আগৈলঝাড়ায় মেয়াদোর্ত্তীন কীটনাশক বিক্রি – ডিলারকে গণধোলাই – কৃষকদের বিক্ষোভ

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় মেয়াদোর্ত্তীন কীটনাশক প্রয়োগে সর্বশান্ত হয়েছে হাজার-হাজার কৃষকেরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা গতকাল শুক্রবার দুপুরে ডিলারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরন আদায় করে দেয়ার জন্য উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা সার ও কীটনাশক ডিলারকে গণধোলাই দিয়ে তার ব্যবহৃত মটরসাইকেল ভাংচুর করেছে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডিলারকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। ওইদিন বিকেলেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা কৃষি কর্মকর্তা ও সেমকো কোম্পানীর প্রতিনিধি ক্ষতিগ্রস্থ ইরি-বোরো ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাকাল হাটের খুচরা কীটনাশক বিক্রেতা বাবু লাল রাহার কাছ থেকে কৃষকেরা জমিতে ধান বের হওয়ার পর বাদামী গাছ ফরিং (কারেন্ট পোকা) থেকে রেহাই পেতে সেমকো কোম্পানীর সপসিন-৭৫ ক্রয় করে জমিতে প্রয়োগ করেন। সপসিন প্যাকেটের গায়ে ২০১১ সন লেখা থাকলেও উপজেলা সদরের কীটনাশক ডিলার বিধান মন্ডল ২০১১ সনেরস্থলে কলম দিয়ে নিজেই ২০১৪ সহ বানিয়ে বাজারে বিক্রি করছে। ওই কীটনাশক বাকাল হাটের খুচরা বিক্রেতা বাবু লাল রাহার কাছ থেকে বাকাল গ্রামের কৃষক অমল বাড়ৈ, বাবুল মোল্লা, কামাল মিয়া, শিপলু ফকির, আনিচ ফকির, ধীরেন বাড়ৈ, ছলেমান মোল্লা, শুকলাল ফকির, জলিল ফকির, নুরু ফকির, আয়নাল হক ফকির, মিরাজ ফকির, দেলোয়ার মোল্লা, ফারুক ফকির, করম আলী ফকিরসহ ওই এলাকার শত শত কৃষকেরা ক্রয় করেন। তারা বাকাল গ্রামের তিনটি ইরি-বোরো ব্লক, পূর্ব বাকাল গ্রামের ৫টি, নওপাড়া-ডুমুরিয়ার ৪টি, পশ্চিম বাকালের ৫টিসহ ২০টি ব্লকের হাজার-হাজার কৃষকেরা মেয়াদোর্ত্তীন সপসিন প্রয়োগ করায় পুরো ক্ষেতের ধান পুরে যায়।

সুজনকাঠী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক কামাল মোল্লা জানান, বিভিন্ন এনজিও থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে তিনি এক একর জমিতে ইরি-বোরো চাষ করেন। মেয়াদোর্ত্তীন কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে তার ক্ষেতের পুরো ধান পুরে গেছে। কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ব্রজেন্দ্র নাথ সরকার বাকাল হাটে যান। এসময় বিক্ষুদ্ধ কৃষকেরা স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতা বাবু লাল রাহা ও উপজেলা সদরের পাইকারী বিক্রেতা বিধান মন্ডলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন। একপর্যায়ে তাকে (উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে) বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা অবরুদ্ধ করে রাখেন।

অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয় বিক্রেতা বাবু লাল রাহা দোকান তালাবন্ধ করে পালিয়ে যায়। এ সময় কৃষি কর্মকর্তা ব্রজেন্দ্র নাথ সরকার মোবাইল ফোনে উপজেলা সদরের কীটনাশন ডিলার বিধান মন্ডলকে ঘটনাস্থলে আসার জন্য বলেন। তিনি (বিধান) মটরসাইকেলযোগে বাকাল হাটে পৌঁছা মাত্রই বিক্ষুদ্ধ কৃষকেরা বিধানের ওপর হামলা চালিয়ে গণধোলাই দেয়। এসময় তার ব্যবহৃত মটরসাইকেলটি ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। এসময় বিধানের সাথে থাকা লাল তীর কোম্পানীর হাসান মাহামুদও হামলার শিকার হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও বাকাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিপুল দাস ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুমুর্ষ অবস্থায় বিধানকে উদ্ধার করে। তাকে পুলিশ প্রহরায় আগৈলঝাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপঙ্কর বিশ্বাস, জেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ রমেন্দ্রনাথ বাড়ৈ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম ও কীটনাশক প্রস্তুতকারক সেমকো কোম্পানীর প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মনির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা কলে তিনি জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ডিলারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে কৃষকদের শান্ত করা হয়েছে। কীটনাশক প্রস্তুতকারক সেমকো কোম্পানীর প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান মনির জানান, মেয়াদোর্ত্তীন কীটনাশক দুই নাম্বারি করে বিক্রি করার অভিযোগে কোম্পানীর পক্ষ থেকে ডিলার বিধান মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।