স্বপ্নের ঘোরে সর্প দংশন – অতঃপর চিকিৎসার নমুনা !

টরকী বন্দরের চাউল ব্যবসায়ী ও উত্তর বাউরগাতি গ্রামের আক্কেল আলী সিকদার জানান, তার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগমকে গত ৩১ মে রাতে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে বিষধর সাপে দংশন করেছে। স্বপ্নের ঘোরে সর্প দংশন করলে কাউকে না জানালে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়না। এ বিশ্বাসের ওপর ভর করে তার স্ত্রী কাউকে কিছু জানায়নি। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে হোসনেয়ারা বিষের যন্ত্রনায় কাতর হয়ে পরে। তখন তাকে (স্বামীকে) স্বপ্নের ঘোরে সর্প দংশনের কথা জানান। রাত আটটার দিকে কোন ডাক্তারি চিকিৎসা না করে তিনি (আক্কেল আলী) ছুটে যান পাশ্ববর্তী কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামের আলীউজ্জামান ওঝার কাছে। ওঝা ওইরাতে তার বাড়িতে এসে তৈলপরা দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করে ফিরে যান। অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় গত মঙ্গলবার বিকেলে আলীউজ্জামান ওঝা তার ৫ সহযোগী নিয়ে ওইবাড়িতে এসে চিকিৎসা শুরু করেন। তিনি আরো জানান, বিষ নামানোর জন্য ওঝাকে ৮ হাজার টাকায় চুক্তি দেয়া হয়েছে।

আলীউজ্জামান ওঝা জানান, তার পিতা আব্দুল আলী ওঝা ৫০/৬০ বছর এভাবেই সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করে ভালো করেছেন। তার পিতার মৃত্যুর পরে তিনি গত ৭/৮ বছর থেকে এ চিকিৎসা করছেন। তিনি আরো জানান, সাপেকাটা রোগীর পায়ের বৃদ্ধ আঙ্গুলে সাদা সুতার এক পাশ বেঁধে  অপর পাশ কলাগাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়। সুতার মাধ্যমে রোগীর শরীরের বিষ আস্তে আস্তে করে কলাগাছের ভিতরে চলে যায়। আর মন্ত্রর সাহায্যে কলাগাছের ৫টি পাতার (ডেগার) একটা একটা কলাপাতা ভেঙ্গে যাবে। এতে রোগী আস্তে আস্তে সুস্থ্য হয়ে উঠবে। রোগীর অসুস্থতার ওপর ভিত্তি করে ২ থেকে ৫দিন সময় লাগে রোগীকে সুস্থ্য করতে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা সবুজ খান জানান, আধুনিক সভ্যতার যুগে মানদাত্তার আমলের চিকিৎসার বাদ্য যন্ত্রের শব্দে সারারাত গ্রামবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জয়নাল আবেদীন জানান, স্বপ্নের ঘোরে সাপে কাটা রোগীর বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়, এটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছাড়া আর কিছুই নয়। বিষধর সাপে দংশন করলে ইনজেকশন ছাড়া বিকল্প কোন চিকিৎসা নেই। তৈলপরা আর বাদ্য যন্ত্র বাজিয়ে চিকিৎসা দেয়া এটা শ্রেফ ভন্ডামি।