বরিশালের বাজার উত্তপ্ত – আবারো দাম বেড়েছে চাল-ডাল-তেল-আদার

এম.মিরাজ হোসাইন, বরিশাল ॥ আবারো বরিশালের বাজারে দাম বেড়েছে চাল-ডাল-তেল- আদা সহ  সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের। লাগামহীণ এ মুল্য বৃদ্ধিতে সীমাহীন দূর্ভোগে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ। লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রব্য মুল্য বৃদ্ধির যুক্তিসংগত কোন কারনও নেই বিক্রেতাদের কাছে। ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের দাবি তারা যেমন ভাবে ক্রয় করেন তেমন ভাবেই তা বিক্রি করেন। অনেক ব্যবসায়ীর মতে মিল মালিকের কারসাজিতে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। অন্যান্য পন্যের আমদানি কারক ও বড় ধরনের ব্যবসায়ীদের মজুরদারিতে দাম বাড়ছে বলে দাবি তাদের। অব্যাহত মুল্য বৃদ্ধিতে ভোগান্তির শিকার সাধারন মানুষের অভিযোগ নিয়ন্ত্রনের দায়িত্বে থাকা কর্তা ব্যক্তিদের যে কোন মুল্যে পন্য ক্রয়ে সমস্যা না থাকায় তাদের কোন মাথা নেই।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বরিশালে  প্রায় সকল পন্যের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি সর্বনিম্ন ৫ টাকা। কাচামরিচ ও আদার ঝাঝে কাছে ভিড়তে পারছেঁন না ক্রেতারা। হঠাৎ করেই ৫০ টাকার আদা ১২০ টাকা এবং ৬০ টাকার কাচা মরিচ ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর আগের ২ দিন কাচা মরিচের কেজি ছিলো ১৫০ টাকা। একই ভাবে হঠাৎ করেই দাম বাড়ানো হয়েছে সয়াবিন তেলের। সব ধরনের তেল লিটার প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। ১২০ টাকার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১২৮ থেকে ১৩০ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানীর বোতলজাত তেলের মুল্যও আকাশ ছোয়া। গায়ে লেখা মূল্য হতে অতিরিক্ত মুল্যে বিক্রি করা হচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন। বাজারে রুপচাদা কোম্পানীর ৫ লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৬৭০ টাকা, তীর ৬৬০ টাকা ও পুস্টি ৬৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তেলের মত দাম বেড়েছে চাল ও ডালের। সপ্তাহের ব্যবধানে মুগ ডালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা। গতকাল বাজারে মুগডালের দাম ছিলো ১১৫ টাকা। আমদানিকৃত  ৫৮ টাকার মুশুরী ডাল এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ৯৫ থেকে ১০০ টাকার মুশুরী ডাল (বিদেশী) বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। দাম বেড়েছে প্রায় সব ধরনের চালের। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি বৃদ্ধির হার ২ থেকে ৪ টাকা। গতকাল ২৫ টাকার কাজলা ২৮ টাকা, ২৮ টাকার মোটা আমন ৩০ টাকা, ৩২ থেকে ৩৪ টাকার ২৮ বালাম বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা দরে। এ ছাড়া ৩৮ থেকে ৪২ টাকার মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৭ টাকা দরে। দাম বেড়েছে পোলাউ চালেরও। ৮২  থেকে ৮৫ পোলাউ চালের মুল্য এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকা।

পেয়াজ-রসুন সহ সকল শীতকালীণ শাক সবজিরও মুল্যও চড়া। তবে দাম কমেছে আলুর। গতকাল নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় ২৮ থেকে ৩০ টাকার পেয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায়।  ৩৫ থেকে ৪০ টাকার রসুনের দাম এখন ৬০ টাকা। ৩০ টাকা কেজির আলু ২০ টাকা,  শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা,  ফুলকপি ২০, বাধাকপি ১৬, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা, ছিম ২০, গাজর ২০, করল¬া ৫০, মিষ্টি কুমড়া প্রতিকেজি ৩০ টাকা, পেপে ২০ ও শালগম ১৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের দামে পিলে চমকে ওঠে সাধারন ক্রেতাদের। গতকাল বরিশালের বাজারে তরকারী খাওয়ার চিংড়ি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। মাঝারী সাইজের ২০ টি কই মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, ছোট কোরাল ৪০০ টাকা কেজি হলেও বড় সাইজের কোরালের দাম ছিলো ৭০০ টাকা কেজি, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের শোল মাছ বিক্রি হয় ৪০০ টাকা, এক কেজি ওজনের শোল মাছের দাম ছিলো ৭০০ টাকা। বড় সাইজের রুই ও কাতল বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি। আকার ভেদে কম দামের মাছ নাইলোটিকা বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। মাঝারী সাইজের ১০ টি মাগুর মাছের দাম ১২০০ টাকা। বাজারে ইলিশের আমদানি নাই বললেই চলে। ফলে হাতে গোনা ২/৪টি ইলিশ বিক্রি হয় আকাশ ছোয়া দামে। অন্যান্য মাছের দাম ছিলো চড়া। বাজারে ডিমের কুড়ি ২০০ টাকা এবং গরুর মাংস ২৮০ টাকা ও খাসির মুল্য ৪০০ টাকা। বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়লেও যুক্তিসংগত ব্যখ্যা না থাকায় প্রায়ই ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে বাকবিতন্ডা।

তেলের মুল্য বৃদ্ধি নিয়ে বাজার রোডের তারক নাথ ভান্ডারের পাইকারী বিক্রেতা প্রবীর সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মুল্য বৃদ্ধি না পেলেও এক শ্রেনীর মিল মালিকদের সৃষ্ট সংকটে তেলের দাম বাড়ছে। একই বাজারের চাল ব্যবসায়ী নাসির হারুন সিকদার বলেন চালের বাজার এখন অনেক চড়া। যে মুল্যে চাল কিনছেন তার থেকে ২/১ টাকা লাভ ধরেই তারা বিক্রি করছেন। তিনি আরো বলেন, এক শ্রেনীর মিল মালিক কৃতিম সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধি করছেন। এ ক্ষেত্রে খুচরা বিক্রেতাদের কিছুই করার নেই।

কাউনিয়া এলাকার নাসির জমদ্দার নামের এক ক্রেতা বলেন দ্রব্য মুল্য বৃদ্ধিতে সাধারন মানুষ এখন দিশেহারা। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগের আর শেষ নেই। একাধিক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়ে এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা দামে চাল কিনতে হলেও মাথা ব্যথা নেই সরকারের।