আগৈলঝাড়ায় ঈদের দিনেও ভোকেশনাল শাখার ক্লাশ

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ “ঈদের দিন সকালে পাড়ার বন্ধুরা সবাই একত্রে ঈদের নামাজ আদায় করতে গেলেও আমাদের ভাগ্যে সে সুযোগ জোটেনি। ওইদিনও বাধ্যতামূলক ভাবে আমাদের ক্লাশে উপস্থিত থাকতে হয়েছে। স্কুলে উপস্থিত না হলে স্কুল থেকে বের করে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়”। নামপ্রকাশ না করার শর্তে কথাগুলো বলছিলো বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্থ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ভোকেশনাল এসএসসি আগৈলঝাড়ায় ঈদের দিনেও ভোকেশনাল শাখার ক্লাশশাখার একাধিক ছাত্ররা। একই শাখার ছাত্রীরা বলেন, ঈদের দিন সকাল বেলা পাড়ার বান্ধবীদের সাথে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে পারিনি। কারন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক নিত্যানন্দ-এর নির্দেশে ঈদের দিন সকাল আটটার মধ্যে বাধ্যতামূলক ভাবে আমাদের ক্লাশে উপস্থিত থাকতে হয়েছে। নতুবা আমাদের স্কুল থেকে বের করে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়েছিলো।

পবিত্র ঈদুল আযহার দিন সারা বিশ্বের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি, বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষনা করা হলেও শুধু এখানে সকল প্রকার নিয়মনিতীকে বৃদ্ধাঅঙ্গুলি দেখিয়ে ঘটেছে ভিন্নতর ঘটনা। এটা যেন একপ্রকার রাষ্ট্রদ্রোহের সামিল বলেও মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা। অপরদিকে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়ে ঈদের দিন সকালে বাধ্যতামূলক ভাবে স্কুলের ক্লাশ নেয়ায় শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবক ও স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এস.কে ফাউন্ডেশন এন্ড ইমপালশিস’ দি নেদারল্যান্ডের আর্থিক সহযোগীতায় আগৈলঝাড়া উপজেলার বেসরকারি সংস্থা আলোশিখা রাজিহার-এর বাস্তবায়নে রাজিহার গ্রামে গত ২০১০ সনের ৬ ফেব্র“য়ারি কারিগরি এসএসসি ভোকেশনাল শাখার ক্লাশ শুরু করা হয়। ইতোমধ্যে স্কুলটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি লাভ করে (যার কোড নং ৪২০৮৯)। অস্টম শ্রেনী পাশ শিক্ষার্থীদের ভর্তির মাধ্যমে নবম ও দশম শ্রেনীর এ স্কুলটিতে বর্তমানে ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে চলতি ব্যাচে ৫১জন পরীক্ষার্থী রয়েছে। এখানে তিনটি ট্রেডে ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক ও ড্রেশ মেকিনে শিক্ষার্থীরা অধ্যায়নরত রয়েছে। সূত্রে আরো জানা গেছে, ওই স্কুলের প্রথম ব্যাচের ছয়জন পাশ করা ছাত্রকে স্কুল কর্তৃপক্ষের মালয়েশিয়ার পাঠানোর কথাছিলো। সেমতে ওইসব শিক্ষার্থীদের পাসপোর্ট করিয়ে জমা নেয়া হলেও আজো ওইসব শিক্ষার্থীদের মালয়েশিয়ার না পাঠিয়ে নানা তালবাহানা করা হচ্ছে।

রাজিহার এসএসসি ভোকেশনাল স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল (সহকারি প্রিন্সিপাল) অতুল চন্দ্র বালা ঈদের দিন সকালে ক্লাশ নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ওইদিন আমাদের সাহায্য সংস্থা নেদারল্যান্ডের এস.কে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জেভভার উইল জিন ও তার মিসেস জেভ ভার উইল জিন স্কুল পরিদর্শনে আসায় তাদের দেখানোর জন্য শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেয়া হয়েছে। আর এটা স্কুল পরিচালনা কমিটির নির্দেশেই করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আগৈলঝাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আবুল হোসেন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে কোন কারনেই হোক না কেন, ঈদের দিনেও যে ক্লাশ নেয়া হয় এমন একটি ঘটনা আমি জীবনে প্রথমে শুনেছি। তিনি আরো বলেন, আমি ঈদের ছুটিতে রয়েছি, ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদান করেই এ বিষয়টির তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আলোশিখা রাজিহারের পরিচালক হচ্ছেন স্থানীয় মৃদুল হালদার। একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান করা হয়েছে তার (মৃদুলের) স্ত্রী মার্থা হালদারকে। তাদের অধীনে রয়েছে ৫টি প্রতিষ্ঠান। ওইসব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ১৮৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, শিক্ষা-দিক্ষায় পিছিয়ে পড়া ও দারিদ্র অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ৩/৪ মাস পর পর বেতন ও বছরে একবার বোনাস দেয়া হয়। যেকোন ছুটির দিনে সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষনের কথা বলে ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি থেকে বঞ্চিতসহ নিয়মানুযায়ী সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত অফিস করার পরিবর্তে রাত ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত অফিসে কাজ করানো হয়। বিনিময়ে ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অতিরিক্ত কোন বেতন বা বোনাস দেয়া হয়না। কর্মের অভাবে শত অনিয়মের মধ্যেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওইসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হচ্ছে। উল্লেখিত সব অভিযোগের ব্যাপারে আলোশিখা রাজিহারের পরিচালক মৃদুল হালদারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন (০১৭১১-৫৪৮৩৩৯) নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।