হারিয়ে যাচ্ছে মৌচাক!

ষ্টাফ রিপোর্টার ॥ মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি-দাঁড়াওনা একবার ভাই। ওই ফুল ফোঁটে বনে-যাই মধু আহরনে, দাঁড়াবার সময়তো নাই। কবির কবিতার সেই মৌমাছিদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান আজ যেমন আর চোখে পড়ে না, তেমনি মৌমাছি এখন কেবলমাত্র গবেষণার বিষয় হয়েই দাঁড়িয়েছে। আর এর একমাত্র কারন হিসেবে জানা গেছে, গাছপালা, বন-জঙ্গল কেটে উজাড় এবং ফসলি জমিতে অতিরিক্ত বালাইনাশক ব্যবহার করায় বাসস্থান সঙ্কটে ভুগছে পরিশ্রমী এসব মৌমাছি। তবে অতীতে শহরে বা গ্রামের ঘরের কোণে এসব মৌচাক দেখা যেত সহজেই। গ্রামে প্রবাদ রয়েছে ভালো-মন্দ দেখে মৌমাছিরা বাসা বাঁধে। আবার পূর্বে অনেকেই মৌমাছির দল দেখলে বাড়ির ঢেঁকিতে পারদিতেন। এতে কিনা মৌমাছি তাদের বাড়িতে বাসা বানাতেন। সেইসব মৌমাছি ও মৌচাক বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে কবির কবিতার মতোই বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ। ভবিষ্যত প্রজন্ম শুধু দেখবে চাষাবাদের মৌমাছি।
তবে মাঝে মধ্যে এখনো গ্রামের কিছু সংখ্যক স্থানে মৌচাকের দেখা মেলে। একসময় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার গেরাকুল গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই মৌচাক ছিলো। বিশেষ করে ওই গ্রামের ঐহিত্যবাহি মিঞাবাড়িতে প্রায় বারো মাসই অসংখ্য মৌচাক থাকতো। সেসময় ওই গ্রামে অসংখ্য ফুলের বাগানও ছিলো। ওই গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি আব্দুর রহিম (৭৫) বলেন, মিঞাবাড়ির বড়মিয়া (গোলাম মানিক মিয়া) তার বাড়ির দেখাশুনা করার জন্য আমাকে দীর্ঘদিন দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ওইসময় আমি তার বাড়ির মধ্যদিয়েই প্রায় ৭/৮টি মৌচাক থেকে মাসে দু’বার মধু সংগ্রহ করতাম। প্রতিবারে ১৫ থেকে ১৬ কেজি মধু পাওয়া যেতো। তিনি আরো বলেন, মাটির কলস ভর্তি করে রাখা হতো ওইসব মধু। বড়মিয়া মারা যাবার পর ও গ্রাম থেকে ফুলের বাগান কমে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে মৌচাকও কমতে শুরু করে। দীর্ঘদিন পর একই গ্রামের শরীফ বাড়ির প্রবাসী ছালাম শরীফের ঘরের কোনে দেখা মিলেছে সু-বিশাল একটি মৌচাকের। ওই পরিবারের গৃহীনি পারভিন বেগম বলেন, গত দু’মাস ধরে তাদের ঘরের কোনের একটি পরিত্যক্ত বাঁশের ওপর মৌমাছিরা বাসা বেধেঁছে। বিষয়টি একপ্রকার ব্যতিক্রমী ঘটনাও বলা চলে। হারিয়ে যাওয়া মৌচাকের কথাশুনে ভবিষ্যত প্রজন্মের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত মৌচাকটি একনজর দেখার জন্য উৎসুক পথচারীরাও ওই বাড়িতে ভীড় করছে। গৃহিনী পারভিন বেগম আরো বলেন, আমরা এসব মৌমাছিকে কখনোই বিরক্ত করি না। ফলে মৌমাছিগুলো আমাদের কাউকে আক্রমণও করে না। এ মৌচাক থেকে মাসে দু’বার মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতিবার ২ থেকে ৩ কেজি মধু পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, পরিশ্রমী আদর্শ প্রাণী হচ্ছে মৌমাছি। এরা নির্দিষ্ট বিধিবিধান ও সু-শৃংখলা মেনে চলে। তিনি আরো বলেন, পৃথিবীতে হাজারো প্রজাতির মৌমাছি থাকলেও এপিস সেরানা নামের মৌমাছি এদেশের গ্রামে-গঞ্জে দেখা যায়।