ্যামল ব্যনার্জিও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
অসহায় নারী মুক্তিযোদ্ধা মনা রানীকে নিয়ে বিভিন্ন দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর দেশের অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সাহায্যের আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত আর কেউ এগিয়ে আসেননি। ওইসময় মনা রানী ব্যানার্জি এ প্রতিনিধির কাছে একান্ত সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সনে স্বামী ও বড় সন্তানকে নিয়ে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিলাম। শত্র“ মুক্ত করে দেশটাকে স্বাধীন করেছি। সেই স্বাধীন দেশের মাটিতে বসে আজ আমি বিভিন্নরোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় মৃত্যুর প্রহর গুনছি।
মনা রানী ব্যানার্জি, বড় মেয়ে কবিতা রানী ব্যনার্জি ও মেঝ মেয়ে মমতা রানী ব্যানার্জি বলেন, যুদ্ধচলাকালীন তারা স্থানীয় আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য অতিগোপনে তৎকালীন গৌরনদী বর্তমান আগৈলঝাড়া উপজেলার আস্কর গ্রামে একটি চিকিৎসালয় খুলেছিলাম। স্থানীয় রাজাকারদের কাছে এ খবর পেয়ে পাক সেনারা একাধিকবার আমাদের ধরে আনার জন্য অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলো। তাদের পুরো পরিবারটিই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের।