মামলা উত্তোলনের জন্য লাশের সৎকারে বাঁধা

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ মামলা উত্তোলনের জন্য ভাইয়ের মেয়ের লাশ সৎকারে বাঁধা দেয়ার ১১ ঘন্টাপর অবশেষে মুচলেকার মাধ্যমে সৎকারের পরিবর্তে লাশের দাফন করা হয়েছে। এ মুচলেকা নেয়ার জন্য প্রভাবশালীদের অমানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে দিনমজুর বলরাম মন্ডলকে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মাগুরা গ্রামে।

ওই গ্রামের দিনমজুর বলরাম মন্ডলের স্ত্রী অমেলা মন্ডল অভিযোগ করেন, তাদের অভাবের সংসারের সরলতার সুযোগ নিয়ে একই বাড়ির লক্ষি মন্ডল, নারায়ন মন্ডল, সুধীর মন্ডল ও অমৃত বালা তাকে কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে সম্প্রতি কৌশলে নিয়ে মাদারীপুরের পতিতা পল্লীতে বিক্রি করেন। সেখান থেকে দীর্ঘ একমাস পর তিনি পালিয়ে রক্ষা পান। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে উল্লেখিত চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর আসামি ও তাদের ভাড়াটিয়া লোকজনে মামলা উত্তোলনের জন্য তাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলো।

দিনমজুর বলরাম মন্ডল জানান, গত বুধবার (৩ এপ্রিল) তার বড় ভাই মিলন মন্ডলের কন্যা রিমা মন্ডল (২০) তার প্রেমিকের সাথে অভিমান করে বিষপান করে। মুর্মুর্ষ অবস্থায় তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে রিমা মারা যায়। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ওইদিন বিকেলে পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ গ্রহন করা হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে রিমার লাশ বাড়িতে এনে সৎকারের জন্য পারিবারিক শ্মশানে প্রস্তুতি চলছিলো। এসময় আসামিদের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রভাবশালী প্রদিপ সাহা, ইফতি দাস, বাদল বাইন, কালীপদসহ ৮/১০ জনে তাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে লাশের সৎকারে বাঁধা প্রদান করে। তাদের দাবি অমেলা মন্ডলের দায়ের করা মামলা উত্তোলন করা না হলে রিমার লাশের সৎকার করতে দেয়া হবে না। এ নিয়ে রাতভর চলে তুমুল হট্টগোল। বলরাম মন্ডলের অভিযোগে আরো জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্থানীয় প্রভাবশালী ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে উল্লেখিত প্রভাবশালীরা স্থানীয় মন্দির আঙ্গিনায় সালিশ বৈঠকে বসে। ওই বৈঠকে মামলা উত্তোলনের জন্য কাতে (বলরাম মন্ডলকে) বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগ করে। এতে সে রাজি না হওয়ায় তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে বলরাম মন্ডল মামলা উত্তোলনের জন্য মুচলেকা দিতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে তড়িঘড়ি করে রাত চারটার দিকে রিমার লাশের সৎকার না করে কবর দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে গৌরনদী থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয়দের কাছে লাশ দাফনে বাঁধা দেয়ার খবর পেয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান আকন সিদ্দিকুর রহমানকে বিষয়টি নিস্ফত্তি করার জন্য বলা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আকন সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ওসির ফোন পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলীকে বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে। বলরাম মন্ডলদের সাথে সমাজের লোকজনদের মামলা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো বলেও তিনি উল্লেখ করেন।