যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে বিরোধী দলের নেত্রী নিত্য নতুন ষড়যন্ত্র করছে -প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ আজ শনিবার বিকেলে কলাপাড়া মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস ডিগ্রী কলেজ মাঠে উপজেলা আ’লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে দেশে আবার লুটপাটের রাজনীতি শুরু হওয়া। বিরোধী দলের নেত্রী বিডিআর হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের ও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে নিত্য নতুন ষড়যন্ত্র নিয়ে মাঠে Shaikh Hasinaনামছেন। আ’লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি ও জঙ্গীবাদে বিশ্বাস করেনা, তাই আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীর কাছ থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গনতন্ত্র ও সহনশীলতার রাজনীতির দীক্ষা নেয়ার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আ’লীগ সরকার গঠনের পর দেশে সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সংসদের উপ-নির্বাচন সহ মোট ৫২০০ টি নির্বাচনে নিরপেক্ষতার প্রমান রেখেছে। দক্ষিনাঞ্চলকে উন্নত করতে ইতিমধ্যেই ৪৮টি ব্রীজের কাজ সমাপ্ত, ৭১টি ব্রীজের কাজ চলমান, ৪১০ কিলোমিটার রাস্তার নির্মান কাজ সম্পন্ন, ১০৬ কিলোমিটার রাস্তার মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় ৪৫টি ইউপি ভবন কাম সাইক্লোন সেন্টার নির্মান করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস ডিগ্রী কলেজ মাঠের জনসভায় আরো বলেন, পটুয়াখালীর বাউফলে নার্সিং ইনষ্টিটিউট তৈরী, পটুয়াখালীতে মেডিকেল কলেজ স্থাপন সহ রাঙ্গাবালীর সোনারচর, বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলিকে নিয়ে নতুন পর্যটন এলাকা, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প কারখানা স্থাপন, কলাপাড়ায় চারিপাড়া পয়েন্টে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দরের সমীক্ষা সফল হলে সমুদ্রবন্দর স্থাপন, পটুয়াখালীর লেবুখালীতে কুয়েত সরকারের অর্থায়নে ব্রীজ তৈরী ও জেলেদের নিরাপত্তায় উপকূলীয় এলাকার পুলিশ ও কোষ্টগার্ডকে দ্রুত গতি সম্পন্ন জলযান দিবেন।

কলাপাড়া উপজেলা আ’লীগ সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো: মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী লে. কর্নেল অব: ফারুক খান, কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শাহজাহান মিয়া, জাতীয় সংসদের হুইপ আ স ম ফিরোজ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ’লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আ’লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এডভোকেট শওকত হোসেন হিরন, কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র এস এম রাকিবুল আহসান। বিশাল এ সমাবেশে বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলা আ’লীগ নেতৃবৃন্দ সহ যুবলীগ-ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।

কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে দেশের মানুষ দিন বদলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বেগম জিয়ার ১২ই মার্চ কর্মসূচীর সমালোচনা করে বলেন, যাকে সংসদে যেতে দু’তিন জনের সহায়তা নিতে হয় তিনি কিভাবে সরকারকে ল্যাংরা, লুলা করবেন তা বোধগম্য নয়।

কৃষিমন্ত্রী তারেক-কোকোর শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করে বলেন, ওরা হচ্ছে ডা: কদম আলী যার ডিগ্রী নাই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরো বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি সারা দেশে যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তেমনিভাবে দেশে নৈরাজ্যময় পরিস্থিতির সৃষ্টির লক্ষ্যে ৭১’র লুটপাট, ধর্ষন ও হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া বাধাঁগ্রস্থ করতে চায়। দেশে বিডিআর হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসময় বিএনপি জামাতকে সাথে নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া ভুন্ডুল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিএনপি খুনের রাজনীতি করে ক্ষমতায় যেতে চায়।

এর পূর্বে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে দূর্গম চরাঞ্চলের নবগঠিত রাঙ্গাবালী উপজেলা সদরে পৌঁছেন। বাহেরচর মাঠে এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে রাঙ্গাবালী নতুন উপজেলা পরিষদ ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন সহ স্থানীয় সুধীজন ও আ’লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

দুপুর সাড়ে ১২:১৫ মিনিটে তিনি পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ১১২ শয্যা বিশিষ্ট যুব পান্থনিবাস, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের তত্ত্বাবধানে নির্মিত কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতাল, দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে নবগঠিত কুয়াকাটা পৌর সভা ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এসময় তিনি কুয়াকাটা হাসপাতাল চত্বরে একটি গাছের চারা রোপন করেন। এরপর তিনি হেলিকপ্টার যোগে ২:৫৫ মিনিটে কলাপাড়ায় অবতরন করেন।

মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস ডিগ্রী কলেজ মাঠের জনসভাস্থলে কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের আন্ধার মানিক নদীর উপর শেখ কামাল, সোনাতলা নদীর উপর শেখ জামাল এবং শিববাড়িয়া নদীর উপর শেখ রাসেল সেতুর নাম ফলক উম্মোচন সহ কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ শয্যা ভবনের উদ্বোধন করেন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী ও কুয়াকাটায় ছিল উৎসবের আমেজ। প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখা ও তার কথা শোনার জন্য লাখো জনতার সমাগম ঘটে কলাপাড়া মোজাহার উদ্দীন বিশ্বাস ডিগ্রী কলেজ মাঠে। একসময় জনসভাস্থল জনসমুদ্রে পরিনত হয়।

যুদ্ধাপরাধী, ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলাকারীসহ ২৫ ফেব্রুয়ারী বিডিয়ার বিদ্রেহের দ্রুত বিচার করার হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এলেই দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়ন হয় তারই ধারাবাহিকতায় আজ রাঙ্গাবালীতে উপজেলার কার্যক্রম চালু হল। আওয়ামী লীগ এই এলাকার মানুষের পাশে ছিল এবং থাকবে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রাঙ্গাবালী উপজেলা কমপ্লেক্স মাঠের জনসভায় একথা বলেন। শনিবার সকাল ১০.৫০ টার সময় ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার যোগে নব গঠিত রাঙ্গাবালী এসে পৌছান। ১১টায় নব গঠিত উপজেলা কমপ্লেক্সের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এক সময়ের শষ্য ভান্ডার খ্যাত এই দক্ষিন অঞ্চলকে আবারও শষ্য ভান্ডারে রূপান্তর করা হবে। গৃহহীনদের জন্য ব্যারাক হাউস নির্মান করে দেয়া ঘোষনা দেন। আমাদের লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহসান কবির চানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী এমপি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এ্যাড. মো. শাহজাহান মিয়া, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এ্যাড. মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার এমপি। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক চীফ হুইপ ও কেন্দ্রীয় নেতা আবু হাসানাত আব্দুল্লাহ, এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী ও সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. মো: জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাসিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, পটুয়াখালী-৩ আসনের এমপি গোলাম মাওলা রনি প্রমুখ।

Photo : PID – Banglanews24