গৌরনদীর সেই হাওয়া ভবন এখন ভুতুড়ে বাড়ি

আগৈলঝাড়া সংবাদদাতা ॥ চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপনের নির্মিত হাওয়া ভবন এখন নিষ্প্রাণ। এ যেন এক ভুতুড়ে বাড়ি! এক সময় ভোর থেকে গভীররাত পর্যন্ত সরগরম জহির উদ্দিন স্বপনথাকা বরিশাল-১ আসনের সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপনের গৌরনদীর গ্রামের ‘হাওয়া ভবন’। বাড়িটি এখন নিষ্প্রাণ। নেই কোন কোলাহল। বর্তমানে দলের নবাগতদের কাছে বাড়িটি এখন ভুতুড়ে বাড়ি বলেই মনে হবে। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় হাওয়া ভবন না হলেও বরিশাল জেলা তথা দক্ষিণাঞ্চলের হাওয়া ভবন হিসেবে পরিচিত জহির উদ্দিন স্বপনের গৌরনদী উপজেলার শরিকলের বিলাসবহুল বাড়িটি এখন বিএনপিসহ স্থানীয়দের কাছে কেবলই স্মৃতি। আলোচিত-সমালোচিত বাড়িটিতে তৎকালীন বিএনপি সরকারেরর সময় সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা, দলীয় নেতা-কর্মী ও তদবিরবাজদের ভিড় ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লেগেই থাকত। কারণ, স্বপন বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পোষ্যপুত্র হিসেবে নিজেকে নিজ এলাকাসহ প্রায় সারা দেশেই পরিচিত করেছিলেন। তিনি নিজেই বলতেন দলের সেকেন্ড পার্সন তারেক জিয়া তার একান্ত সহকর্মী ও বন্ধুজন। দেশে ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকেই ঢাকার হাওয়া ভবনের মতো স্বপনের স্থানীয় হাওয়া ভবনটিও এখন পর্যন্ত রয়েছে নিষপ্রাণ, থেমে গেছে সব কোলাহল।

বিএনপি আমলে জহির উদ্দিন স্বপন সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুলাহকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই আমলে যেসব নেতাকর্মী স্বপনের আস্থাভাজন, বিভিন্ন তদ্বির করতে গভীর রাত পর্যন্ত ওই বাড়িতে অবস্থান করতেন তারাও এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ওই বাড়ি ও স্বপনের ওপর থেকে। সব দায় যেন স্বপনের! নেতাকর্মীদের অভিযোগ, স্বপন ওয়ান-এলেভেনের সময় বিএনপির সংস্কারপন্থীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে বিএনপির সংস্কারপন্থী নেতাদের জোট বাধার দায়িত্ব প্রাপ্তের ভূমিকা পালন করায় তার অনুসারী ও দলীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে শুরু থেকে বর্তমানেও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যার ধারাবাহিকতায় গত ১ জুন তার সামনে তারই এক সময় অনুগত নেতা-কর্মীরা গৌরনদী বাস স্ট্যান্ডে তাকে অবাঞ্ছিত করে ঝাড়ু মিছিল করেছিল। গৌরনদী উপজেলার শরিকল গ্রামে অবস্থিত সাবেক সংসদ সদস্য স্বপনের বিলাসবহুল দ্বিতল সুরম্য বাড়িটি চার দলীয় জোট সরকারের আমলে নির্মিত। যা ওই সময় ‘হাওয়া ভবন’ নামেই খেতাব পায়। এ ছাড়া উপজেলা সদরে যুবদল নেতা সোহেল ঠাকুরের বাড়িটি ছিল তার নির্বাচনী হাওয়া ভবন হিসেবে পরিচিত। অবশ্য সোহেলের এ বাড়িটি স্বপনের নির্বাচনী ক্যাম্পসহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কাজেই ব্যবহৃত হওয়ায় আগের মতো পরিত্যক্তই রয়েছে।

শরিকলের হাওয়া ভবনের এ বাড়িতে বসেই স্বপন ও তার অনুসরীরা স্থানীয় রাজনীতিতে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাসহ প্রভাব বিস্তারের বিভিন্ন কলা কৌশল নির্ধারণ করতেন। নিয়োগ, বদলী বাণিজ্য, ত্রাণ সামগ্রী (চাল, গম, টিন) বরাদ্দ এবং টেন্ডার বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক ছিলেন স্বয়ং স্বপন, তার পাশাপাশি বিভিন্ন অর্থ কমিশন বাণিজ্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন তার আপন ছোট ভাই তৌহিদ উদ্দিন মোহন। মোহন একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ওই সময় চাকরিরত ছিলেন। ভাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে টেন্ডার, কমিশন আদায়, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন তদ্বির কাজের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন বিগত জোট সরকারের আমলে। ওই সময় মুখে মুখে প্রবাদ চাউর হয়েছিল যে, আনে স্বপন, খায় মোহন। স্বপন হাওয়া ভবন খ্যাত নিজ বাড়িতে এলে এলাকার সরকারি কর্মকর্তাদের সৌজন্য সাক্ষাতের নামে প্রায়ই হাজিরা দিতে হতো ওই বাড়িতে।