বরিশালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বিবির পুকুর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে রেখেছে নগরীর প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত শত বছরেও অধিক সময়ের ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরটি। এটি ইতিহাসের নিরব স্বাক্ষীও বটে। নগরীর সদর রোডের পূর্ব পাশে চার’শ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে আঠারো’শ ফুট প্রস্থ বিবির পুকুরটি দেশের বিভাগীয় নগরীর প্রানকেন্দ্রের একমাত্র পুকুর বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞজনেরা।

সূত্রমতে, ১৬’শ খ্রীস্টাব্দের প্রথম ভাগে খ্রিষ্টান মিশনারিরা বরিশালে আগমন করেন। তারা নগরীতে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছেন। সূত্রে আরো জানা গেছে, উইলিয়াম কেরী (ইংরেজরা) দস্যু পর্তুগীজদের কাছ থেকে জিন্নাত বিবি নামের এক মুসলিম মেয়েকে উদ্ধার করে তাকে লালন-পালন করেছেন। পরবর্তীতে এক মুসলিম যুবকের কাছে জিন্নাত বিবিকে বিয়ে দেয়া হয়। উইলিয়াম কেরী জিন্নাত বিবিকে জেনেট বলে ডাকতেন। জিন্নাত বিবি অভিভক্ত বাংলার মন্ত্রী হাশেম আলী খানের বাড়ির ভূমির উপরোস্থ মালিক ছিলেন এবং সেখানে জিন্নাত বিবির বাসগৃহ ছিল। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে জিন্নাত বিবি জনগনের জলকষ্ট নিবারনের জন্য নগরীর সদর রোডের পূর্ব পাশে চার’শ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে আঠারো’শ ফুট প্রস্থ একটি পুকুর খনন করেন। সেই পুকুরটিই বিবির পুকুর নামে পরিচিত। জিন্নাত বিবির কোন সন্তান ছিলো না। পুকুরের পশ্চিম পারে বাস করতেন তিনি। সেখানে পরবর্তীকালে খান বাহাদুর হাশেম আলী খান তার বাসগৃহ নির্মান করেন।

বিভাগীয় নগরীতে সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটানোর পর দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই মুক্ত বাতাসের পরশ, বন্ধু কিংবা বান্ধবীদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা ও অবসর সময় কাটানোর জন্য প্রতিদিন এ পুকুর পাড়ে জড়ো হয় প্রকৃতি প্রেমীরা। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মুক্ত আকাশে বিহঙ্গের সাঁধ নিতে এখানে শত শত মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়। বর্তমান বিসিসি’র মেয়র শওকত হোসেন হিরন পুকুরটির চারিপার্শ্বে নিজস্ব অর্থায়নে ঝুলন্ত পার্ক, বিশ্রাম নেয়ার জন্য বেঞ্চ, অত্যাধুনিক গ্রীল ও বিভিন্ন ধরনের লাইটিংয়ের মাধ্যমে পুকুরটির শোভা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বরিশাল পৌরসভার সাবেক পৌর কমিশনার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এস.এম ইকবাল জানান, বরিশাল পৌরসভা স্থাপনের পর থেকেই বিবির পুকুরটি বিভিন্নভাবে সংস্কার ও পুর্নখনন করা হয়। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন জানান, পৌরসভা থেকে ২০০২ সনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে রূপ নেয়ার পর পুকুরটিকে নতুন আঙ্গিকে সাঁজাতে একটি বেসরকারি কোম্পানী এগিয়ে আসলেও সিটি কর্পোরেশনর তৎকালীন সময়ের কর্তা ব্যক্তিরা তা অনুমোদন দেয়নি। বরিশালের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রবীণ সাংবাদিক এস.আলী মোহাম্মদ বলেন, নগরীর বিবির পুকুরটি বরিশালের ইতিহাসে একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত। আমার জানা মতে, বিভাগীয় নগরীর প্রানকেন্দ্রে এ রকম পুকুর দেশের আর কোন বিভাগীয় শহরে নেই। বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন পুকুরটিকে সংস্কার করে আরো দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলেছেন। ফলশ্র“তিতে অতিসম্প্রতি খুলনা নগরীতে বিবির পুকুরের আদলে একটি পুকুর খনন করার জন্য খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আব্দুল খালেক বরিশাল নগরীর এ দৃষ্টি নন্দনকরা পুকুরটি পরিদর্শন করেছেন।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও যুগ্ম-সচিব নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, বিসিসির কাগজপত্র মোতাবেক ১০৫ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরটি আরো আধুনিকায়ন করার জন্য মেয়র (শওকত হোসেন হিরন) ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন। খুব শীঘ্রই সে সব পরিকল্পনার কাজ শুরু করা হবে। যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, পুকুরের মাঝখানে ঝর্ণা, আধুনিক লেজার লাইট, বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ ও সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা।

বরিশালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বিবির পুকুর