৮৭ আসনের সীমানা পুর্নবিন্যাস করে আজ গেজেট প্রকাশ করা হচ্ছে – পিরোজপুর ও পটুয়াখালীতে আনন্দের জোয়ার

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ৩০০ টি আসনের মধ্যে ৮৭ টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুর্নবিন্যাস করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহনের পর তা খসড়া গেজেট আকারে আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হচ্ছে। ৮৭ টি আসন পুর্নবিন্যাসে বরিশাল বিভাগের ২১ টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে শুধুমাত্র পিরোজপুর জেলার তিন আসন রদবল করা হয়েছে। এতে এ জেলার বাসিন্দারা খুশি হয়েছেন। কারন ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জনসংখ্যা কমের অজুহাত তুলে তৎকালিন নির্বাচন কমিশন এ বিভাগের ২৩টি আসন কমিয়ে ২১টিতে নিয়ে আসেন। এ নিয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। আসন কমে যাওয়ার কারনে রাজনৈতিক নেতাদের তেমন ক্ষতি না হলেও জনগনের দূর্ভোগ বেড়েছে। কারন এ অঞ্চলের আসন কমিয়ে রাজধানী ঢাকায় আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করায় এ অঞ্চলের মনোয়ন বঞ্চিত নেতারা ঢাকার নির্বাচনী আসনে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। তারা এমপি নির্বাচিত হলেও তাদের কোঠার বরাদ্দ স্ব-স্ব নির্বাচনী এলাকা হিসাবে ঢাকার বাসিন্দারাই ভোগ করছেন। দু’জন এমপি’র বরাদ্ধ কমে গেছে এ অঞ্চলে। একই সাথে নেতৃত্ব সংকট প্রকট আকার ধারন করে। গতকাল নির্বাচন কমিশন যে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছেন তাতে বরিশাল বিভাগের আসন বৃদ্ধি না পেলেও পটুয়াখালী ও পিরোজপুরের সীমানা পুন:নির্ধারন করায় প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন হওয়ায় খুশী হয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

পিরোজপুর জেলার তিনটি আসনের মধ্যে ২০০৭ সালের আসন বিন্যাসে পিরোজপুর সদর ও নাজিরপুরকে নিয়ে পিরোজপুর-১ ও ভান্ডারিয়া-কাউখালী উপজেলার সাথে নদী বেষ্টিত স্বরুপকাঠীকে যুক্ত করে দেওয়া হয়। একই সাথে ভান্ডারিয়া উপজেলার দু’টি ইউনিয়নকে দেয়া হয় পাশ্ববর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলার সাথে। এতে ঐ দুই ইউনিয়নের মানুষের দূর্ভোগ বাড়ে। তাদের উপজেলা ভান্ডারিয়া হলেও সংসদ নির্বাচনের ভোট দিতে হয় মঠবাড়িয়া আসনের প্রার্থীকে। থানা পুলিশ সহ উপজেলা পরিষদের কাজ স্থানীয় সংসদ সদস্য দেখা শুনা করায় বঞ্চিত ভান্ডারিয়ার দুই ইউনিয়নের মানুষ। মঠবাড়িয়ার সাথে তখন যুক্ত করা হয়েছিল জিয়া নগর থানাকে। বর্তমান আসন বিন্যাসে স্বরুপকাঠী ও পিরোজপুর সদর নিয়ে গঠন করা হয়েছে পিরোজপুর-১ আসন। ভান্ডারিয়া- কাউখালীর সাথে স্বরুপকাঠী বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে জিয়ানগরকে। আর শুধুমাত্র মঠবাড়িয়ার উপজেলাকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে পিরোজপুর  -৩ আসন। এতে পিরোজপুরের সকল প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন হলো। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে জনসংখ্যার ভিত্তি ঠিক রেখেই প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন করতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।  পিরোজপুর ছাড়াও এ বিভাগের মধ্যে পটুয়াখালী- সদর উপজেলা ও পৌরসভা নিয়ে পটুয়াখালী-১, মির্জাগঞ্জ ও দুমকী উপজেলা নিয়ে পটুয়াখালী-২, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলা নিয়ে পটুয়াখালী -৩ আসন গঠন করা হয়েছে। এর আগে গলাচিয়ার ৫ টি ইউনিয়কে ভান্ডারিয়ার মতই কলাপাড়ার সাথে যুক্ত করে দেওয়ায় সেখানকার জনদূর্ভোগ চরমে উঠেছিল। নতুন আসন বিন্যাসে  কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী নিয়ে গঠন করা হয়েছে পটুয়াখালী-৪ আসন। চরাঞ্চলের উন্নয়ন বঞ্চিত এ সব এলাকার মানুষ নতুন আসন বিন্যাসের খবরে মহাখুশী হয়েছেন।

এ ছাড়াও ঢাকা জেলার অন্তর্ভুক্ত দোহার, নবাবগঞ্জ, সাভার, ধামরাই ও কেরানীগঞ্জ উপজেলায় একটি করে সংসদীয় আসন করা হয়েছে। ফলে আসনগুলোতে প্রশাসনিক সুবিধা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা অনেকটাই রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। নবগঠিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে সংযুক্ত করে কোনো আসন রাখা হয়নি। এছাড়া কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ ও বরুড়া উপজেলায় ব্যাপক পরিবর্তন করে (২০০১ সালের মতো) পুরনো কুমিল্লা-৯ আসন পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। একইভাবে যশোরের কেশবপুর, অভয়নগর ও মনিরামপুরেও সংসদীয় সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলাকে এক আসন থেকে অন্য আসনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া নবগঠিত সিটি করপোরেশন হিসেবে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিকে সমন্বয় করতে গিয়েও বেশকিছু আসনে পরিবর্তন করা হয়েছে। ঢাকা-৪ থেকে ঢাকা-১১ আসন পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ও ঢাকা ১২ থেকে ঢাকা-১৮ আসন উত্তর সিটি করপোরেশনের সীমানার মধ্যে রাখা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম -২ সদর-রাজারহাট-ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম-৩ উলিপুর (সাহেবের আলগা ইউনিয়ন ছাড়া) ও চিলমারী (অষ্টমীচর ও নয়ারহাট ইউনিয়ন ছাড়া), কুড়িগ্রাম-৪ রৌমারী ও চররাজীবপুর এবং উলিপুরের অষ্টমীচর ও নয়ারহাট; পাবনা-১ সাঁথিয়া উপজেলা, পাবনা-২ বেড়া ও সুজানগর উপজেলা; যশোর-৩ সদর উপজেলা, যশোর-৪ বাঘারপাড়া উপজেলা, যশোর-৫ মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলা, যশোর-৬ কেশবপুর উপজেলা; খুলনা-২ সিটি করপোরেশন এলাকার ১৬ থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ড, খুলনা-৩ সিটি করপোরেশন এলাকার ১ থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড, দৌলতপুর মেট্রোপলিটন এলাকা, আড়ংঘাটা, খানজাহান আলী মেট্রোপলিটন এলাকা ও যোগীপোল ইউনিয়ন, খুলনা-৪ দিঘলীয়া, রুপসা ও তেরখাদা, খুলনা-৫ ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলা, খুলনা-৬ কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা, সাতক্ষীরা-৩ আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলা, সাতক্ষীরা-৪ শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলা; ঢাকা-১ দোহার উপজেলা, ঢাকা-২ নবাবগঞ্জ উপজেলা, ঢাকা-৩ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-৪ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৩, ২৪, ৫৫, ৫৬, কামরাঙ্গীরচর ও সুলতানগঞ্জ ইউনিয়ন, ঢাকা-৫ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪ থেকে ২২নং ওয়ার্ড পর্যন্ত, ঢাকা-৬ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৫ থেকে ২৭নং ওয়ার্ড পর্যন্ত, ঢাকা-৭ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮ থেকে ৪৭নং ওয়ার্ড পর্যন্ত, ঢাকা-৮ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪, মেট্রোপলিটন এলাকাধীন শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী থানাধীন শ্যামপুর ও দনিয়া ইউনিয়ন, ঢাকা-৯ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮, ৪৯ ও ৫০নং ওয়ার্ড এবং ডেমরা, মাতুয়াইল ও সারুলিয়া ইউনিয়ন। ঢাকা-১০ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭ থেকে ১৩ ও ১৯ থেকে ২১নং ওয়ার্ড, ঢাকা-১১ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৬, নাসিরবাদ, মাণ্ডা ও দক্ষিণগাঁও ইউনিয়ন, ঢাকা-১২ উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭ থেকে ২৩নং ওয়ার্ড, বাড্ডা, বেরাইদ, সাঁতারকুল ও ভাটারা ইউনিয়ন, ঢাকা-১৩ উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯, ২০, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৫ ও ৩৬নং ওয়ার্ড, ঢাকা-১৪ উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯, ১০, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪নং ওয়ার্ড, ঢাকা-১৫ উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩ ও সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন, ঢাকা-১৬ উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪, ১৪, ১৫, ১৬ ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, ঢাকা-১৭ উত্তর সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫, ৬নং ওয়ার্ড, ঢাকা-১৮ উত্তর সিটি করপোরেশনের ১নং ওয়ার্ড, উত্তরা, তুরাগ, বিমানবন্দর, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও ডুমনি ইউনিয়ন, ঢাকা-১৯ কাউন্দিয়া ইউনিয়ন বাদে সাভার উপজেলা এবং ঢাকা-২০ ধামরাই।

নারায়ণগঞ্জ-৩ বন্দর উপজেলা (১৯ থেকে ২৭নং ওয়ার্ড ছাড়া) ও সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ-৪ সদর উপজেলার ফতুল্লা, কুতুবপুর, এনায়েতপুর, কাশিপুর, বক্তাবলী, আলীরটেক ও রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-৫ সদরের ১ থেকে ১৮নং ওয়ার্ড এবং বন্দরের ১৯ থেকে ২৭নং ওয়ার্ড।

কুমিল্লা-৬ আদর্শ সদর ও সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১৮নং ওয়ার্ড, কুমিল্লা-৭ চান্দিনা ও বরুড়া উপজেলার দক্ষিণ খোসবাশ ও উত্তর খোসবাশ, চিতড্ডা ও তাগানগর, কুমিল্লা-৮ বরুড়া উপজেলা (দক্ষিণ খোসবাশ ও উত্তর খোসবাশ, চিতড্ডা ও তাগানগর ছাড়া), সদর দক্ষিণ উপজেলা, সিটি করপোরেশন এলাকার ১৯ থেকে ২৭নং ওয়ার্ড পর্যন্ত।

ফরিদপুর-৪ ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর; সুনামগঞ্জ-৪ সদর ও বিশ্বম্বরপুর, সুনামগঞ্জ-৫ ছাতক ও দোয়ারাবাজার; সিলেট-২ বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ, সিলেট-৩ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জ; মৌলভীবাজার-১ বড়লেখা ও জুড়ী; ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ নাসিরনগর ও বিজয়নগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ সরাইল ও আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ সদর উপজেলা। এছাড়া চাঁদপুর-২ মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা। চট্টগ্রাম-৫, চট্টগ্রাম-১৪, গাজীপুর-১, গাজীপুর-২, গাজীফুর-৩ ও গাজীপুর-৫ ও নেত্রকোনার পূর্বধলায় কিঞ্চিত পরিবর্তন আনা হয়েছে।