নজিরবিহীন গণজমায়েতের প্রস্তুতি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের লংমার্চে!

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ৬ এপ্রিলের লংমার্চে বৃহৎ গণজমায়েত ঘটাতে সব রকমের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সারাদেশ থেকে ঢাকামুখি এ লংমার্চে হেফাজতের পাশাপাশি অন্যান্য ইসলামী সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকরাও থাকবেন বলে জানা গেছে। এ লংমার্চের সমর্থনে পোস্টার, গণসংযোগের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যমগুলোতেও সমান তালে প্রচার চালাচ্ছে সংগঠনটি। লংমার্চে রেকর্ডসংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটাতে পারবেন বলে হেফাজত নেতারা মনে করছেন।

এদিকে সরকার লংমার্চ কর্মসূচিতে পরোক্ষভাবে বাধা দিচ্ছে উল্লেখ করে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, পরিবহন মালিকদের চিঠি পাঠিয়ে লংমার্চে গাড়ি না দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে সরকার। তবে সরকারের এই বৈরী মনোভাব সত্ত্বেও চট্টগ্রাম থেকে প্রায় এক হাজার গাড়ি নিয়ে রোডমার্চ শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। হেফাজতের বাইরেও অন্যান্য সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে লংমার্চে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতির খবরও পাওয়া যাচ্ছে। লংমার্চ প্রস্তুতির ব্যাপার হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, “লংমার্চের জন্য গাড়ি সংগ্রহসহ ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।” তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, “এখন পর্যন্ত কিছু গাড়ি মালিকের সাথে আমাদের কথা চূড়ান্ত হলেও শেষ পর্যন্ত তারা (গাড়ি মালিকরা) কথা নাও রাখতে পারেন, এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

এদিকে চিঠি দিয়ে গাড়ী না দেয়ার সরকারি চাপের ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি কফিল উদ্দিন বলেন, “রোডমার্চের জন্য গাড়ি ভাড়া দেয়া না দেয়ার বিষয়টি মালিকদের একান্ত নিজস্ব ব্যপার। তবে চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রত্যেক মালিক রাস্তায় গাড়ি বের করা নিয়ে উদ্বিগ্ন।”

বাধা দিলে লাগাতার হরতাল
বুধবার হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা নুর হোসেন কাসেমী জানান, যেকোনো মূল্যে লংমার্চ কর্মসূচি করা হবে। যদি সরকার বাধা দেয় তাহলে ৭ এপ্রিল থেকে লাগাতার হরতাল। এর আগে সোমবার হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফি রোডমার্চ শান্তিপূর্ণ করার নির্দেশ দিয়ে নেতাকর্মী-সমর্থকদের বলেন, “আমাদের রোডমার্চ শান্তিপূর্ণ হবে ইনশাআল্লাহ, যেখানে বাধা দেওয়া হবে সেখানে তসবীহ হাতে বসে বসে জিকির করবেন।” কোনো ধরনের ভাঙচুর ও মানুষের ক্ষতি না করতেও তিনি নির্দেশ দেন।

লংমার্চ ‘শান্তিপূর্ণ’ হলে বাধা নয়
সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান হেফাজতের লংমার্চ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “আমরা একমত হয়েছি যে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা দেয়ার কোনো যুক্তি নেই। সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করার দায়িত্বের প্রতি সংগঠনটির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।”

মটরসাইকেল শোভাযাত্রা
বুধবার দুপুরে লংমার্চের সমর্থনে মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহির নেতৃত্বে চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ থেকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি লালখান বাজার, টাইগারপাস, বিআরটিসি মোড়, নিউমার্কেট হয়ে বহদ্দারহাট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

প্রচার চলছে অনলাইনে
লংমার্চকে ‘ঈমানী আন্দোলন’ আখ্যা দিয়ে এতে অংশ নিতে ভার্চুয়াল মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। ফেসবুকে একটি ইভেন্টও খোলা হয়েছে। অনলাইন মাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচার হচ্ছে ফেসবুক পেজ ও ব্লগে। এসব ফেসবুক পেজের অধিকাংশরই ফ্যান সংখ্যা ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষেরও বেশি। এসব পেজে কিছু পরামর্শ-নির্দেশনা ও রোডম্যাপ দেয়া হচ্ছে। বেশ কিছু ফেসবুক পেজে হেফাজতের পক্ষে প্রচারণামূলক পোস্টে পরামর্শ দিয়ে বলা হচ্ছে- “অনেক মানুষ একসাথে রওনা দিবেন। কমপক্ষে ২,৫০০ জন/৩০টি বাস নিয়ে একসাথে থাকবেন। অযথা সংঘর্ষে লিপ্ত হবেন না। পুলিশ বাধা দিলে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝাবেন। কোথাও কোনো ভাংচুর করবেন না। তবে অন্যকেউ বাধা দিলে সরাসরি তাদের প্রতিরোধ করবেন।”

লংমার্চের সম্ভাব্য রুটম্যাপ
অনলাইন মাধ্যমে লংমার্চে অংশ নিতে এই রুটম্যাপটি প্রকাশ করা হয়-

রুট ১: কক্সবাজার/বান্দরবান/রাঙ্গামাটি -চট্টগ্রাম – ফেনী/নোয়াখালী/লক্ষ্মীপুর/চাঁদপুর – কুমিল্লা-ঢাকা

রুট ২: পঞ্চগড়- ঠাকুরগাঁও –দিনাজপুর/নীলফামারী/লালমনিরহাট/কুড়িগ্রাম-রংপুর – গাইবান্ধা/ জয়পুরহাট/ নওগাঁ – বগুড়া – সিরাজগঞ্জ- টাঙ্গাইল- গাজীপুর -ঢাকা

রুট-৩: সুনামগঞ্জ – সিলেট – মৌলভীবাজার- হবীগঞ্জ- ব্রাহ্মণবাড়িয়া- নরসিংদী-ঢাকা

রুট ৪: জামালপুর – শেরপুর/ নেত্রকোনা – ময়মনসিংহ/ কিশোরগঞ্জ – গাজীপুর-ঢাকা

রুট ৫: নওয়াবগঞ্জ –রাজশাহী – নাটোর/পাবনা – সিরাজগঞ্জ – টাঙ্গাইল- গাজীপুর-ঢাকা

রুট ৬: বরগুনা-পটুয়াখালী/ ভোলা-বরিশাল – মাদারীপুর/শরীয়তপুর- ঢাকা

রুট ৭: পিরোজপুর – বাগেরহাট/ সাতক্ষীরা – খুলনা-গোপালগঞ্জ-ভাঙ্গা- ঢাকা

রুট ৮: মেহেরপুর – চুয়াডাঙ্গা/ কুষ্টিয়া/ যশোর- ঝিনাইদহ/নাড়াইল-মাগুরা-ফরিদপুর/রাজবাড়ী- মানিকগঞ্জ- ঢাকা