প্রেমের কারনে ঝড়ে গেলো দু’নারীর জীবন

মাত্র চারদিনের ব্যবধানে বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় প্রেম করে বিয়ে করে অবশেষে যৌতুকলোভী স্বামী ও তার পরিবারদের অমানুষিক নির্যাতনে অকালেই ঝড়ে গেছে দু’নারীর জীবন প্রদিপ। সূত্রমতে, মাত্র দু’বছর পূর্বে ভালবেসে পরিবারের অজান্তে প্রেমিকেরা হাত ধরে পিত্রালয় ছেড়েছিলো কিশোরী সুমা হালদার (১৪)। বিয়ের ছয় মাস যেতে না যেতেই সুমার স্বামী সুশান্ত রায় ও তার মা কনক রায় কিশোরী গৃহবধূ সুমার পিত্রালয় থেকে দুই লক্ষ টাকা যৌতুক আনার জন্য সুমার ওপর চাপ প্রয়োগ করে। এতে সুমা অসম্মতি জানালে তার ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়ক। ঘটনাটি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত রাহুতপাড়া গ্রামের।

সুমার পিতা গণেশ হালদার অভিযোগ করেন, নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় গত ১২ জুন গভীর রাতে সুমার স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে সুমার বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে তারা সুমাকে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করে। পরবর্তীতে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নিহত সুমার মুখে বিষঢেলে আত্মহত্যার কথা রটিয়ে দেয়া হয়। গত ১৩ জুন ভোরে মৃত অবস্থায় সুমাকে হাসপাতালে নিয়ে এসে তার শ্বশুড় পরিবারের লোকজনে হাসপাতালেই লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। অভিযোগে আরো জানা গেছে, আগৈলঝাড়া উপজেলার রাহুতপাড়া গ্রামের সন্তোষ রায়ের পুত্র সুশান্ত রায় দু’বছর পূর্বে প্রেমের টানে পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়া উপজেলার রামশীল গ্রামের গণেশ হালদারের কন্যা সুমা হালদারকে বিয়ে করে। বিবাহের পর থেকেই যৌতুকলোভী স্বামী সুশান্ত রায়, শ্বাশুড়ি কনক রায় ও তাদের পরিবারের লোকজনে দু’লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবিতে সুমার ওপর নির্যাতন করে আসছিলো। আগৈলঝাড়া হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ সুবল কৃষ্ণ কুন্ডু জানান, মৃত অবস্থায় সুমাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এ সংবাদ থানা পুলিশকে জানানোর খবর পেয়ে নিহত গৃহবধু সুমার সাথে আসা তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনে হাসপাতালে লাশ ফেলে রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে যৌতুকলোভী সুশান্ত রায়ের বসত ঘরে তালা ঝুলিয়ে পরিবারের লোকজন আত্মগোপন করেছে।

আগৈলঝাড়া থানার এস.আই আলাউদ্দিন জানান, লাশের সুরাতাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে (যার নং-১৭/১৩-৬-২০১২)। নিহত কিশোরী গৃহবধূ সুমা হালদারের পিতা গণেশ হালদার জানান, এ ঘটনায় তিনি হত্যা মামলা দায়ের করবেন। তবে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল উঠেপরে লেগেছে বলেও গণেশ হালদার অভিযোগ করেন। নিহত সুমার হত্যার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সভা: গৃহবধূ সুমা হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে স্থানীয়দের উদ্যোগে গত ১৪ জুন বিকেলে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের রাহুতপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সুমা হত্যার বিচারের দাবিতে স্থানীয় সাবেক শিক্ষক নীলকান্ত হালদারের বাড়িতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় শিক্ষক গনেশ হালদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন শিমসন রায় পটল, জিতেন বালা, শুশীল বালা, অনিল হালদার, দীপালি রানী রায়, বিনয় বালা, কমলা রানী দাস, অমৃত হালদার, সুর্যকান্ত রায় ও নিহত গৃহবধূ সুমার বাবা গনেশ হালদার প্রমুখ। বক্তারা নিহত গৃহবধূ সুমা হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত স্বামী, শশুর-শাশুরীসহ অন্যান্যদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার পুর্বক দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি জানান।

গৃহবধূ নিপা অধিকারী: যৌতুকের দাবিতে পাষন্ড স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা গত ৯ জুন অমানুষিক নির্যাতন করে নিপা অধিকারী (১৯) নামের এক গৃহবধূকে হত্যা করেছে। গভীর রাতে নিহত গৃহবধূ নিপার লাশ তার বাবার বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যৌতুক লোভী স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনে গাঁ-ঢাকা দেয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ গত ১০ জুন ভোরে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত গৃহবধূ নিপার শাশুড়ি রিতা সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের দোনারকান্দি গ্রামে। স্থানীয়, পুলিশ ও নিহতর বাবার পরিবার সুত্রে জানা গেছে, প্রেমের টানে উপজেলার দোনারকান্দি গ্রামের দিনমজুর নির্মল অধিকারীর কন্যা নিপা অধিকারী (১৯) প্রতিবেশী শ্রী কৃষ্ণ সরকারে পুত্র দিপঙ্কর সরকারকে পরিবারের অমতে গত বছর মে মাসে পালিয়ে বিয়ে করে। নিপার কাকা সহদেব অধিকারী জানান, বিয়ের পর থেকেই দিপঙ্কর সরকার ও তার পরিবারের সদস্যরা ব্যবসার কথা বলে নিপাকে তার পিত্রালয় থেকে এক লক্ষ টাকা যৌতুক আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এতে নিপা অপরাগতা প্রকাশ করায় দিপঙ্কর ও তার পরিবারের লোকজন প্রায়ই নিপাকে শারীরিক নির্যাতন করে আসছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৯ জুন রাত সাড়ে ৮ টার দিকে দিপঙ্করের সাথে নিপার বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে ঘরের মধ্যে আটক করে দিপঙ্কর ও তার পরিবারের লোকজনে নিপাকে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করে। বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য ওইদিন গভীর রাতে দিপঙ্কর ও তার পরিবারের লোকজনে নিপার বাবার বাড়ির পাশে নিহত নিপার লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধু নিপার কাকা পরিমল অধিকারী বাদি হয়ে নিহতের স্বামী দিপঙ্কর সরকার, শশুর শ্রীকৃষ্ণ সরকার, শাশুড়ি রিতা সরকার ও নিকটআত্মীয় দেবাশীষ সরকার, বিল্পব সরকার ও সুভাষ সরকারকে আসামি করে গৌরনদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ গত ১০ জুন সকালে আত্মগোপনে থাকা নিহত নিপার শাশুড়ি রিতা সরকারকে গ্রেফতার করেছে। গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, লাশ ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে।

বিক্ষোভ মিছিল: প্রেম করে বিয়ে করার পর যৌতুকের বলি কিশোরী গৃহবধু নিপা রানীর লাশ ময়না তদন্ত শেষে গত ১০ জুন গভীর রাতে নিহতের বাবার বাড়িতে সৎকার করা হয়। ওইদিন বিকেলে নিপার খুনিদের গ্রেফতার পূর্বক ফাঁসির দাবিতে এলাকার শত শত নারী-পুরুষেরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।