বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। হামলার সময় ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ফেলে রেখে আত্মরক্ষা করে পালিয়ে যান। ঘটনাটি ঘটে শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে, উপজেলার বেঁজহার গ্রামস্থ ইউনিয়ন পরিষদে।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে, বিএনপি নেতার ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানসহ সাত চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে মাহিলাড়া ইউনিয়ন বিএনপি এক ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। অন্যদিকে, বিএনপি নেতার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ইউপি চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের ১০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় একটি মারামারির মামলা রুজু করা হয়েছে।
চেয়ারম্যান পিকলু আত্মগোপনে থাকায় তার পিতা, ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা কালিয়া দমন গুহ অভিযোগ করে বলেন, মাহিলাড়া হাট ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহজাহান শিকদার পরাজিত হন। এ পরাজয়ের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে দায়ী করে তার ভাই, ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সবুজ শিকদারের নেতৃত্বে শনিবার সন্ধ্যায় ইউনিয়ন পরিষদে হামলা চালানো হয়।
হামলাকারীরা পরিষদের নিচতলা ও দোতলার দুটি কেসি গেটের তালা ভেঙে দোতলায় উঠে চেয়ারম্যানের কক্ষে ঢুকে একটি জানালার কাচ ভেঙে ফেলে। তখন চেয়ারম্যান পিকলু তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে তারা ইউনিয়ন পরিষদের চারটি সিসি ক্যামেরাও খুলে নিয়ে যায়। ঘটনার পর রাতে চেয়ারম্যান তার পরিবারের কাছে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন।
এদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা সবুজ শিকদার দাবি করেন, তিনি তার ভাতিজা অন্তর শিকদারের জন্য একটি সার্টিফিকেট আনতে ইউপি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ও চালক পলাশ হাওলাদারকে ডাকাডাকি করলে তারা দোতলা থেকে নেমে এসে তাকে মারধর করে এবং পিকলু চাকু দিয়ে কোপ দেয়। আত্মরক্ষার্থে ডান হাত তুললে কোপ তার বৃদ্ধা আঙুলে লাগে এবং তিনি গুরুতর আহত হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বেলা ১১টায় মাহিলাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে এক ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহজাহান শিকদার, আব্দুল আউয়াল লোকমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মিলন, ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শাহিন শিকদার, বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাকির খলিফা, ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন আকন, জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কায়েস সিকদার প্রমুখ।
আহত সবুজ শিকদার বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈকত গুহ পিকলু, তার ভাই উপজেলা যুবলীগ সদস্য সৈলিল গুহ পিন্টু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালাম মৃধা, যুবলীগ কর্মী ও গাড়িচালক পলাশ হাওলাদারসহ মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে রোববার সকালে গৌরনদী থানায় একটি মারামারির মামলা দায়ের করেন।
গৌরনদী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজীব হোসেন জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইউনিয়ন পরিষদের দোতলায় একটি জানালার ভাঙচুর দেখতে পান এবং চেয়ারম্যানের দুটি মোবাইল ফোন কক্ষে পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি বলেন, সরকারি ভবন ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গৌরনদী থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চলছে।