গৌরনদীর নির্বাচন সুষ্ঠভাবে হয়নি

জানিয়ে গৌরনদী পৌরসভার নির্বাচন আবার দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের নিজ কার্যালয়ে তিনি বলেন মেহেন্দীগঞ্জ, স্বরুপকাঠী ও গৌরনদীতে আওয়ামীলীগ আগে থেকেই সিল পিটিয়ে রেখেছে। এ নির্বাচন আমরা মানিনা।

সরকার এখানে জোড় জবদস্তি করে জেতার চেষ্টা করছে। আমরা দাবী করছি গৌরনদী ও মেহেন্দীগঞ্জে যেখানে সরকার জবরস্তি করে জেতার চেষ্টা করছে, যেখানে আমাদের প্রতিনিধিদের জবরদস্তি করে বের করে দেয়া হয়েছে সেখানে অবিলম্বে নির্বাচন স্থগিত করারা ঘোষনা দেয়া হোক। আমরা পূনঃ নির্বাচন দাবী করছি।

 

অবাধ ও সুষ্ঠ  নির্বাচন অনুষ্ঠিত- রির্টানিং অফিসার ॥
ব্যপক কারচুপির অভিযোগে বিএনপির নির্বাচন বর্জন

বরিশালের গৌরনদী পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ১৩ টি কেন্দ্রের এজেন্টদেরকে  মারধর করে বের করে দেয়া, বিএনপির কেন্দীয় নেতা ও আনারস প্রতীকের  সমর্থিত ভোটারদের উপর হামলা ও প্রকাশ্যে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোঃ নুরুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে ১১ এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও অংগ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই ১৩টি কেন্দ্র দখল করে তার এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। পরে মহাজোট সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে তারা ভোট কারচুপি করে (ব্যলটে সিল পিটিয়ে নেয়)। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদের সাবেক চিপহুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ প্রতিটি কেন্দ্রে গিয়ে প্রশাসন ও নির্বাচনের সাথে যুক্ত সংস্লিস্ট কর্মকর্তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে ভোট কারচুপিতে সহায়তা করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোট মনোনিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার  আব্দুস সোবাহান অভিযোগ করেন, ১নং টরকী ভিক্টরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৯ টায় তার এজেন্টদের বের করে দিয়ে মহাজোট মেয়র প্রার্থী হারিচুর রহমানের পক্ষে ব্যালটে সিল মারা হচ্ছে খবর পেয়ে সত্যতা যাচাই করতে ওই কেন্দ্রে গেলে যুবলীগ ক্যাডার মোঃ রেজাউল করিম সিকদার তার সমর্থকদের নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে কিল, ঘুষি মেরে তাকে আহত করেছে। যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম সিকদার হামলার অভিযোগ অস্বিকার করেন।

বিএনপির মেয়র প্রার্থী নুরুল ইসলামের স্ত্রী শাহিদা ইসলাম অভিযোগ করেন, পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড বড় কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কারচুপিতে বাধা দিলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে লাঞ্চিত করে। এ ছারা ৬ নং ওয়ার্ডের কয়েকজন ভোটার নাম প্রকাশ না করার সর্তে জানায়, আমরা ভোট দিতে গিয়ে দেখি মেয়র প্রার্থীর ব্যালট আগে থেকেই সিল মারা আছে কেহ চাইতে গেলে বলে সুধু ভিতরে ফেললেই হবে। সংবাদ সম্মেলনে নুরুল ইসলাম আরও বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে তার এজেন্ট মোঃ নুরু মোল্লা, মোঃ ইকবাল হোসেন, মোঃ শাকিল, এসকেন্দার সরদার, ইদ্রিস খান, মোঃ বাদল সরদার ও দেলোয়ার হোসেনের উপর  ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাডারদের হামলা  চালিয়ে আহত করে। তিনি কারচুপির নির্বাচন বাতিল করে পূনঃ নির্বাচন দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানান। গতকাল সকাল ১০ টায় ১নং ওয়ার্ডের টরকী বালিকা বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে গিয়ে কথা হয় ওই কেন্দ্রের ভোটার আঃ খালেকের স্ত্রী মহিবুল বেগমের সাথে। তিনি  অভিযোগ করেন, ব্যলট পেপার গ্রহনের পর তার হাত থেকে ব্যালট নিয়ে গিয়ে কেন্দ্রের মধ্যে থাকা মহাজোট প্রার্থীর সমর্থকরা নিজেদের ইচ্ছামত সিল দেন।

একই অভিযোগ করেন গৌরনদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের ভোটার আলেয়া বেগম (৪০), আব্দুল কাদের (৩৮)। এ সময়  ভোট কেন্দ্রের বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোঃ নুরুল ইসলামের এজেন্ট মোঃ মনিরুজ্জামান, মোঃ কাওছার হোসেন এস এম আলমসহ অনেকেই জানান, ভোট গ্রহণ শুরু থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত সুষ্ঠ ভাবে ভোট গ্রহণ অব্যহত থাকে সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে   ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল করে ভোটে কারচুপি করেন।  এ সময়  গৌরনদীর পৌর বিএনপির সভাপতি ও ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ শাহ আলম ফকির অভিযোগ করেন, এ কেন্দ্রে ভোটারদেরকে পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধা দেয়া হয় এবং ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট নিয়ে যায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা।  সরেজমিনে বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। ভোটাররা জানান, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারনে তেমন ভোটাররা উপস্থিত হননি।

সকাল ১১টায় কোন কোন কেন্দ্রে কিছু নারী ভোটারদের সারিবদ্ব লাইন দেখা গেলেও  পুরুষ ভোটারদের দেখা যায়নি। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মোঃ নুরুল ইসলামের অভিযোগ প্রত্যাক্ষান করে মহাজোট মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মোঃ হারিচুর রহমান বলেন, প্রতিপক্ষ প্রার্থী নিশ্চিত পরাজয়ের কথা ভেবে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দেন। তিনি আরও বলেন, অবাদ, সুষ্ট ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোঃ নুরুল ইসলামের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে রির্টানিং অফিসার ও গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মেয়র প্রার্থী নুরুল ইসলামের অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া জায়নি। পৌরসভার ১৩ টি কেন্দ্রে অবাদ সুষ্ট ও শান্তি পূন্য নির্বাচন অনুষ্টিত হচ্ছে। কোথাও কোন অপ্রতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি (সংবাদ প্রেরন পর্যন্ত)। বরিশাল সংসদ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার সোবাহানের উপর হমালার ঘটনা প্রসংগে বলেন, জনৈক রেজাউল তাকে একটি থাপ্পর দেয় বলে শুনেছি। রেজাউল তাদের কোন দলের কিংবা অংগ সংগঠনের নেতাকর্মী নয় । আবুল হাসানাত আব্দুল্লার ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে তিনি বলেন, এ অভিযোগের আদৌ কোন সত্যতা নাই।