নৌকা বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন এক গ্রামের পাঁচ’শ পরিবার

বংশ পরস্পরায় এ গ্রামের প্রায় পাঁচ’শ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে নৌকা তৈরির ওপর। এ গ্রামের পুরুষেরা বর্ষা মৌসুমের ছয়মাস নৌকা তৈরি ও শুল্কমৌসুমে কাঠমিস্ত্রির পেশায় নিজেদের জড়িয়ে রেখেছেন। এখানকার তৈরি নৌকা বিক্রি হচ্ছে বরিশালসহ পাশ্ববর্তী জেলা ও উপজেলাগুলোতে। নির্ভৃত, খেটে খাওয়া, ঘনবসতি পূর্ণ ও শিক্ষার আলো থেকে পিছিয়ে থাকা গ্রামটির নাম বারপাইকা হলেও বর্তমানে ওই গ্রামকে সবাই নৌকা পল্ল¬ী নামেই চেনেন। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে ওই গ্রামের পাঁচ’শ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা এখনও এ পেশাকে আকঁড়ে ধরে রেখেছেন। এরইমধ্যে নৌকা তৈরির প্রধান উপকরন কাঠের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় অর্থাভাবে এ পল্লীর অধিকাংশ পরিবারই বিভিন্ন এনজিও এবং গ্রাম্যসুদি মহাজনদের কাছ থেকে টাকা এনে নৌকা তৈরি করে যাচ্ছেন। নৌকা পল্ল¬ীটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ পল্লীর শ্রমজীবিরা তাদের পূর্ব পুরুষের এ পেশাকে টিকিয়ে রেখে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারবেন।
কবে কখন কেই বা প্রথম এই গ্রামে নৌকা তৈরির কাজ শুরু করেছেন তাহা সঠিক করে কেহ বলতে না পারলেও বৃটিশ সরকারের আমল থেকেই এখানে নৌকা তৈরির কাজ চলছে বলে এলাকার প্রবীন ব্যক্তিরা দাবি করছেন।
নৌকা তৈরির পেশায় দীর্ঘ ৩০ বছর জড়িয়ে আছেন ওই গ্রামের মৃত কেদার নাথ বাড়ৈর পুত্র অজিত বাড়ৈ (৪৮)। তিনি জানান, তার পিতাও ছিলেন নৌকা তৈরির মিস্ত্রি। অভাবের সংসারে পিতাকে তার কাজে সাহায্য করার জন্য মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি বাবার সাথে নৌকা তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই থেকেই তিনি নৌকা তৈরি ও কাঠমিস্ত্রির পেশায় নিজেকে আঁকরে রেখেছেন। তিনি আরো জানান, পূর্বে সুন্দরী কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করা হতো। বর্তমানে কাঠের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় প্রজাতের রেনট্রি, চাম্বল, তুলা কাঠ দিয়েই নৌকা তৈরি করা হয়। একেকজনের একেকটি নৌকা তৈরি করতে তিনদিন সময় লাগে। বিভিন্ন এলাকার লোকজনের অর্ডারের পাশাপাশি ওই পল্লীর বেশির ভাগ নৌকাই টেকেরহাট, রাজবাড়ি, ফরিদপুর, মাহিলাড়া, মোকসেদপুর, কালকিনি, মাদারীপুরের পাইকাররা এসে ক্রয় করে নিয়ে যায়। এছাড়াও স্থানীয় সাহেবেরহাট, মাহিলারাহাট, পয়সারহাট, হারতাপাড়া হাটে এখানকার তৈরি নৌকা খুচরা মূল্যে বিক্রি করা হয়। প্রত্যেকটি নৌকা বানাতে কাঠসহ খরচ হয় প্রায় ৭ থেকে ৮’শ টাকা। আর প্রত্যেকটি নৌকা পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয় ১২ থেকে ১৩’শ টাকায়।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, “খালি ভোডের সোময় মোগো খোঁজ নেতে ন্যাতারা (বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা) এ পল্লীতে আহে, ভোট হইয়া গ্যালে আর কেউ মোগো খোঁজ ন্যায় না। কতো সরকার আইলো আর গ্যালো মোগো কতা কেউই ভাবলো না। সরকারি ভাবে মোগো সাহায্য সহযোগিতা করা হইলে আর কিস্তির টাহার চিন্তা থাকতো না” ৫ সদস্যর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম অজিত বাড়ৈ। একইভাবে জানালেন ওই গ্রামের মৃত সূর্যকান্ত বাড়ৈর পুত্র সত্যেন বাড়ৈ (৩৫), জগদ্বিশ বাড়ৈ (৪২), অসিম বাড়ৈ (৪৬), গৌরাঙ্গ বাড়ৈ (৪৩)সহ অনেকেই। 
স্থানীয় ইউপি সদস্য যতীশ চন্দ্র সরকার ও মহিলা ইউপি সদস্যা কল্পনা রানী বিশ্বাস জানান, বারপাইকা গ্রামের অধিকাংশ পরিবার দিনমজুর। এরা প্রত্যেকইে নৌকা পল্ল¬ীর শ্রমজীবি। তারা নৌকা পল্লীটিকে টিকিয়ে রাখতে সহজ শর্তে সরকারি ভাবে ঋণ প্রদানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে দাবি করেছেন।