যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বরিশাল বিভাগ জুড়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত রাজাকার কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বরিশাল বিভাগ জুড়ে। প্রতিদিন বিকেল থেকে বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় চলছে প্রতিবাদী মানুষের অবস্থান।

রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে গত ৫ ফেব্র“য়ারী থেকে শাহাবাগে শুরু হওয়া আন্দোলন আজ ছড়িয়ে পড়েছে বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে। প্রত্যেক স্থানেই তরুণ প্রজন্মের উদ্যেগে এসব কর্মসুচি পালন করা হচ্ছে। যোগ দিচ্ছেন সকল বয়সের শ্রেনী পেশার নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন শত শত আন্দোলনকারীদের পদচারনায় মুখরিত হচ্ছে এসব আন্দোলন চত্বর। চলছে শ্লোগান, বক্তৃতা, আবৃত্তি, জাগরণের গান, নাটিকা, প্রদ্বীপ প্রজ্জলন, রাজাকার কুশপুত্তলিকাসহ নানা আয়োজন। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী ফাঁসির মঞ্চ। এসব মঞ্চে রাজাকারদের প্রতিকী ফাঁসি দেয়া হয়। এছাড়া তরুণ-তরুণী, শিশু কিশোর, যুবক বৃদ্ধসহ প্রায় সব মানুষের মাথায় রাজাকারদের ফাঁসি চাই লেখা ব্যাজ ও হাতে বিভিন্ন প্লাকার্ড আন্দোলনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে।

বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউন হল চত্বরের সামনে নির্মান করা হয়েছে ‘একাত্তরের মঞ্চ’। প্রতিদিন বিকেল থেকে শুরু হয় এ মঞ্চে প্রতিবাদী অবস্থান। বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয় মিছিল নিয়ে। মিছিল নিয়ে আসে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে জনতার ঢল।

এ ব্যাপারে বরিশাল প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক লিটন বাশার আজ বাসস’কে বলেন, প্রতিদিন বিকেল থেকে সংগ্রামী জনতা অবস্থান নেয় একাত্তরের মঞ্চে। প্রতি রাতে নগরী প্রতিবাদের নগরীতে পরিণত হয়। রাজাকারদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে তিনি জানান।

দ্বীপ জেলা ভোলায় প্রতিদিন বিকেল থেকে ‘একঝাক তরুণের’ উদ্যেগে শহরের বাংলা স্কুল মোড়ের সৃষ্টি তলায় চলে প্রতিবাদী অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সকল রাজাকারদের ঘৃনা জানাতে শহরের নানান শ্রেণী-পেশার মানুষ এতে যোগ দেয়। শ্লোগানে শ্লোগানে প্রতিদিন মুখরিত হয় সৃষ্টিতলা। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে প্রতিবাদী অবস্থান। জেলা সদর ছাড়াও বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশনসহ বিভিন্ন উপজেলায় আন্দোলন আরো বেগবান হচ্ছে।

ভোলার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী মোস্তাক শাহিন বাসস’কে বলেন, শত শত তরুণের শতঃফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিদিন মুখরিত হচ্ছে সৃষ্টি তলার জাগরনের মঞ্চ। নানা শ্রেনী পেশার মানুষ রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত মানবতাবিরোধী রাজাকারদের ফাঁসি না হবে ততদিন এ আন্দোলন চলবে।

এছাড়া ঝালকাঠিতে প্রতিদিন পৌরসভার উদ্যেগে শহরের ফায়ার সার্ভিস মোড়ে ‘তরুণ প্রজন্ম মঞ্চে’ চলছে রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত অবাধি পর্যন্ত চলে প্রতিবাদ। এখানে অংশ নেয়, শহরের সুশিল সমাজ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, চাকরীজীবীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। এছাড়া রাজাপুর, কাঠালিয়া, নলছিটিসহ বিভিন্ন উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে আন্দোলন চলছে।
একইভাবে পটুয়াখালীতে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শহরের শহীদ আলাউদ্দীন শিশু পার্কে জেলার সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে চলে রাজাকার বিরোধী আন্দোলন। পাশাপাশি দশমিনা, রাঙাবালী, কলাপাড়া, গলাচিপা, মির্জাগঞ্জসহ সকল উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে আন্দোলন চলছে। এছাড়াও পিরোজপুর, বরগুনাসহ বিভাগের জেলা-উপজেলাগুলোতে আন্দোলন বেগবান হচ্ছে। সবার একই দাবি, রাজাকারদের ফাঁসি।

আন্দোলনকারীরা জানায়, কাদের মোল্লাসহ সকল রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে তাদের এ আন্দোলন আজকে গনদাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই রাজাকারদের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখা হবে। তারা জানান, আজকে আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্য ব্লগার রাজিবকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু রাজিবের হত্যার মাধ্যমে আন্দোলনে নতুন চেতনা যোগ হয়েছে। তা হচ্ছে যে কোন মূল্যে সকল রাজাকারের ফাঁসি।