জোট ক্যাডারদের নির্যাতনে নিহত ছাত্রলীগ নেতা বুলেট হত্যার বিচার হয়নি ১১ বছরেও

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ “মরার আগে মোর পুতের হত্যাকারীগো বিচার দেইখা যাইতে পারলে, মুই মইরাও শান্তি পাইতাম। এই দ্যাশে কি মোর পুতের হত্যাকারীগো বিচার কোনদিনই হইবো না” আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট ক্যাডারদের নির্মম নির্যাতনে নিহত বরিশালের সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বুলেটের বৃদ্ধা মা মঞ্জুআরা সুলতানা (৫৭)। দীর্ঘ ১১ বছরেও বুলেট হত্যার বিচার হয়নি। তাই এখানো কান্না থামেনি নিহত ছাত্রলীগ নেতার পরিবারের।

আজ সোমবার ছিলো বুলেটের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে ওইদিন সকালে উপজেলা, পৌর ও সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের উদ্যোগে শোক র‌্যালী, স্মরন সভা ও দোয়া-মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সূত্রমতে, গৌরনদী পৌর এলাকার হরিসেনা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক রহমতউল্লাহ খলিফার বড়পুত্র সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বুলেট। বিগত বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের প্রথমাধ্যে (২০০১ সনের ২০ নবেম্বর) বিএনপি-জামায়াতের স্থানীয় কতিপয় চিহ্নিত ক্যাডাররা গৌরনদী বন্দরের খালপাড়ে বসে নির্মম নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগ নেতা বুলেটের ওপর। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে গৌরনদী হাসপাতালে ও আশংকাজনক অবস্থায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয়দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ওই বছরের ২৬ নবেম্বর সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন ছাত্রলীগ নেতা বুলেট। তৎকালীন সময়ে এ ঘটনায় নিহত ছাত্রলীগ নেতা বুলেটের পিতা রহমতউল্লাহ খলিফা বাদি হয়ে যুবদল ও ছাত্রদলের ১৪ জনকে আসামি করে গৌরনদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। সে সময়ে স্থানীয় সরকার দলের চাঁপের মুখে মামলার এস.আই সরদার ইউনুস আলী ঢিমেতালে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। ফলে কিছুদিন যেতে না যেতেই মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে নিহত ছাত্রলীগ নেতার পিতা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইসমার্শাল (অবঃ) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর কাছে পুত্র হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে লিখিত আবেদন করেও ব্যর্থ হন।

নিহত ছাত্রলীগ নেতার পিতা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক রহমতউল্লাহ খলিফা (৬৮) কান্নাজড়িত কন্ঠে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, দেশের প্রচলিত আইনে হত্যাকারীরা যদি বিনা বিচারে পার পেয়ে যায়, তাহলে দেশে আইন আদালতের প্রয়োজন আছে কি? নাকি ক্ষমতার কাছে দেশের সাধারন মানুষগুলো এখনো জিম্মি অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষনা করেছেন, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলের ধামাচাপা পরা সকল হত্যা মামলা পুনঃরুজ্জীবিত করা হবে। তার এ কথাশুনে পুত্র হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে তিনি (রহমত উল্লাহ খলিফা) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে আবেদনও করেছেন। তার পরেও পুত্র হত্যাকারীদের বিচার হবে কিনা এ নিয়ে তিনি ও তার পরিবার হতাশায় রয়েছেন।

সোমবার সকালে শহীদ সফিকুল ইসলাম বুলেটের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার কবরে পুস্পঅর্পন, শোক র‌্যালী, দলীয় কার্যালয়ে স্মরণ সভা ও দোয়া-মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মাহবুব আলমের সভাপতিত্বে স্মরন সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন গৌরনদী পৌরসভার মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান হারিছ। প্রধান আলোচক ছিলেন কাছেমাবাদ দরবার শরীফের গদিনসীন পীর আ.ফ.ম অহিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা এইচ.এম জয়নাল আবেদীন, হাফেজ মোঃ নুরুল হক, ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ মৃধা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান আনিচ। বক্তব্য রাখেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ নয়ন শরীফ, প্রচার সম্পাদক স্বপন হাওলাদার, সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক জুবায়েরুল ইসলাম সান্টু ভূঁইয়া, সহসভাপতি লুৎফর রহমান দিপ, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম মিয়া, সাধারন সম্পাদক ও শহীদ বুলেটের সহদর মাসুম বিল্ল¬াহ মানিক, ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির, সঞ্জিব সাহা, মামুন মিয়া, সুমন মাহমুদ, শাখাওয়াত হোসেন সুজন, তুষার মিয়া, রাজিব মিয়া, মিলন তালুকদার, এস.এ শাওন প্রমুখ।

জোট ক্যাডারদের নির্যাতনে নিহত ছাত্রলীগ নেতা বুলেট হত্যার বিচার হয়নি ১১ বছরেও