ফাগুনের আগুনে পুড়বে রাজাকার

ফাগুনের প্রথম দিন ছিলো গতকাল বুধবার। প্রতিদিনের মতো ওইদিনও শাহবাগ মোহনায় ছিলো জনস্রোত। বাঙালি তরুণ-তরুণীরা ফাগুনের সাজে শামিল হয়েছে শাহবাগে। অন্য সব দিনের চেয়ে গতকাল তরুণ-তরুণীরা ভিন্ন সাজে সেজেছিলো। বাসন্তীরূপেই রাজাকারের ফাঁসির দাবি করেছেন তারা। ফাগুনের প্রথম দিনে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরে নতুন একটি ঘোষণা আসে। “ফাগুনের আগুনে রাজাকারদের পোড়াতে হবে”। ঘোষণায় আরো বলা হয়, ফাগুন আসে নতুন ফুলের বারতা নিয়ে। আর রাজাকাররা এই স্বাধীন দেশে বসবাস করছে নতুন ফুলকে ধ্বংস করার জন্য। নতুন ফুল ও রাজাকার এক সাথে থাকতে পারে না।” তাই গণজাগরণ চত্বরে তরুণ-তরণীদের উদ্দেশে ফাগুনের আগুনে সব রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের পুড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বসন্তের প্রথম দিন শাহবাগের আন্দোলন এক অন্যরকম রূপ নেয়। শরীরে বাসন্তী পোশাক হাতে হলুদ গাদা ফুল ও তরুণ-তরুণীদের মুখে ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’ লেখা আলপনা। প্রেম আর প্রতিবাদে বসন্ত উৎসব ॥ চারুকলার বসন্ত উদযাপন মঞ্চে চলছে জাগরণী কবিতা, গান আর দলীয় সঙ্গীত। বুধবার বেলা গড়ানোর সাথে সাথে বেড়েছে মানুষের ভীর। প্রতিবাদ আর প্রেম বুকে নিয়ে বসন্তের ডাকে ছুটে এসেছে মানুষ। এ প্রেম দেশের প্রতি, মানবতার প্রতি। দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে শহীদ হওয়া লাখে মানুষের প্রতি। একদিকে, মানবতার প্রতি মানুষের প্রেম, পাশাপাশি ঘৃণা তৈরি করে সেই সব নরপশুর প্রতি যারা লাখো প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। নির্যাতন চালিয়েছে নিরীহ মানুষের ওপর। চারুকলার অনুষ্ঠানে মানবতার প্রতি প্রেম, পাশাপশি নরপশুদের প্রতি ঘৃণা আর প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে। বাসন্তি পোশাকে মনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি নিয়ে এখানে আসা মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। অনুষ্ঠানেও রয়েছে এসবের স্পষ্ট আভাস। এখানকার প্রতিটি গান কবিতাই উৎসর্গ করা হয়েছে তরুণদের জাগরণের প্রতি। বসন্ত অনুষ্ঠানে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ অনুষদের শিক্ষার্থী মোরশেদা আক্তার জলি বলেন, প্রতিবারই এখানে আসি। আগের সে উচ্ছ্বাস এবার কিছুটা ম্লান। তবে প্রজন্ম চত্বরে চলমান আন্দোলনের দ্রোহ রয়েছে এখানেও। আমি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির সাথে একমত। লাখো প্রাণের সাথে বসন্তের এই দিনে আমিও দাবি রাখি সব যুদ্ধাপরাধী ফাঁসিতে ঝুলুক। কলঙ্কমুক্ত হোক আমার সোনার বাংলাদেশ। এবারের বসন্ত অনুষ্ঠানও সে আন্দোলনেরই একটি অংশ। আমরা প্রতিবাদ জানাই রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ওঠার। আমরা প্রতিবাদ জানাই সব মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অবমাননার।’ আগামী বসন্ত হোক রাজাকারমুক্ত ॥ বসন্ত বরণ উৎসবে চারুকলার বকুলতলাও যেন এক টুকরো শাহবাগ। তবে শাহবাগের প্রাণ সেখানকার ‘স্লোগান’ আর এখানে প্রাণ ‘জাগরণী গান’। প্রতিবাদী নাচ, আবৃত্তি, দেশাত্মবোধক গানসহ নানা আয়োজনে চারুকলার বকুলতলায় চলছে বসন্ত উৎসব।
তবে আগামী বসন্তকে রাজাকারমুক্ত দেখতে চান আয়োজকসহ এখানে আসা অগণিত মানুষ। বসন্ত উৎসবের আয়োজনে বসন্ত কথন পর্বে বসন্ত উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আরিফ বলেন, “শাহবাগসহ সারাদেশে নতুন প্রজন্মের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ চলছে। বসন্তের কোকিল থেকে শুরু করে প্রকৃতির মধ্যে একই চাওয়া। আমরাও সে দাবিতে সংহতি জানাচ্ছি।” তিনি আরো বলেন, “আমরা চাই, আগামী বসন্ত যেন রাজাকারমুক্ত হয়। নতুন প্রজন্ম যেন আগামী বসন্ত উৎসব রাজাকারমুক্ত উৎসব হিসেবে পালন করতে পারে। গত নয়দিন ধরে আমরাও ছিলাম শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে। বাংলার ১৬ কোটি মানুষ আছে শাহবাগের সাথে। বাংলার সংস্কৃতিকে বরণ করতে ছুটে এসেছি চারুকলায়। আবারও যোগ দেবো শাহবাগ চত্বরে, নতুন প্রজন্মের কাছে। তিনি আরো বলেন, এবারের বসন্তের কোকিল খুবই ভাগ্যবান। তার কণ্ঠে সুর মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাইবো আমরা সবাই।’’ নামতায় স্লোগানে চোখে আসে জ্বল ॥ শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে চলমান আন্দোলণের নবম দিন গতকাল বুধবার সকালে মঞ্চ থেকে ‘নামতা স্টাইলে’ নতুন স্লোগান দেয়া শুরু হয়েছে। বসন্ত শুরুর দিনে এমন স্লোগান দারুণ পছন্দ করছে গণজাগরণ চত্বরে জমায়েত প্রতিবাদী জনতা। যেন নামতা আকারে মুখে মুখে ফুটছে স্বশক্তিতে বলীয়ান হওয়ার আওয়াজ, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিতে ঝোলানোর দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। মঞ্চ থেকে বলা হচ্ছে ‘এক এককে এক’, সমবেত জনতা সমস্বরে বলছে, ‘কাদের মোল্লা দেখ’। এভাবে, দুই এককে দুই, রাজাকার তুইৃ./ ছয় এককে ছয়, করি না আর ভয়/ সাত এককে সাত, কাটবো এবার শিবিরের হাত/ আট এককে আট, লড়াই হবে দিন রাত/ নয় এককে নয়, হবে বাংলাদেশের জয়’ ইত্যাদি স্লোগান যেন নতুন করে ছড়িয়ে দিচ্ছে উজ্জীবনী আবেগ। কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে গত আট দিন পেরিয়ে আসা আন্দোলনে মঞ্চ থেকে এভাবেই দেওয়া হচ্ছে নিত্যনতুন আর অভিনব সব স্লোগান। এসব স্লোগানে ফাঁসির দাবি যেমন জোরালো হচ্ছে, তেমনি আগতদের চোখে এমনিতেই আবেগের জ্বল এসে যায়। এভাবেই স্লোগানে স্লোগানে যুদ্ধাপরাধের ভিত কাঁপিয়ে দিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম।