প্রেমের প্রস্তাবে ব্যর্থ হয়ে স্কুল ছাত্রীকে অপহরন – অপহরনের অপবাদ সইতে না পেরে স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা – মামলা দায়ের

খোকন আহম্মেদ হীরা ॥ স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে যৌণ হয়রানী, অব্যাহত উত্যক্ত ও অপহরনের অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেঁছে নিয়েছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর সেতু মন্ডলমেধাবী ছাত্রী সেতু মন্ডল (১৪)। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্কুল ছাত্রী সেতুর লাশ তার নিজবাড়িতে নিয়ে আসার পর সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। সেতুর স্বজনদের আহাজারিতে ওই এলাকার আকাশ-বাতাস ভাড়ি হয়ে ওঠে। এসময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি বখাটেদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবিকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।

জানা গেছে, গত ৮ সেপ্টেম্বর বখাটেরা সেতুকে অপহরন করে নিয়ে একটি বাড়িতে আটক করে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে স্থানীয়দের সহায়তায় ওইদিন সন্ধ্যায় অপহৃতা সেতুকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় লোকলজ্জা ও ঘৃনায় গত মঙ্গলবার পরিবারের সবার অজান্তে সেতু গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। পরিবারের লোকজনে মুর্মুর্ষ অবস্থায় সেতুকে উদ্ধার করে প্রথমে গৌরনদী ও পরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার বিকেলে সেতু মৃত্যুর কাছে পরাস্থ হয়। এ ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর বাবা অমূল্য মন্ডল বাদি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বখাটে ইমনকে প্রধান আসামি করে গৌরনদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

স্কুল ছাত্রী সেতুর পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার ভীমেরপাড় গ্রামের দিনমজুর অমূল্য মন্ডলের কন্যা সেতু মন্ডলকে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন ধরনের যৌণ হয়রানি করে আসছিলো মাহিলাড়া গ্রামের মৃত ইয়ার উদ্দিন হাওলাদারের বখাটে পুত্র ইমন হাওলাদার (১৮)। স্কুল ছাত্রী সেতু প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় স্কুলে আসা যাওয়ার পথে প্রতিনিয়ত ইমন ও তার সহযোগী পবন, মাসুম, নাঈম, তারেক তাকে উত্যক্ত করে আসছিল। স্কুল ছাত্রীর বড় ভাই সরকারি বরিশাল কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বিপ্লব মন্ডল (২২) জানান, কিছু দিন পূর্বে সেতু বিষয়টি তাকে জানালে তারা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইমনের অভিভাবকের কাছে এ ঘটনায় বিচার দিয়েছেন। এতে ইমন ও তার সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর সকালে তারা দুই ভাই-বোন মাহিলাড়া যাওয়ার পথে ভীমেরপাড় ব্রিজের সামনে পৌঁছলে বখাটে ইমন তার ৫/৬ জন সহযোগীকে নিয়ে তাদের পথরোধ করে। এসময় সেতুকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে অপহরনসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। সেতুর মা রেনু মন্ডল (৪০) বিলাপ করে বলেন, গত ৮ সেপ্টেম্বর সেতু প্রাইভেট শেষে বাড়ি ফেরার পথে (সকাল ১১টার দিকে) মাহিলাড়া কলেজের দক্ষিন পাশে ব্রিজের সন্নিকটে পৌঁছলে ইমন ও তার সহযোগী নঈম, মাসুম, পবনসহ ৭/৮ জনে সেতুকে অপহরন করে মটরসাইকেলযোগে বাঘার গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে সেতুর ওপর বখাটেরা পাশ্ববিক নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে গ্রামবাসীদের সহায়তার ওইদিন সন্ধ্যায় অপহৃতা স্কুল ছাত্রী সেতু মন্ডলকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় অভিমানি সেতু লোক লজ্জায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরিবারের লোকজনে মুর্মুর্ষ অবস্থায় সেতুকে উদ্ধার করে প্রথমে গৌরনদী ও আশংকাজনক অবস্থায় তাৎক্ষনিক বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বিকেল তিনটায় সেতু মারা যায়। বরিশাল কোতয়ালী থানা পুলিশ সেতুর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে সেতুর লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আবুল কালাম জানান, এ ঘটনায় স্কুল ছাত্রীর বাবা অমূল্য মন্ডল বাদি আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বখাটে ইমনকে প্রধান আসামি করে গৌরনদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।