মৃত্যু হয় কার, একজন মানুষের না সন্ত্রাসীর? – ওয়াচডগ

একজন রক্তমাংসের মানুষের পরিচয় যখন সন্ত্রাসী, তার মৃত্যু কাউকে বিশেষ ব্যথিত করেনা, এটাই এখন বাংলাদেশের বাস্তবতা। উপরের ছবিতে লাশ হয়ে শুয়ে আছে ২৪ বছর বয়স্ক আবু সাঈদ। রক্তমাংসের মানুষের পরিচয় ছাপিয়ে তার শেষ পরিচয় ছিল যুবলীগের সন্ত্রাসী হিসাবে। নিজেও ছিল খুনি এবং মৃত্যুকে বরন করতে হয়েছে ঠিক সেভাবে, যেভাবে অন্যদের খুন করতো; প্রথমে গুলি, তারপর নির্বিচার কোপ এবং সবশেষে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্যে রগ কাটা। অনেকটা কুরবানি ঈদের গরু জবাইয়ের মত। একজন খুনি অন্য এক খুনির হাতে খুন হয়েছে, এ যেন সহজ সমীকরণের সফল সমাপ্তি।

আবু সাঈদ নামের যে যুবলীগ কর্মী-কাম-সন্ত্রাসীকে মেরে বর্জ্য পদার্থের মত রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হল তাকেও কোন না কোন মা ১০ মাস পেটে ধরেছিল, কাটিয়েছিল অসংখ্য নিদ্রাহীন রাত। অন্য যে কোন শিশুর মতই মা-বাবা চেষ্টা করেছিল সন্তানকে দুধে ভাতে বড় করতে এবং স্বপ্ন দেখেছিল বাঙ্গালী মা-বাবার আজীবন লালিত স্বপ্ন। কিন্তু সে স্বপ্ন আলোর মুখে দেখেনি কারণ সন্তান বড় হয়ে এমন কিছু বাস্তবতার মুখুমুখি হয়েছিল যার সৃষ্টিতে তার কোন হাত ছিলনা। এখানে খেয়ে পরে বেচে থাকতে রাজনীতি করতে হয়, রাজনীতি করতে হলে চুরি করতে হয়, আর চুরির জীবন নিরাপদ করতে দু একটা খুন করাও এখানে জরুরী। একজন আবু সাঈদের মৃত্যুতে আমরা উল্লাস করতে পারি, কিন্তু মানুষ আবু সাঈদ সন্ত্রাসী আবু সাঈদে রূপান্তরিত হওয়ার কলকাঠি যতদিন ঘুরতে থাকবে এ উল্লাস হবে স্রেফ আত্মপ্রতারণা।

বাংলাদেশে যাদের বাস তাদের কথা হয়ত মানা যায়, কারণ এখানে ডাল-ভাতের লড়াই খুবই তীব্র। কিন্তু আমরা যারা প্রবাসী এবং একটা সূস্থ সমাজে বাস করার দাবি করি তাদের মুখে কথাগুলো শুনলে অবাক হই। দৈনিক আমার দেশ আর মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে তুলকালাম চলছে চারদিকে, এবং এর সবটা জুড়ে থাকছে দলীয় রাজনীতি। ২১শে টিভি বন্ধ করেছিল তাই চ্যানেল ওয়ান বৈধ করা জায়েজ, আগের সরকার নাম পরিবর্তন করেছিল তাই এ সরকারের নাম পরিবর্তন জরুরী, ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব ছেলেমানুষি যুক্তি দিয়ে বৈধ করা হচ্ছে ক্রসফায়ারের মত পাথর যুগীয় বর্বরতা। এই আবু সাঈদকে যারা মেরেছে তাদের মারাটাও অতি প্রয়োজনীয়, রাজনৈতিক মেরুকরনের বলি হয়ে আমরা জোর গলায় তর্ক করছি এ নিয়ে। ধিক এ দাসত্বকে, ধিক বিবেকের এই দীনতাকে!

বর্তমান সরকারের কর্মকান্ড এবং এর পোষ্যদের সমালোচনা করায় অনেকেই অভিযুক্ত করছেন সস্তা জনপ্রিয়তার অর্জনের জন্যেই নাকি আমি এসব লিখছি। ব্লগে জনপ্রিয়তা বলতে কি বুঝায় তার কোন ধারণা আমার নেই, এমন একটা টার্ম এখানে ব্যবহার করা যুক্তিসংগত কিনা তার সাথেও দ্বিমত করি। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে আবু সাঈদের পরিচয় একজন মানুষ হিসাবে, সন্ত্রাসী হিসাবে নয়। যে সমাজ ব্যবস্থা একজন মানুষকে অমানুষে পরিনত করে সে সমাজ নিয়েই আমার লেখালেখি। এখানে দল ও নেত্রী পূজার কোন স্থান নেই। আমার কাছে নেত্রীর চাইতে দল বড় এবং দলের চাইতে দেশ। এই সহজ সত্য নিয়ে যারা তর্ক করেন তাদের অনুরোধ করব উপরের ছবিটার দিকে ভাল করে তাকাতে। একজন তরুণী বসে আছে লাশটার সামনে। হতে পারে সে নিহতের স্ত্রী, কন্যা অথবা বোন। নিজের সন্তান অথবা বোনকে বসিয়ে দিন ঐ মেয়েটির জায়গায় এবং ভেবে দেখুন এ কোন পৃথিবীতে বাস করছি আমরা। এ নিয়ে কাউকে না কাউকে কথা বলতে হবে।

সূত্র: যায়যায়দিন


Writer : AmiBangladeshi – WatchDog.AmarBlog.com