দিন দিন পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

উম্মে রুমান, বরিশাল ॥ চরগঙ্গামাতি কুয়াকাটা সংলগ্ন একটি সৈকত। বনভূমির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ঘেরা লীলাভূমি। সৈকত ঘেষা বালুকা বেলার একই স্থানে দাড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায়। এ দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিদিনই দেশী বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। চরগঙ্গামাতি পর্যটকদের কাছে এখন অন্যতম ভ্রমনের স্পট হয়ে দাড়িয়েছে।

পটুয়াখালী জেলার সমুদ্র তীরবর্তী কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নের চরগঙ্গামতি এলাকায় এর অবস্থান। দু’হাজার একরেরও বেশি খাস জমি নিয়ে বিশাল সমূদ্র বেলাভুমি। এখানে রয়েছে বনবিভাগের এগারশ একর জমি নিয়ে একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সমূদ্র সৈকত কুয়াকাটা থেকে মাত্র ৫ মিলোমিটার পূর্ব দিকে সমূদ্রের কোল ঘেষেই চরগঙ্গামতি। এছাড়া কলাপাড়া উপজেলা শহর থেকে বালিয়াতলী হয়ে কুয়াকাটা-কলাপাড়া বিকল্প সড়কের একটি মাত্র ফেরী পাড় হয়ে চরগঙ্গামতী যাওয়া যায়।

চরগঙ্গামতি সংলগ্ন মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে শত বছরের পুরানো এশিয়ার সু-উচ্চ বৌদ্ধ বিহার।এর কাছাকাছি রয়েছে রাখাইনদের বৌলতলীপাড়া। এই পড়ায় রয়েছে অলৌকিক একটি ঘটনা। যা আজও এখানকার স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। মুন্সিগঞ্জ এলাকার এক সাপুড়ে সরদার আবদুল আলী গারুলীকে রাতে স্বপ্নে দেখেন যে, বৌলতলী রাখাইন পাড়ার উত্তর পশ্চিম পাশে ৩শ’ ৬০ টি বাশের একটি ঝাড়ের নিচে একটি সাপ রয়েছে। স্বপ্নে বলে দেয় ওই সাপ ধরার আগে দু’টি পাঠা পুঁজো করে নিতে হবে। আবদুল আলী গারুলী ওই স্বপনের কথা আর মানলেন না। সে সাপ ধরতে যায়। সাপটিকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে রেগে গারুলীকে মুখে নিয়ে ৩শ’ ৬০ টি বাঁশের সঙ্গে পেচিয়ে রাখে। সাপটি যে গর্তে ছিল তা আজও কালের স্বাক্ষী হিসাবে রয়েছে।

কলাপাড়া পৌর শহর থেকে চরগঙ্গামতির দুরত্ব প্রায় ২১ কিলোমিটার। একটি মাত্র ফেরি পাড় হয়ে যেতে হয়। অপরদিকে পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার দুরত্ব ও ২১ কিলোমিটার। কলাপাড়া পৌর শহর থেকে এই ২১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে তিনটি ফেরি পাড় হতে হয়।

গঙ্গামতি নয়াভিরাম দৃশ্য দেখলেই সহজেই সৌন্দর্য পিপাসু মানুষদের মন কেড়ে নিতে সক্ষম হবে। সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন পল্ল¬ী, হোটেল-মোটেল ফাষ্ট ফুডের দোকান সহ পর্যটন কেন্দ্রিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

আশার কথা চরগঙ্গামতি ইতিমধ্যেই বিনিয়োককারীদের মন আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে।ভূ- ভাগের একটি বিরাট অংশ ডেপলপারদের আওতায় বিভিন্ন ভাবে ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। ইতোমধ্যেই দেশী বিদেশী পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে গড়ে ওঠতে শুরু করেছে একর পার এক প্রতিষ্ঠান।

ধূরাসার ইউনিয়নের নতুনপাড়া সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের অবসারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মো.আ:করিম আকন জানান, কুয়াকাটায় পিকনিকের জন্য ভাল কোন স্পট না থাকায় পর্যটকরা গঙ্গাতিতে ভিড় করছে। তবে সরকার কুয়াকাটায় দ্রুত উন্নয়ন কাজ করায় চরগঙ্গামতির দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। এছাড়া চরগঙ্গামতির সৈকতের একই স্থানে দাড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করার জন্যই পর্যটকরা এখানে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেন বলে তিনি  জানান ।  

ধূরাসার ইউপি চেয়ারম্যান কে এম খালেকুজ্জামান জানান, গঙ্গামতি একটি সম্ভাবনাময় টুরিস্ট স্পট। এখানে পর্যটকদের উপভোগ করার মত সব কিছু থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যান্ত খারাপ হবার কারনে আগত পর্যটকদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। তিনি আরো জানান, এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।