৪ দলীয় জোটের সভায় সিদ্ধান্ত – ১৬ দল নিয়ে নতুন জোট – ঘোষণা ১২ মার্চ

খোন্দকার কাওছার হোসেন ॥ বিএনপি জামাত নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সম্প্রসারন করা হয়েছে। আজ বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোট নেত্রী খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ৪ দলীয় জোটের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠকে জোট সম্প্রসারন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তবে আপাতত তা ঘোষণা করা হচ্ছেনা। আগামী ১২ মার্চ ঢাকার মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে খালেদা জিয়া সরকার বিরোধী সিরিজ কর্মসূচির সঙ্গে জোট সম্প্রসারন ও জোটের নতুন নামকরণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন বলে বিএনপির একটি বিস্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট, জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট কিংবা জাতীয় ঐক্যজোট, এ তিনটি নামের যেকোনো একটি অথবা নতুন কোন নামে জোটের ঘোষণা আসতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় জোটের নামকরণ চুড়ান্ত হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত ১৬টি রাজনৈতিক দল আপাতত এ জোটে থাকছে। ভবিষতে জোটে পরিধি বাড়াতে আরো কয়েকটি দলের যোগদানের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বৃহত্তর জোট করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।

সম্প্রসারিত জোটে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে থাকছে ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদের (এলডিপি), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিমের কল্যাণ পার্টি, শফিউল আলম প্রধানের জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটি (জাগপা), শেখ শওকত হোসেন নীলুর ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জেবেল রহমান গানির বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), এডভোকেট আলহাজ্ব এ.এন.এম ইউছুফের বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, এবং আলহাজ্ব এম.এ মান্নানের বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট।

ইসিতে নিবন্ধিত দলগুলোর বাইরে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের লেবার পার্টি, খন্দকার গোলাম মূর্তুজার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), শেখ আনোয়ারুল হকের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী), এ এইচ এম কামরুজ্জামানের মুসলিম লীগ, এডভোকেট আবদুল মোবিনের ইসলামিক পার্টি অন্তভূক্ত হয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর  কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, আ.স.ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), ডক্টর কামাল হোসেনের গণফোরাম, চরমোনাইর পীর মওনালা সৈয়দ মোঃ রেজাউল করীমের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি), মোস্তফা আমীর ফয়সালের জাকের পার্টিও ভবিষ্যতে সম্প্রসারিত এ জোটে অন্তভূক্ত হতে পারে বলে আভাষ পাওয়া গেছে।

এছাড়া এরশাদের জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদ, কাজী জাফর আহমদ ও কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ পরবর্তীতে এ জোটে অন্তভূক্ত হতে পারে।
তবে জামাতের সম্পৃক্ততা ও দলীয় আদর্শের কারণে বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রব, ড. কামাল হোসেন আপাতত জোটে আসছেন না। তবে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে তাদের কাউকে কাউকে জোটে দেখাও যেতে পারে।

জানা গেছে, জোট সম্প্রসারণের ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ১২ মার্চ মহাসমাবেশের মঞ্চে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।  এবং সম্প্রসারিত জোটের নতুন নাম ঘোষণা করা হবে।

দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা চারদলীয় জোট সম্প্রসারণের বিষয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ৪ দলীয় জোট ও সমমনাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠকে জোট নেত্রী খালেদা জিয়া জোট সম্প্রসারনের আশ্বাস দিয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ সমাপ্ত করার নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, ক্ষমতাসীন মহাজোটকে মোকাবিলা করার জন্য গত বছর জুলাই মাস থেকে জোট সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়া। পর্যায়ক্রমে বৈঠক করেন সাবেক রাষ্টপতি ও বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ বীর বিক্রম, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে। এর প্রেক্ষিতে তাদেরকে বিএনপির ইফতার পার্টিতে দেখা যায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে একই মঞ্চে।
এছাড়া গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল  (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রবের মতো জাতীয় নেতাদেরও সম্প্রসারিত নতুন জোটে আসার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। তখন জোটে বিএনপি, এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা), জামাতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট ছিল। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনের আগেই চারদল থেকে জাতীয় পার্টি বের হয়ে যায়। জাতীয় পার্টির তখনকার অন্যতম  নেতা নাজিউর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে পার্টির একটি অংশ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি নামে জোটে থেকে যায়। ইসলামী ঐক্যজোট থেকে বের হয়ে যায় তখনকার ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (বর্তমানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ)।

দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় চারদলীয় জোটে বিএনপির নেতৃত্বে বর্তমানে জামাতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), মুফতি আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসের দুই অংশ রয়েছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,  ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ চলছে। জোট সম্প্রারণের ঘোষণা এলে আপনারা জানতে পারবেন। আমরা  আপনাদের জানাবো।
সমমনা দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পাটির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান ভোরের কাগজকে বলেন, জোটে অন্তভূক্ত হওয়ার জন্য আমরা আগ্রহ প্রকাশ করেছি। জোট নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের অন্তভূক্ত করার। বিএনপির নেতৃত্বে আমরা এখনও সমমনা দল হিসেবে আন্দোলন সংগ্রামে রয়েছি।

এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু বলেন, ১২ মার্চ মহাসমাবেশ মঞ্চ থেকে নতুন জোটের ঘোষণা দেবেন খালেদা জিয়া। তাছাড়া মহাসমাবেশ সফল করার জন্য গঠিত উপকমিটিগুলোতে সমমনাদের স্থান দেয়া এ প্রক্রিয়ারই অংশ।