আগাম বোরো ধান কাটা শুরু

প্রেমানন্দ ঘরামী ॥  প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে রক্ষা পেলে চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। শষ্য ভান্ডার বলেখ্যাত বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, হিজলা, বানারীপাড়া, মেহেন্দীগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় ইতোমধ্যে আগাম রোপিত ইরি-বোরো ক্ষেতের ধানে ফুলের ছড়া বেড়িয়েছে। সদ্য প্রস্ফুটিত ধানের ছড়ার মিষ্টি ঘ্রাণে এখন মৌ-মৌ করছে ফসলের মাঠ। অধিকাংশ এলাকায় আর মাত্র ৪/৫ দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক ভাবে আগাম রোপিত ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হবে। তবে আজ রবিবার কয়েকটি এলাকায় আগাম রোপিত বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকেরা এখন ধান কাটার শ্রমিক খুঁজতে এবং কৃষক পরিবারের গৃহনীরা ধান মাড়াই ও শুকানোর জন্য খোলা তৈরীকে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে খুলনা, বাগেরহাট ও ফরিদপুর এলাকা থেকে ইতোমধ্যে ধান কাটার শ্রমিকেরা গৃহস্তদের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের বিভিন্ন এলাকার ইরি-বোরো ফসলের সবুজ মাঠ এখন ক্রমেই সোনালী হয়ে উঠেছে। কোনো কোনোস্থানে আগাম রোপিত বোরো ধান পাকতে শুরু করছে। আগামি ৪/৫ দিনের মধ্যেই পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। তবে জেলার গৌরনদী উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় স্বল্প পরিমানে ধান কাটা শুরু হয়েছে।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, ইরি-বোরো জমিতে এবার পোকার আক্রমন তেমন ছিলোনা। সময় মত সার, বীজ ও সেচকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন ফলেছে। কৃষক সাহানুর বেপারী, হেলাল মিয়া, আলাউদ্দিন ঘরামী জানান, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঠিক মনিটরিং, সার, ডিজেল সংকট না থাকা এবং গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে গত বছরের তুলনায় এ বছর অধিকাংশ জমিতে আশাতীত ফলনের আশা করা হচ্ছে। গৌরনদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, কোন প্রকার দুর্যোগ না ঘটলে এবার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বরিশালে ৫৯ হাজার ৯০৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও এবার দ্বিগুন জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেবাংশু কুমার সাহা বলেন, চলতি মৌসুমে বরিশালের সর্বত্র ইরি-বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কোথাও কোন প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে চলতি বছর বোরো ধানের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হবে বলেও তিনি আশা করছেন। এছাড়াও তিনি বোরো ধান সাধারনত ৮০ ভাগ পাকলেই কেটে ফেলার জন্যও কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যথায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।