ফ্রিল্যান্সিং রোডম্যাপ

কম্পিউটারে মোটামুটি কাজ জানে এমন লোকের অভাব নেই। আধুনিক যুগে এসে অনেকেই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে চায়। বিশেষ করে যারা সৃজনশীল কাজগুলোর সাথে যুক্ত, যেমন- গ্রাফিক্স ডিজাইন কিংবা ওয়েব ডিজাইন। কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার চেয়ে তারা ফ্রিল্যান্স কাজ করাটাই বেশি পছন্দ করে। কারণ তারা মনে করে, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করলে একজন চাকুরীজীবী থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা যায়। বিশেষ করে নিদিষ্ট কর্মঘন্টার ব্যাপারগুলো। একজন চাকুরিজীবীর মতো তাকে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থেকে কাজ করতে হয় না। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সার তার কাজের মূল্য নিজেই নির্ধারণ করে, কিন্তু কোনো অফিসে বেতনভুক্ত চাকরি করলে তা করা যায় না। নির্দিষ্ট বেতন দিয়েই তার কাজের মূল্যায়ন করা হয়।

এগুলো সাধারণ কারণ। যা প্রত্যেককেই বুঝতে পারে। তাছাড়াও আরও কিছু বিষয় রয়েছে যা এই লেখায় উঠে আসবে। আপনার যদি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা না থাকে তবে এই ধারাবাহিক লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন। তাতে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর সম্ভাবনাগুলো জানতে পারবেন। সাথে এ সেক্টরের আশংকাগুলো সম্পর্কে ধারণা দিতেও কার্পণ্য করবো না। তাতে বুঝতে পারবেন, আমাদের ধারণা আর বাস্তবের মধ্যে তফাৎ কতটুকু !!

আশা করি প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে কিভাবে গড়ে তুলবেন, ৩ পর্বের এই লেখা থেকে ধারণা পাবেন। শুরু করার পূর্বে আপনাকে কি ভাবতে হবে বা করতে হবে ১ম পর্বে তা আলোচনা করা হবে।

তো চলুন-

লক্ষ্য স্থির করুন:

এ ব্যাপারে কিছু বলার আগে একটি ব্যাপার স্পষ্ট বলে রাখি। আপনি যখন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন, তখন আপনাকে কোনো না কোনো বিষয়ে দক্ষতা থাকতে হবে। যদি দক্ষতা না থাকে তবে না অর্জন করে নিতে হবে। দক্ষতা অর্জন করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং নয়, বরং অর্জনকৃত দক্ষতার যথার্থ প্রয়োগের জন্যই ফিল্যান্সিং।

আপনি স্থির করুন ঠিক কোন কাজটি আপনি করবেন। আপনি কি করবেন সেটা সম্পর্কে আপনার নিজের যেন কোনো সন্দেহ না থাকে। যেমন ধরুন আপনি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। তো আপনার সৃজনশীলতা আছে। আপনি বেশ কিছু কাজ পারেন, যেমন- বিজ্ঞাপন ডিজাইন, লগো  ইত্যাদি ডিজাইন করতে পারেন। এখন আপনাকে স্থির করতে হবে ঠিক কোন কাজটি নিয়ে আপনি সামনে বাড়তে চান। কিংবা আপনি কোন কাজটিতে সবচেয়ে বেশি দক্ষ।

 

ফোকাস টু দ্যা পযেন্ট:

আপনার জানা কাজগুলোর মধ্যে যেটিতে আপনি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গড়তে চান সেটির দিকে মনোযোগী হোন। অর্থাৎ ওইটা কাজটার উপরই সম্পূর্ণ ফোকাস করুন। এবং ওই কাজটি সম্পূর্ণভাবে করার জন্য আনুষাঙ্গিক কি কি কাজ জানা লাগে, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে দেখবেন আপনার কাজের সাথে সম্পর্কিত টুকটাক আরও কিছু জানতে হচ্ছে। ধরুন আপনি ওয়েব ডিজাইনিং পারেন। এর সাথে আপনাকে লগো ডিজাইন, কিংবা ওয়ার্ডপ্রেস থিম ডেভেলপমেন্ট জানতে হবে পারে। এমনকি টুকটাক SEO জানারও দরকার পড়তে পারে। যা আপনার ডিজাইনের সাথে সম্পর্কিত।

নিজের ভেতরের যোগ্যতাকে আবিষ্কার করুন :

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যখন আপনি কাজ করবেন, দেখতে পাবেন প্রতি বছরেই নতুন নতুন বিষয় আপনার কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছে। সাথে প্রতিযোগীতাও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তাই আপনাকে সময়মতো কাজের সাথে আপডেট থাকতে হবে। সেটা যেকোন সেক্টরের কাজই হোক না কেন।

প্রতিযোগীতায় জেতার জন্য আপনাকে অবশ্যই নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে। আবিষ্কার করতে হবে আপনার ভেতরের যোগ্যতাকে। আপনি যখন কাজের সেরাটা আপনার ক্লায়েন্টকে দিতে পারবেন তখন ক্লায়েন্টও আপনার সাথে দীর্ঘমেয়াদী কাজ করতে আগ্রহী হবে। ধরুন আপনি একজন এপস ডিজাইনার। আপনি যখন ৫০/৬০ টা কোম্পানীর মোবাইল এপস এর কাজ সুসম্পন্ন করতে পারলেন, তখন বুঝতে পারবনে আপনি এ বিষয়ে একজন স্পেশালিষ্ট।

রেট নির্ধারন করুন:

রেট একটি স্পর্শকাতর বিষয়। আপনি যখন একজন নামকরা ডিজাইনার, আপনার অনেক সাকসেসফুল পোর্টফোলিও আছে, সেক্ষেত্রে দাম কোনো সমস্যা নয়। আপনি যে দাম নির্ধারন করবেন ক্লায়েন্ট সে দামেই কাজ করতে রাজি। কারণ ক্লায়েন্টরা যা চায় তা যদি আপনি বুঝতে এবং সম্পন্ন করতে পারেন তবে আপনার পিছনে খরচ করতে ক্লায়েন্ট কোনো কার্পণ্য করবে না। কিন্তু নতুন হলে আপনি সে সুবিধা পাবেন না।

তাই যখন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে যাচ্ছেন, তখন আপনার কাজের রেট নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটু চিন্তাশীল হোক। শুরুতেই হাই রেট দাবি করে ভাল ভাল ক্লায়েন্ট হাতছাড়া করবেন না। প্রথমে আপনি দামের ব্যাপারে একটু কমপ্রমাইজ করে কাজের কোয়ালিটির দিকে মনোযোগ দিন। দেখবেন কিছুদিন পর অটোমেটিক আপনার কাজের রেট বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই এত কম রেট নির্ধারন করবেন না, যাতে করে কাজের এবং আপনার প্ররিশ্র্রমের অবমাননা হয়।

রেট নির্ধারণে ক্ষেত্রে কি মডেল অনুসরণ করবেন:

ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে সচরাচর দুটি দাম পদ্ধতি দেখতে পাওয়া যায়। একটি  hourly rate আরেকটি fixed price এখন প্রশ্ন হলো কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত? এটি নির্ভর করে আপনি কি ধরনের কাজ করছেন এবং কোন লোকেশন থেকে করছেন। লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে আওয়ারি রেট ক্লায়েন্টরা একসেপ্ট করতে চায় না। [এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশর ফ্রিল্যান্সাররা বেশ সুনামের সাতেই আওয়ারি রেটে কাজ করছে] আওয়াররি রেটে কাজ করতে পারলে সবচেযে উত্তম। কিন্তু যদি আপনি আওয়ারলি রেটে কাজ পাচ্ছেন না তখন আপনি ফিক্সড রেটেই কাজ করতে থাকুম। ফিক্সড রেটে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় সামনে আলোচনায় আসবে।

কিছু প্রাথমিক সঞ্চয় রাখুন:

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার প্রথমেই আপনি বড় কোনো প্রজেক্ট নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রথমে ছোট ছোট কাজ দিয়ে শুরু করার চেস্টা করুন। আর পুরোপুরিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পুর্বে কিছু টাকা সঞ্চয় করে রাখুন যাতে করে অন্তত ৬ মাস পর্যন্ত কোনো ইনকাম না হলেও আপনি চলতে পারেন। বিশেষ করে Living Cost টা অন্তত হাতে রাখুন।

সারমর্ম: মনে রাখবেন শুরুতে একটু আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি হলেও যখন আপনি সামর্থের সাথে কিছু জব সাকসেসফুললি করতে পারবেন তখন আত্মবিশ্বাস পাবেন। তাই শুরুতে লেগে থাকুন, হাল ছেড়ে দিবেন না। নুতন কিছু করতে হলে এ চ্যালেঞ্জটুকু নিতেই হবে। আপনার সমস্ত পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি ভেস্তে যাবে যদি আপনি হাল ছেড়ে দেন কিংবা শুরু করেই আপনি হতাশায় কারণে বন্ধ করে দেন। তাই কাজ চলিয়ে যান আর দেখুন ভবিষ্যতে আপনার জন্য কি অপেক্ষা করছে।