মোঃ গিয়াস উদ্দিন মিয়া, গৌরনদী ॥ সারাদেশে যখন সরকার বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিরোধী দল। আর সে মূহুর্তে বরিশালের আগৈলঝাড়া বিএনপি কার্যক্রম স্থগিত থাকায় সাধারন নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনও ঝিমিয়ে পড়েছে। আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে আদালতে পাল্টা পাল্টি মামলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। গ্রুপিং ও সংঘর্ষের আশংকায় কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আগৈলঝাড়া বিএনপির কার্যক্রম স্থগিত করেন। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের লিখিত স্থগিত আদেশ পাওয়ার পর ত্যাগী ও তৃনমুল নেতা কর্মীদের মাঝে চরম হতাশা দেখো দিয়েছে। একাধিক নেতা দল ত্যাগ করারও হুমকি দিয়েছে। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী ত্রি-ধারায় বিভক্ত হয়ে পালন করেছে। এ নিয়ে যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংষর্ষের আশংকা করেছে এলাকাবাসি।
দলীয় ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার বিএনপি নবম জাতীয় সংসদ নির্বচনের পর থেকে ত্রি-ধারায় বিভক্ত হয়ে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে। বরিশাল-১ আসনের চারদলীয় ঐক্যজোট মনোনিত প্রার্থী ছিলেন কেন্দীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান। নির্বাচনের পরে তার সমর্থিত আব্দুল লতিফ মোল্লাকে আহবায়ক করে আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির বিরুদ্ধে অপর কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য ও বরিশাল সদর উত্তর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক আকন কুদ্দুছুর রহমানের সমর্থিত নেতা কর্মীরা বিক্ষোভ ঝাড়ু মিছিলসহ সংবাদ সম্মেলন করেন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ২৭ নভেম্বর গৈলায় আব্দুল লতিফ মোল্লার বাড়িতে কাউন্সিল আনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিল প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ এমপি ও সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক আকন কুদ্দুসুর রহমান। কাউন্সিলারদের ভোটের মাধ্যমে আঃ লতিফ মোল্লা সভাপতি, এস এম আফজাল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক ও মাহবুবুল ইসলামকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সংস্কারপন্থীর ধূয়া তুলে সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনের অনুগত সাবেক উপজেলা বিএনপি সাধারন সম্পাদক আবুল হেসেন লাল্টুকে সহ অনেক নেতাকে স্থান দেওয়া হয়নি ওই কমিটিতে। এরপর থেকে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান সমর্থিত নেতা কর্মীদের সাথে কুদ্দুস ও স্বপন সমর্থিত নেতাকর্মীদের দুরত্বের সৃষ্টি হয়। এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের বিরুদ্ধে কুৎসাসহ নানা ধরনের অপপ্রচার চালাতে থাকে। কেন্দ্র ঘোষিত দলীয় কোন প্রোগ্রাম থাকলে এক গ্রুপ আসলে অন্য গ্রুপ আসেনা আর এ কারণে দীর্ঘদিন দলীয় উল্লেখযোগ্য কোন কর্মসূচিই উপজেলা সদরে পালন হয়নি। দলের তৃণমুল নেতাকর্মীরা একাধিক গ্রুপে বিভক্ত রয়েছেন।
গৈলা ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মো. শামচুল হক মঞ্জু, সম্পাদক বাহাউদ্দিন, রাজিহার ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালামসহ একাধিক নেতা কর্মীরা অভিযোগ করেন, উপজেলা কমিটির দলীয় কার্যক্রমে অংশ গ্রহন না করার প্রেক্ষিতে গত ২২ আগষ্ট বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপি সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ এমপি আগৈলঝাড়া উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে আবুল হোসেন লাল্টুকে আহ্বায়ক ও শাহ মো. বখতিয়ারকে যুগ্ম-আহবায়কসহ ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বিক্ষোভে ফেটে পরে বিলুপ্ত কমিটির নেতারা। বিক্ষুব্ধ বিলুপ্ত কমিটির নেতারা তাদের কমিটি বহাল রেখে নব গঠিত আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে গত ২৫ আগষ্ট সংবাদ সন্মেলন ও মানব বন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এ ঘটনার এক দিন পর ২৭ আগষ্ট বিলুপ্ত কমিটি বহাল রাখতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের কাছে জেলা বিএনপি কর্তৃক অবৈধভাবে আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি কার্যকরি কমিটি বিলুপ্ত করে অসাংগঠনিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের অভিযোগ করে পূর্বের কমিটি পুর্ন বহাল রাখার আবেদন করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে দলের মহাসচিবের কার্যালয় থেকে যুগ্ম মহাসচিব ও দপ্তরের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত ২৮ আগষ্ট জেলা উত্তর বিএনপি সভাপতি ও সম্পাদকে কেন্দ্রী বিএনপি/ সাধারণ/৭৬/২৫/২০১১ স্মারকে ৭ দিনের মধ্যে আগৈলঝাড়া বিএনপি কমিটি বিলুপ্তর কারন লিখিত প্রতিবেদন আকারে পেশ করতে নির্দেশ দেন।
বিএনপির নেতা শাহ আলম জানান, আঃ লতিফ মোল্লা মহাসচিবের উপর আস্থা রাখতে না পেরে বিলুপ্ত কমিটি টিকিয়ে রাখার জন্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি গত ২৯ আগষ্ট বরিশাল সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে জেলা সভাপতি, সম্পাদক, আগৈলঝাড়া উপজেলা আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যার নং-২০৯/১১। গত ৩ অক্টোবর বরিশাল সিনিয়র সহকারী জজ স্বপন সাহার আদালত আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির ওপর জারিকৃত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন। এ নিয়ে উভয় দু’গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং দলীয় কর্মসুচি পালন করতে গেলে সংঘর্ষের আশংকায় গত ৯ অক্টোবর কেন্দ্রীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশ ক্রমে যুগ্ম মহাসচিব ও দপ্তরের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপি/বরিশাল উত্তর ৩৫/২০১১ইং স্বারকে দলের যুগ্ম মহাসচিব শাহজাহানকে তদন্ত করে প্রতিবেদনের নির্দেশ দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনের রিপোর্ট ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সিন্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। দলীয় কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় ত্যাগী ও তৃনমুল নেতা কর্মীদের চরম হতাশার সৃস্টি হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুব আলম বলেন, গত তিনমাস যাবত আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকা ও গ্রুপিংয়ের কারনে দলে প্রতি অনেকে আস্থা হারিয়ে দল ত্যাগের কথা ভাবছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমান’র জন্মবার্ষিকীতে ত্রি-ধারায় বিভক্ত হয়ে পালন করা হয়। এ বিষয়ে আবুল হোসেন লাল্টু ও আঃ লতিফ মোল্লার কাছে জানতে চাইলে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এখন পর্যন্ত দলীয় কার্যক্রম চালানো কোন নিদের্শ পাইনি।