চল্লিশের ইতিহাসে পূর্নাঙ্গ কমিটির রুপ পায়নি যুবলীগ – তুষের আগুনে জ্বলছে ঝালকাঠি জেলা যুবলীগ

আহমেদ আবু জাফর, ঝালকাঠি ॥ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটি ঘোষনার পর  পদ পাওয়া আর না পাওয়ার ক্ষোভে তুষের আগুনে জ্বলছে ঝালকাঠি জেলা যুবলীগ। ১৯৭২ সালে যুবলীগ গঠনের পর এ পর্যন্ত ঝালকাঠি যুবলীগে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে কোন প্রকার পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। এ যাবৎকাল যতগুলো কমিটি গঠন করা হয়েছে তা সবক’টিই আহবায়ক কমিটি দিয়েই চলছে। যুবলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আহবায়ক কমিটি ৩ মাসের জন্য গঠিত হলেও তা চলে আসছে যুগের পর যুগ। কেন্দ্র থেকে যখন যাকে আহবায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় তখন তারা পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় না গিয়ে আহবায়কসহ যুগ্ম-আহবায়কের পদটি আকঁড়ে ধরে সংগঠনটি কুক্ষিগত করে রাখার অপচেষ্টা চালিয়ে যায় তারা। খেয়াল খুশিমত চালাতে থাকে সংগঠনের কার্যক্রম। তাতে সংগঠন হয়ে পড়ে স্থবির। তার মাঝে তারা লেজুঁরবৃত্তি ও তোষামদি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে মূলদল আওয়ামী লীগের সাথে।

এর ধারাবাহিকতায় গত এক যুগ পর ১৭ জুন পূর্বের আহবায়ক কমিটি ভেঙ্গে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি লিয়াকত আলী খানকে আহবায়ক ও দু’জনকে যুগ্ম-আহবায়ক করে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করে জেলায় পাঠিয়ে দেয়। কমিটি জেলায় পৌঁছানোর পর ১৮ জুন বিকেলে স্থানীয় অতিথি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা, উপজেলা ও পৌর কমিটি নেতৃবৃন্দ নিয়ে পরিচিতি সভার আয়োজন করে।

এর আগে ঐদিন দুপুরে গঠনতন্ত বিরোধী যুবলীগের কমিটি গঠন হওয়ায় শহরে ব্যাপক তান্ডব চালায় পদবঞ্চিত যুবলীগ নেতা-কর্মীরা। উভয় গ্র“প শহরে মোটর সাইকেল মহড়া চালাতে থাকে। এসময় যুবলীগের বর্তমান আহবায়ক লিয়াকত আলী খানকে কলেজ রোডে প্রকাশ্যে মারধর করে লাঞ্ছিত ও শহর যুবলীগ সাধারন সম্পাদক মাহবুবুর রহমানকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পিটিয়ে গুরুত্বর জখম করে। বর্তমানে তিনি বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে বর্তমান কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক ও পৌর কাউন্সিলর রেজাউল করিম জাকির জানান। উভয় গ্র“পের মাঝে উত্তেজনা চলমান অবস্থায় বর্তমান আহবায়ক কমিটি নবনির্বাচিত কমিটির পরিচিতি সভা লিয়াকত আলী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত করে।

এদিকে বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে যুগ্ম-আহবায়ক জাকির হোসেন এর নেতৃত্বে এক সংবাদ সম্মেলনের  মাধ্যমে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কমিটি বাতিলের জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছে পদ বঞ্চিতরা। এ ব্যাপারে সাবেক যুবলীগ ও জেলা আ’লীগ নেতা আবু সাঈদ খান জানান, কোন ক্রমেই ঝালকাঠি যুবলীগে এদের স্থান দেয়া  হবেনা। সম্মেলন ছাড়া বারবার গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করে ঢাকায় বসে যুবলীগের কমিটি গঠন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মানবেনা। অবিলম্বে তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, যারা ১/১১ সৃষ্টি করে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিল, তারাই এখানকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের যুবলীগ গঠনের পর ঝালকাঠিতে জাহাঙ্গীর হোসেন খলিফাকে আহবায়ক করে প্রথম কমিটি গঠন করা হয়। ৮-১০ বছর আহবায়ক কমিটি চলার পর পদটিতে আসীন হয়েছিলেন বর্তমান জেলা আ’লীগ সহ-সভাপতি আলমগীর হোসেন দুলাল। ১৯৯৪ সালে তয় দফায় পদটি গ্রহন করেন বর্তমান জেলা আ’লীগ প্রচার সম্পাদক ও অতিরিক্ত পিপি এ্যাড. এম আলম খান কামাল। ৪র্থ দফায় পদটিতে আসেন খসরু নোমান। যুবলীগের রাজনীতিতে কালো হাতের প্রভাবে যুবলীগ কলুষিত হওয়ায় স্বেচ্ছায় তিনি রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান। আহবায়ক চলে যাবার পর পদটির অলিখিত দায়িত্ব গ্রহন করেন যুগ্ম-আহবায়ক জাকির হোসেন ও লিয়াকত আলী খান। সিংহভাগ সময় রাজনীতির ভাগ্যাকাশে যখন দূর্যোগের ঘনঘটা তখন যুগ্ম-আহবায়ক জাকির হোসেন পালিয়ে ঢাকায় অবস্থান নেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী রাজনীতিতে নেমে আসে কালোছায়া। বিভিন্ন মামলা-হামলা উপেক্ষা করে যারা সংগঠনকে গতিশীল ও বেগবান করার কাজ করেছে তাদের অধিকাংশ নেতা-কমীদের বর্তমান আহবায়ক কমিটিতে ঠাঁই পায়নি।