গৌরনদীতে পল্লী বিদ্যুতের অবৈধ পাওয়ার ফেক্টর চার্জ আদায় ॥ গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ গৌরনদী জোনাল অফিসে ২০১২ সনের ডিসেম্বর মাসের বিলের সাথে পাওয়ার ফেক্টর চার্জ নামে একটি আইটেম লিখে জোনাল কার্যালয়ের অধীনে থাকা ২৮ হাজার ৩৮৫ জন গ্রাহকের কাছে থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। পাওয়ার ফেক্টর চার্জ নামে ওই টাকা আদায় করায় সাধারন গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। পাওয়ার ফেক্টর চার্জ হিসেবে নেয়া অর্থ গ্রাহকদের ফেরত দেয়া না হলে তারা আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষনা করারও হুমকি দিয়েছেন।

ক্ষুব্ধ গ্রাহক, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকতাসহ সংশ্লি¬ষ্টদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ গৌরনদী জোনাল অফিসের অধীনে সংযুক্তি গ্রাহক সংখ্যা ৩২ হাজার ৪১৮ জন। মাসিক বিল পরিশোধকারী ২৮ হাজার ৩ ৮৫ জন গ্রাহক রয়েছে। এরমধ্যে আবাসিক গ্রাহক ২৪ হাজার ৯০৮ জন, বানিজ্যিক গ্রাহক ২ হাজার ৬৯১ জন, জিপি (শিল্প) গ্রাহক ২৫৫ জন, ষ্ট্রিড লাইট গ্রাহক ১৯ জন, ইরিগেশন গ্রাহক ৫১ জন, মসজিদ মন্দির ৫৪৮ জন গ্রাহক রয়েছে।  বরিশাল পল্ল¬ী বিদ্যুৎ সমিত-২ গৌরনদী জোনাল অফিসের অধীনে থাকা গ্রাহক আগৈলঝাড়া উপজেলার ছয়গ্রাম গ্রামের সাইদুল হক, রাজিহার গ্রামের সিরাজুল হক, গৌরনদী উপজেলার উত্তর বিজয়পুর গ্রামের মেরাজ হোসেন, রফিকুল ইসলাম, আনিচুর রহমানসহ শত শত গ্রাহকেরা জানান, ২০১৩ সনের জানুয়ারি মাসের শুরুতেই তারা ডিসেম্বর ২০১২ মাসের বিল হাতে পেয়ে যথারীতি বিল পরিশোধ করেন।  একাধিক সচেতন ব্যক্তির কাছে পাওয়ার ফেক্টর চার্জ ধার্য্য করার বিষয়টি ধরা পরার পর বিষয়টি ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পরে। এতে গ্রাহকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সাধারন গ্রাহকেরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গৌরনদী জোনাল অফিসে ভীড় করে বিষয়টি জানতে চান কিন্তু অফিসের কর্মকর্তারা তাদের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

ভূক্তভোগী গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গ্রাহকদের জিম্মি করে সম্পূর্ন অবৈধভাবে পাওয়ার ফেক্টর চার্জ হিসেবে তাদের কাছ থেকে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গৌরনদী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মোঃ মেরাজ হোসেন খান (হিসাব নং ৭৪০০) জানান, তার ডিসেম্বর মাসের বিল হয়েছে চার শত দুই টাকা তার বিলে পাওয়ার ফেক্টর চার্জ ধরা হয়েছে ২৮৪ টাকা। গৌরনদী জননী মার্কেটের গ্রাহক মোঃ রফিকুল ইসলাম (হিসাব নং ১৯০৩) অভিযোগ করেন, ডিসেম্বর মাসে ৭৬২ টাকার বিলে ১২৭ টাকা পাওয়ার ফেক্টর চার্জ ধার্য্য করা হয়েছে। দক্ষিণ বিজয়পুর গ্রামের মহসিন (হিসাব নং ১৯১৫) অভিযোগ করেন, ডিসেম্বর মাসে ৪৪৮ টাকার বিলে ৮৭ টাকা পাওয়ার ফেক্টর চার্জ নেয়া হয়। উত্তর বিজয়পুর গ্রামের কামরুল ইসলাম জানান, তার কাছ থেকে ডিসেম্বর মাসের বিলে ১৭২টাকা পাওয়ার ফেক্ট চার্জ নেয়া হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক মাওলানা আব্দুল বাতেন নোমান অভিযোগ করেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিভিন্ন সময় নানা অজুহাতে জরিমানা ধার্য্য করে থাকে, তাদের ধার্য্যকৃত টাকা পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। যে কারনে গ্রাহকেরা পাওয়ার ফেক্টর চার্জ পরিশোধ করেছেন। গৌরনদী পৌর নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গ্রাহকদের জিম্মি করে বিভিন্ন সময় হয়রানীসহ অবৈধ আইটেম লিখে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়ার ফেক্টর চার্জ হিসেবে নেয়া টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেয়া না হলে গ্রাহকদের সমাবেশ ডেকে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে বলেও তিনি হুমকি প্রদর্শন করেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ গৌরনদী জোনাল অফিসের ডিজিএম আবু বক্কর শিবলী বলেন, ডিসেম্বর মাসের বিলে পাওয়ার ফেক্টর চার্জ হিসেবে যে অর্থ নেয়া হয়েছে তা সেপ্টেম্বর মাসের এরিয়া বিল। বিলে কেন এরিয়া বিল লেখা হয়নি এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি একটি ভুল। তবে ৬০ লক্ষ নয় এটি খুবই কম। পাওয়ার ফেক্টর চার্জ কত টাকা আদায় করা হয়েছে উত্তরে তিনি বলেন, এখনো হিসাব করা হয়নি।