মোঃ বিল্লাল হোসেন, কালকিনি ॥ ‘এবার ফিরে আইয়া আগামীবার মোরে সাথে নিয়া আব্বায় চরমোনাই দরবার শরীফে যাইবো কইয়া কথা দিয়া গেছে। মোর আব্বার নাম শফিকুল ইসলাম, বাড়ি শরীয়তপুরে’ এই কথা বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন আকতার হোসাইন (১৩)। দুপুর সাড়ে ৩টায় সাংবাদিকদের আর কোন প্রশ্নের উত্তর সে দিতে পারেনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তার জ্ঞান ফিরেনি।
শক্রবার সকালে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় শরীয়তপুরের শফিকুল ইসলাম (৪২) চরমোনাই দরবার শরীফে যাওয়ার উদ্দেশ্যে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা আরপি পরিবহনের নয়ন ক্লাসিক (ঢাকা মেট্টো-চ ৮৭১২) নামের বাসটিতে মাদারীপুরের মস্তফাপুর বাসষ্ট্রান্ড থেকে উঠেছিলেন। ৩কিলোমিটার যাওয়ার পর বাসটি পান্তাপাড়া এলাকায় দূর্ঘটনা কবলিত হয়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।
তার পরিবার সুত্রে জানা গেছে, আকতার হোসাইন স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে পড়ে। বাবার সাথে সে বিভিন্ন স্থানে ওয়াজ মাহফিলে যায়। চরমোনাই দরবার শরীফেও তার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আর্থিক অসুবিধার কারণে তাকে নেয়া হযনি। তাই আগামী বছরে নেয়া হবে বলে তাকে শফিকুল ইসলাম প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান।
‘চরমোনাই যাইয়া আব্বায় আর দোয়া করতে পারলো না’
দুপুর আড়াইটা। মাদারীপুর সদর হাসপাতালে লাশ খুজতে স্বজনদের আহাজারি। হাসপাতালের সর্বত্র লোকে-লোকারণ্য। দুর্ঘটনার পর পরই আহতদের আর্তনাদে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। হাসপাতালের মর্গকক্ষের পাশ থেকে এক নারীর আৎচির শোনা যাচ্ছিল অনেক দূর থেকেই। কাছে গেলেই তিনি বলেন, বাবা চরমোনাই হুজুরের বাড়ি গিয়া আমার জন্যে দোয়া করবো কইছিলো। এহন হের জন্যে হগলে দোয়া করেণ। বাবাবে আল্লায় কবুল করুক। মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় তার বাবা আঃ গণি খাঁ (৬০) মারা যান। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে এনেছে।