দক্ষিণাঞ্চলে মাহাজোট সরকারের মহাপরিকল্পনা ‘বীজ বর্ধণ খামার’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জন্য মাহাজোট সরকারের মহাপরিকল্পনায় বদলে যাচ্ছে উপকূলীয় এলাকার চিত্র। উপকূলীয় পটুয়াখালীর দশমিনায় তৈরী করা হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বীজ বর্ধণ খামার। দশমিনার চরহাদর, চরবাঁশবাড়িয়া ও চরবোথামসহ তিনটি চরে অধিগ্রহণ করা ১ হাজার ৪৪ দশমিক ৩৬ একর জমিতে ‘দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে (বরিশাল ও পটুয়াখালী) বীজ বর্ধণ খামার স্থাপন প্রকল্প’ নামে পরিচিত এ খামারটি গত ১৯ মার্চ উদ্বোধন করেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার, আ’লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ে অধীনে পরিচালিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। ২০১২ সনের ২৪ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্পটি একই বছরের ১ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে। আড়াই বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০১৪ সনের জুন মাস নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সরকারের একক অর্থায়নে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। এশিয়ার শস্য ভান্ডারখ্যাত বৃহত্তর বরিশালের সদর ও পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলাকে প্রকল্প এলাকা হিসেবে ধরা হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি, এসব এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র দূরীকরণ এবং প্রকল্প এলাকার জনগনের উন্নয়ন ঘটিয়ে এ শস্য ভান্ডরখ্যাত অঞ্চলের অতীতের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী তার বক্তব্যে এমনটিই তুলে ধরেছেন। তিনি আরো বলেন, একই উপজেলার চরহাদী, চরশাহজাজাল ও চরবোরহানে প্রকল্প এলাকা বৃদ্ধি পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্প এলাকা বৃদ্ধি করা হলে এটিই হবে দেশের সর্ব বৃহৎ বীজ বর্ধণ খামার। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী তোফায়েল হোসেন বিএডিসির প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমানের বরাত দিয়ে জানায়, ব্রীডার বীজ থেকে ১১ দশমিক ৫’শ মেট্রিক টন ধান, গম, ভূট্টা, আলু, ডাল ও তেলের ভিত্তি বীজ উৎপাদন করা, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে উল্লেখিত ফসলের ব্রীডার বীজ সংগ্রহ করা, জলবায়ু পরিবর্তনের পেক্ষাপটে প্রতিকূলতা সহিষ্ণু জাত বিশেষ করে লবনাক্ততা, খরা, জলমগ্নতা সহিষ্ণু জাতের বীজ উৎপাদন বৃদ্ধি করা, খামারের উৎপাদিত বীজ প্রক্রিয়াজাত করণ, সংরক্ষণ ও গুণগতমান পরীক্ষা করণ, মান সম্পন্ন বীজ সরবরাহের মাধ্যমে উল্লেখিত এলকায় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করে পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মানব সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে ৭৫০ জন কৃষক, এনজিও, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান এ প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. এস.এম নাজমুল ইসলাম প্রকল্পের বর্ণনায় বলেন, প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে খামার স্থাপনের মধ্যে আরো রয়েছে, ১৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ, ১ হাজার ৪৪ দশমিক ৩৬ একর ভূমি ও মাটি উন্নয়ন, ৩৯ হাজার ৫’শ (সিইউএম) ৩ টি পুকুর খনন, ৫’শ বর্গকিলোমিটার লেবার শিড ও দেড়’শ বর্গমিটার গার্ড/আনসার ক্যাম্প নির্মাণ, ৪৬০ বর্গমিটারের স্কুল, ২৩০ বর্গমিটারের মসজিদ, ৭৭০ বর্গমিটার স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ কমিউনিটি সেন্টার, ৮ হাজার বর্গমিটারের শিশুপার্ক ও খেলার মাঠ নির্মাণ, খামারের জন্য ১৫’শ বর্গমিটার কাভার্ড প্রেসিং ফ্লোর, ৯’শ বর্গমিটার ক্যাটেল সেড, ২৪’শ বর্গমিটার সানিং ফ্লোর, ১৫’শ বর্গমিটার গ্যারেজ ও ইমপিমেন্ট সেড নির্মাণ, কর্মকর্তাদের জন্য দু’হাজার বর্গমিটার ডরমিটরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং কর্মচারীদের জন্য দু’হাজার বর্গমিটার ডরমিটরি নির্মাণ, ৯ হাজার ৬’শ বর্গমিটার পাকা রাস্তা স্থাপন, ২২ হাজার ৫’শ বর্গমিটার হেরিং বোন রাস্তা স্থাপন, সেচ সুবিধার জন্য ৯ কিলোমিটার এবং ৬ কিলোমিটার নালা খনন, ৪টি ১ ভেন্ট স্লইস গেট এবং ৮টি ২ ভেন্ট স্লুইজ গেট, ১৬৮ বর্গমিটারের ৪০টি বক্স কালভার্ট, ৬৪ বর্গমিটারের ৩২টি ফুট ব্রিজ এবং দেড় লাখ লিটার ক্ষমতা সম্পন্ন ৩টি ওভারহেড ট্যাঙ্ক নির্মাণ। প্রকল্পের প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও হিমাগার নির্মাণের মধ্যে রয়েছে, ২ হাজার মেট্রিক টন সাধারণ এবং ১ হাজার মেট্রিক টন ‘ডিউমেডিফাইড’ বীজ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩ হাজার বর্গমিটার প্রক্রিয়াজাত করণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ। এছাড়া ২ হাজার মেট্রিক টন বীজ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ২ হাজার বর্গমিটার হিমাগার নির্মাণ। প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের জন্য ১৫’শ বর্গমিটার এবং হিমাগারের জন্য ১৫’শ বর্গমিটার অফিস বিল্ডিং নির্মাণ। সূত্রে আরো জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৩’শ ১২ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৩’শ ৪ কোটি ৭৯১ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে।

এছাড়াও ২০১১-১২ অর্থবছরে ক্রয় পরিকল্পনা গত বছরের মে অনুষ্ঠিত প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভায় সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে যানবাহন ও কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের অগ্রগতির জন্য বীজ উৎপাদন উপকরণসহ ১টি জীপ গাড়ি, ২টি মটরসাইকেল, ২টি ট্রাক্টর, ৩টি পাওয়ার টিলার, ৩টি কাল্টিভেটর, ২টি রোটাভেটর, ২টি ডিক্র হ্যারো, ১টি মোল্ড বোট প্লাউ, ২৫টি ত্রিপল, ১টি ফটোকপিয়ার, ২টি কম্বাউন্ড হারভেস্টর, ১টি স্পিডবোট ও ১টি ইঞ্জিন বোড ক্রয় করা হয়েছে। প্রকল্পের ১’শ ৮৮ একর জমির ওপর চলতি রবি মৌসুমে চাষকৃত ফসলের মধ্যে রয়েছে সরিষা, দেশী খেশারী, মশুরী, সূর্যমূখী, ধৈঞ্চা, ফেলন, মুগ, তিল, সয়াবিন ও তিল। এছাড়া আরো ৬০ একর জমিতে সয়াবিন, মুগ, তিল ও নেরিকা বপন এবং রোপনের জন্য জমি তৈরির কাজ চলছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব গোলাম মাওলা রনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য মহাজোট সরকারের মহাপরিকল্পনার অংশহিসেবে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে দশমিনা-গলাচিপার বেকারত্বের হার হ্রাসসহ উন্নয়ন পরিকল্পনায় পাল্টে দেবে গোটা দক্ষিণাঞ্চল।