স্বামীর অন্ধকার জগতের তথ্য ফাঁস করায় জীবন দিতে হয়েছে কলেজ ছাত্রীকে

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ পাষন্ড স্বামী খোরশেদুল আলম মিলনের অন্ধকার জগতের তথ্য ফাঁস করে দেয়ায় স্বামী ও তার ভাড়াটিয়া লোকজনের নির্যাতনে অকালেই প্রাণ দিতে হয়েছে কলেজ ছাত্রী স্বামীর অন্ধকার জগতের তথ্য ফাঁস করার জীবন দিতে হয়েছে কলেজ ছাত্রীকেগৃহবধূ কেয়া মনিকে (২৪)। নিহত গৃহবধুর লাশ মঙ্গলবার বরিশালের গৌরনদীতে পৌঁছলে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহত গৃহবধু উপজেলার মাহিলাড়া গ্রামের জবেদ আলী সরদারের কন্যা ও মাহিলাড়া ডিগ্রী কলেজের বিএ শেষবর্ষের ছাত্রী। এ ঘটনায় ঘাতক স্বামী, শশুড় ও দু’ভাড়াটিয়া সন্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

স্থানীয়, পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া গ্রামের জবেদ আলী সরদারের কন্যা কেয়া মনিকে গত ৭ বছর পূর্বে একই উপজেলার চরগাধাতলী গ্রামের আব্দুস ছালাম গাজীর পুত্র খোরশেদুল আলম মিলনের সাথে সামাজিক ভাবে বিয়ে দেয়া হয়। নিহত কেয়া মনির ভাই রিয়াদ হোসেন বলেন, বিয়ের পর আমার বোনকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন মিলন। দাম্পত্য জীবনে নানা অজুহাতে আমার বোনকে প্রায়ই শারীরিক ও মানুষিক নিযার্তন করা হতো। এরমধ্যে তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করেভ যার নাম তাওহীদ গাজী (৪)। তিনি আরো বলেন, আমার দুলাভাই মাসের মধ্যে ১০ থেকে ১২ দিন রাতে বাসায় ফিরতো না। মাঝে মধ্যে মাতাল অবস্থায় গভীর রাতে বাসায় ফিরে আমার বোনকে অমানুষিক নির্যাতন করতো। সে কালোবাজারী (অবৈধ) ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। গত ২০ আগষ্ট বাসায় এ নিয়ে কেয়া মনির সাথে মিলনের তুমুল ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে কেয়ামনিকে বেদম মারধর করা হয়েছে। গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। ওইসময় কেয়ামনি মৃত্যুর আশঙ্কা করে পল্লবী থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করা হয়েছে। এ ছাড়াও মিলন প্রায়ই শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করে আসছিলো। আমার বোন শুধু তার ছেলের ভবিষৎতের কথা ভেবে এসব নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করেছে।

নিহতর খালু কবির হোসেন জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তার ভাগ্নি তাকে মোবাইল ফোনে মিলনের অস্ত্র, মাদক ব্যবসা ও পরকীয়ার বিভিন্ন অমকর্মের কথা তাকে জানায়। পরবর্তীতে সে মিলনকে মোবাইল ফোনে অন্ধকার জগত থেকে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিনই (গত ১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৮ টার দিকে মিলন ও তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিত ভাবে কেয়া মনিকে হত্যা করে। হত্যার পর কিলার আব্দুর রহিম মিরাজী ওরফে রনক ও আরমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ ফেলে পালানোর সময় টহল পুলিশের সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই রিয়াদ হোসেন বাদি হয়ে নিহতের স্বামী খোরশেদুল আলম মিলন, শশুর আব্দুস ছালাম গাজী, কিলার আব্দুর রহিম মিরাজী ওরফে রনক ও আরমানকে আসামি করে ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) এবাদ আলী বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্ঠা চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।