স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, টাঙ্গাইলের উপ-নির্বাচনে আ’লীগের ভড়াডুবি প্রমান করেছে যে নৌকার তলা ফুটো হয়ে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলবাসীর প্রাণের দাবি পদ্মা সেতুর টাকা বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থা আর কোনদিনই আ’লীগ সরকারকে দেবেনা। কারন আ’লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী, এমপি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দুর্নীতি, লুটপাট ও চুরির তথ্য এখন বিশ্ববাসীর মুখে মুখে। দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে আমরা মাওয়া-কাওড়াকান্দি দিয়ে একটি ও আরিচা-দৌলদিয়া থেকে আরেকটি মোট দুটি পদ্মা সেতু নির্মান করবো। আজ সোমবার বিকেলে বরিশালের বেলস্পার্ক ময়দানে ১৮ দলীয় জোটের আয়োজনে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষনে তিনি উল্লেখিত কথাগুলো বলেছেন।
বরিশালের জনসভাটি ১৮দলীয় জোটের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিনত হয়েছিলো। খালেদা জিয়া তার ভাষনে আরো বলেছেন, এ সরকারের খায়েশ তারা যতোদিন বেঁচে থাকবে ততদিনই অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় থাকবে। তাই তারা সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতায় থাকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করেছে। জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে সরকারকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার যদি তা না করে তা হলে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, আ’লীগ সরকারের অধীনে দেশে কোন নির্বাচন মেনে নেয়া হবে না। নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।
আ’লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে বিশ্বচোর আখ্যাদিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, সকল ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান বিশ্বচোর সরকারকে হটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বিরোধী দলের নেতা বলেন, যে সরকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারে না সে সরকারের হাতে কি করে দেশ নিরাপদ থাকবে। তিনি বলেন, সরকারের প্রতিটি মন্ত্রী ও এমপি এমনকি আ’লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মী জনগণের টাকা আত্মসাত করে মোটাতাজা হয়েছে। জনগণ যখন তাদের ধরবে তখন তারা পালানোর স্থানও পাবেনা। তিনি বলেন, এ সরকার দেশের মানুষকে ভাত-কাপড় ও নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তারা শুধু চুরি, লুটপাট ও আমাদের আমলে করা বিভিন্ন স্থাপনার নাম পরিবর্তনে ব্যস্ত রয়েছে। ফলে দেশকে তারা অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থার অবসানে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি, সকল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেভাবে দেশকে আবার এগিয়ে নিতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আন্দোলনের যে কর্মসূচী দেয়া হবে সবাইকে তাতে শরিক হতে হবে। খালেদা জিয়া আরো বলেন, বিএনপি সমর্থিক ১৮ দলীয় জোটের গণজোয়ার দেখে বর্তমান বিশ্বচোর সরকারের মাথা খারাব হয়ে গেছে। তাই প্রধানমন্ত্রী এখন শরিয়াহ আইনের বিচারের কথা বলছে। যে আইনের কোন বৈধতা এ দেশে নেই। তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন হলে এ সরকার পালানোরও জায়গা পাবেনা। তাই সরকার প্রধান এখন আবোল তাবোল বলে বেড়াচ্ছে।
বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া আরো বলেছেন, কেবল মাত্র আওয়ামীলীগের দুর্নীতির জন্যই পদ্মাসেতু হয়নি। বিএনপি সরকার যেমন যমুনা সেতুসহ বড় বড় সেতু নির্মানের কাজ শুরু করেছে তেমনি পূর্ণরায় আমরা ক্ষমতায় গেলে দু’টি পদ্মাসেতু নির্মান করবো। তিনি বলেন, ‘আমরা সেতুসহ সব ধরনের উন্নয়ন কাজ সম্পূর্ণ করি, আর আওয়ামীলীগ কেবল সেগুলোর নামফলক তুলে দিয়ে তাদের কৃতিত্ব দাবি করে। আমি ক্ষমতায় আসার আগে যা যা করবো বলেছিলাম সবই করেছি। এবার বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে সব করবো।
বরিশাল নগরীর বেলস পার্ক মাঠে ১৮ দলীয় জোটের আয়োজেন অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি।
খালেদা জিয়া আরো বলেছেন, এই সরকার অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলো। অনেক কিছু করবে বলেছিলো। কিছুই করেনি। যা করেছে শুধু নিজেদের জন্য। বরিশালেও কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ সরকার চার বছরে বরিশালের জন্য কিছুই করেনি।
খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘আওয়ামীলীগের লক্ষ্য লুটপাট করা। এই সরকারের বিরুদ্ধে এখন বিদেশীরাও দুর্নীতির তদন্ত করছেন। চোরদের দিয়ে দেশের উন্নয়ন হয় না। এই সরকারকে দিয়েও কোনো উন্নয়ন হবে না। খালেদা জিয়া আরো বলেন, আজ প্রশাসনের পাশাপাশি বিচার বিভাগেও দলীয়করণ করা হয়েছে। বিচার বিভাগে দলীয় লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেজন্যই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের ধরা হয় না। আর আমাদের নেতা-কর্মীদের কিছু না হতেই মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়।
আ’লীগকে দুর্নীতিবাজ ও বিশ্বচোরের সরকার আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সারা দেশে এখন একই সুর উঠেছে-চোর চোর মহাচোর-আ’লীগ হলো বিশ্বচোর। এই সরকারের মূলনীতি হচ্ছে, দুর্নীতি, লুটপাট, গুম আর খুন। তাই তাদের হাতে শুধু রক্ত আর লুটপাট করা সম্পদ, বলেও মন্তব্য করেন বিরোধী দলীয় নেতা।
খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার হচ্ছে মিথ্যাবাদী, জুলুম ও অত্যাচারী সরকার। সরকার মিথ্যচার করে আদালতের দোহাই দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। অথচ আদালতও আরো দু’মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার কথা বলেছিলো। এখন আবার তাদের দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এমনকি বর্তমান এমপিরাও পদত্যাগ না করেই নির্বাচন করতে চাচ্ছে। আ’লীগের অধীনে এ দেশে কোনো নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, এই মহাচোর, খুনী, সন্ত্রাসীদের সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের কোনো উন্নয়ন হবে না, দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই একমাত্র সমাধান হচ্ছে, এ সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল এবং তার অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটকে ক্ষমতায় আনা।
বিএনপিকে মুক্তিযোদ্ধাদের দল ও মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তি বলে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ১৮ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে উন্নয়ন, সন্ত্রাস দুর, জঙ্গী নির্মূলসহ সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে একটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়া হবে। খালেদা জিয়া বলেন, ১৮ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে কুয়াকাটা ও কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। একইসাথে বরিশাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি কলেজ নির্মাণসহ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন ও নদী ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চীফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক, জনসভার সমন্ময়ক আব্দুল্লাহ আল নোমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম, এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাবেক মন্ত্রী মীর্জা আব্বাস, ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অবঃ) অলি আহমেদ, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির চেয়ারম্যান শওকত হোসেন নীলু, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আব্দুল লতিফ নেজামী, কেন্দ্রীয় নেতা হাফিজ ইব্রাহিম, কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম রাজন, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিসের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসাহাক, বাংলাদেশ ন্যাপের সভাপতি জেবেল রহমান গনি, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা, ইসলামিক পার্টির সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল মবিন, পিপলস পার্টির সভাপতি গরিবে নেওয়াজ, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামাল, সাধারণ সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ-এমপি, সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০১০ সনের ১২ মে বরিশাল সফর করেছিলেন।
পুরো নগরী যেন একটি মাঠ ॥ অবশেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের দাবিটি সত্যি হয়েছে। ১৮ দলীয় জোটের জনসভা উপলক্ষ্যে বৃহত্তর বরিশালের পুরোটাই একটি মাঠে পরিণত হয়েছে। খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনতে বেলস পার্ক ও তার পাশ্ববর্তী এলাকায় ঠাঁই না পেয়ে অনেকেই নিরাস হয়ে ফিরে গেছেন। আবার অনেকেই টিভি সেটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে সরাসরি প্রচারকৃত চ্যানেল থেকে খালেদা জিয়ার ভাষন শুনেছেন। গ
সোমবারের সমাবেশকে ঘিরে রবিবার দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজে ১৮ দলের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নোমান বলেছিলেন, জনসভা উপলক্ষ্যে বৃহত্তর বরিশালের পুরোটাই একটি মাঠে পরিণত হবে। বিকেল তিনটার জনসভা উপলক্ষ্যে সোমবার দুপুর বারোটার পর থেকেই বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে রিজার্ভ গাড়ি ভর্তি করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বরিশালে আসতে থাকেন। দুপুর একটার পর থেকেই বরিশাল নগরী পরিণত হয় বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের শহরে। দলীয় প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিশাল বিশাল ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন, পোষ্টার ও বাদ্য যন্ত্র নিয়ে শোডাউনের মাধ্যমে আগামী সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সমর্থকেরা মাতিয়ে তোলেন পুরো নগরী। ওইসব শোডাউনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বর্তমান চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারের আধিক্যও ছিলো চোখে পড়ার মতো। শোডাউনের নেতা-কর্মীদের হাতে ছিলো বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ।
নিরাপত্তার চাঁদরে বরিশাল ॥ খালেদা জিয়ার সোমবারের জনসভাকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার থেকেই কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছিলো স্থানীয় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। র্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য আইন শৃংখলার বাহিনীর সদস্যদের কড়া নিরাপত্তার বেজায় খুশি বিএনপির হাই কমান্ড। বরিশালের বেলস পার্ক ও সার্কিট হাউজে খালেদা জিয়ার কাছাকাছি থাকার সবাইকে নিরাপত্তার পাস দিয়েছে পুলিশ। সাংবাদিকরাও এর বাইরে নন। নাম ও ছবি সংবলিত এই পাস আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেন। বরিশালের পুলিশ কমিশনার মোঃ শামসুদ্দিন বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার জনসভা নির্বিঘ্নে করতে সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে। জনসভাস্থল, সার্কিট হাউজ এবং রুটে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো জোরদার নিরাপত্তা। নিরাপত্তা পাস দেয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশের উর্ধ্বতন পর্যায় থেকে নির্দেশ পেয়ে এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছবি ও নাম সংবলিত এ পাস অনাহুত প্রবেশ ও অপ্রীতিকর ঘটনা অনেক কমিয়ে দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, জনসভা স্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলো ছয় শতাধিক পুলিশ ফোর্স। এছাড়া সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সারাক্ষণ তাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করেছেন। জনসভা নির্বিঘ্নে করতে সরকারি দলের পক্ষ থেকে সাহায্যের আশ্বাসের বিষয়টিকে তিনি ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন। পুলিশের উল্লেখিত বক্তব্যের সত্যতা স্বীকার করে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সারোয়ার-এমপি ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরুল হাসান শাহীন বলেন, চেয়ারপার্সনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) বরিশালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
কোটি টাকার তোরণ ॥ খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত কোটি টাকা ব্যয়ে সাত শতাধিক সু-সজ্জিত তোরণ নির্মাণ করা হয়েছিলো। বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছেন, তোরণ নির্মাণেই ব্যয় করা হয়েছে কোটি টাকা। তোরনগুলোর গায়ে শোভা পাচ্ছিলো দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত পোস্টার। স্ব-স্ব এলাকার বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছবিসম্বলিত পোস্টার ছিলো উল্লেখযোগ্য।
শুধু তোরণই নয়, নগরীর কয়েকটি রাস্তায় চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা করা হয়েছিলো। রাস্তা সংলগ্ন গাছ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়িতেও আলোকসজ্জা করা হয়েছিলো। জনসভাস্থলের আশপাশে ১৭০টি মাইক বসানো হয়েছিলো। জেলা বিএনপির সভাপতি আহসান হাবীব কামাল উল্লেখিত তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন।
নির্বাচনী আমেজ ॥ এখন পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর ফয়সালা না হলেও তিন দফা তারিখ পরিবর্তনের পর বিরোধীদলীয় নেতার সোমবারের বরিশালের সফরকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে। বেগম জিয়ার বক্তব্য শোনার জন্য সোমবার দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন রং বেরং-এর ফেস্টুন, পোষ্টার ও ব্যানার নিয়ে বিশাল বিশাল শো-ডাউনসহ হাজার-হাজার দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা তাদের পছন্দের মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতার ব্যানারে জড়ো হতে থাকেন বেলস্পার্ক ময়দানে। নেতা-কর্মীদের শ্লোগানেই ছিলো নির্বাচনের আমেজ।
অপরদিকে মঞ্চে কিংবা দলে এখনও ঠাঁই না মেললেও জনসভায় আসতে ভুল করেননি বরিশাল-১ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক এবং সংস্কারপন্থির ধুয়া তুলে দুরে সরিয়ে রাখা এম. জহির উদ্দিন স্বপনের ব্যানারের হাজার-হাজার নেতা-কর্মীরা। তারা জহির উদ্দিন স্বপনের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে মিছিলসহ জনসভাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন।
অভ্যন্তরীন কোন্দল চরমে ॥ এক সময়ের বিএনপি’র ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে দলটিতে গত সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু হওয়া অভ্যন্তরীন কোন্দলের এখনও অবসান ঘটাতে পারেননি দলের নীতি নির্ধারকেরা। বরং দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভ্যন্তরিন দ্বন্ধ আর কোন্দল ও সংস্কারপন্থির ধুয়া তোলার কারনেই পুরো বিভাগ জুড়ে দলটির হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তি নিয়ে এ দ্বন্ধ আরো চরম আকার ধারন করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন। সকল দ্বন্ধ নিরসনের জন্য সংস্কারপন্থির ধুয়া তুলে দূরে সরিয়ে রাখা সাবেক এমপিদের দলে ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ১৮ দলীয় জোটের তৃনমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। নতুবা আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের নবম সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে ফিরে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
অপরদিকে বিএনপির অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারনে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানাতে গৌরনদীর টরকী বাসষ্ট্যান্ডে নির্মিত কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমানের অস্থায়ী কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক পুলিশ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
খালেদার নিরাপত্তায় আ’লীগ ॥ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বরিশালে আগমন উপলক্ষ্যে তাকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে মহাসড়কের গুরুতপূর্ণ স্থানে ব্যাপক আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। একই সাথে দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে প্রশাসনের সাথে গত চারদিন ধরে নিরাপত্তা পাহারা বসিয়েছিলেন আ’লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দেশে এই প্রথমবারের মতো বিরোধী দলীয় নেত্রীকে নিরাপত্তা দিতে সরকার দলীয় নেতাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্ব মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। আ’লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নির্দেশে যুব ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়া ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে এ পাহারা বসিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক আনিসুর রহমান আনিস।