বরিশালের আগৈলঝাড়ার ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতালে গায়েবি রোগী দেখিয়ে ভুয়া বিল করে খাবারের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের অসাধু একটি চক্র ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ রোগী-স্বজন ও স্থানীয়দের।
বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ১২ শয্যা ফাঁকা। ৫, ৮, ৯, ১২, ১৪, ১৭, ৩৪, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪২ নম্বর শয্যায় কোনো রোগী ছিল না। অথচ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেজিস্ট্রার খাতায় ভর্তি দেখানো হয়েছে ৫৪ রোগী। অতিরিক্ত রোগীর জন্য আলাদা শয্যারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাসপাতালে কর্তব্যরত সেবিকা মাধবী লতা রাজীব, আভা রানী করাতী ও সাহিদা সুলতানা বলেন, ‘রেজিস্ট্রার খাতা অনুযায়ী হাসপাতালে ৫০ জনের বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন।’ তাহলে ১২ শয্যা ফাঁকা কেন জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘ভর্তিকৃত অনেক রোগী হাসপাতালে থাকেন না। প্রয়োজনে আসেন। আবার কেউ কেউ রোগ পরীক্ষার জন্য বাইরে যান।’ তবে শুক্রবার (২৬ মার্চ) সকালেও দেখা গেছে রাতের মতো হাসপাতালের ১২ শয্যা ফাঁকা ছিল।
স্থানীয়রা জানান, রেজিস্ট্রার খাতা অনুযায়ী হাসপাতালের নারায়ণ, মোরসেদা পারভীন, মাসুদ হোসেন ও তাদের আত্মীয়-স্বজন ফুলজান বেগম, রিজিয়া বেগম, শাহজাহান, সিরাজ খান, মিজানুর রহমানসহ আটজনকে ভর্তি দেখানো হয়েছে। রোগী ভর্তির খাতায় তাদের প্রত্যেককে শারীরিক দুর্বলতার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে একাধিকবার হাসপাতালে গিয়েও তাদের শয্যায় দেখা যায়নি।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, এ ধরনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। তবে বিভিন্ন দিবস আসলে হাসপাতালে গায়েবি রোগীর সংখ্যা বাড়ে। শুক্রবার (২৬ মার্চ) মহান স্বাধীনতা দিবসে সরকারের বিশেষ খাবার পরিবেশনের জন্য রোগী প্রতি ২০০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সরকারের বিশেষ বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নিতে অন্তত ২০ ভুয়া রোগীকে ভর্তি দেখানো হয়েছে। পরে হাসপাতালের অসাধু চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে ভুয়া বিল তৈরির মাধ্যমে খাবারের টাকা আত্মসাৎ করবেন।
হাসপাতালের ওই চক্রটি শুধু বিশেষ দিনে নয়, মাসে অন্তত ২০ দিন ভুয়া রোগী ভর্তি দেখিয়ে খাবারের বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি হাসপাতালে যারা বহির্বিভাগে সেবা নিয়ে চলে যান, মাঝে মধ্যে তাদেরকেও ভর্তি দেখানো হয়। শুধু তাই নয়, কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা রোগী না দেখেই তাদের নামে ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন।
রোগী না দেখে ব্যবস্থা পত্রে ওষুধ লিখে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এক চিকিৎসক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘রেজিস্ট্রারে রোগী ভর্তির কারণ লেখা দেখেই তারা ওষুধ লেখেন। ঝামেলা এড়াতে তারা পরে আর খোঁজ নেন না।’
হাসপাতালের খাদ্য-পথ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াছ শরীফ বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে আমাকে যে কয়জন রোগীর জন্য খাবার সরবরাহ করতে বলা হয়, সে অনুযায়ী সরবরাহ করি। শুক্রবার সকালে হাসপাতাল থেকে ৫৪ রোগীর খাবার স্লিপ দেয়া হয়েছে। আমি ৫৪ জনের খাবার দিয়েছি। হাসপাতালে কতজন ভর্তি আছেন, সেটা দেখা আমার বিষয় নয়।’
এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মামুন মোল্লার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, ‘শারীরিক দুর্বলতার কারণ উল্লেখ করে হাসপাতালে কয়েকজন রোগী ভর্তি দেখানোর বিষয়টি সকালে জানতে পেরে আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) মামুন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের সঙ্গে স্বজনরাও থাকেন। কিন্তু হাসপাতালে নিয়মানুযায়ী শুধু রোগীকে খাবার দেয়া হয়। বাড়ি থেকে রোগীর স্বজনদের খাবার নিয়ে আসতে কষ্ট হয়। এ কারণে কয়েকজন রোগীর স্বজনদের ভর্তি দেখিয়ে হাসপাতালের খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
ডা. বখতিয়ার আল মামুন আরও বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালে ৫৪ রোগী ভর্তি রয়েছেন। এ সংখ্যা কিছুটা বেশি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মানোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’