সাভার ট্রাজেডি: বোনকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিল ভাই

মণীষ চন্দ্র বিশ্বাস ॥  সাভারে ধ্বসে পরা রানা প্লাজায় নিখোঁজ বোনকে খুঁজতে গিয়ে অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলো ভাই মাসুম তালুকদার (২২)। নিহত মাসুম বরিশাল নগরীর ২৮নং ওয়ার্ডের দিয়াপাড়া মহল্লার মোঃ শাহ আলম তালুকদারের পুত্র।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার সপ্তম তলার সুইনিং গার্মেন্টে চাকুরী করতো মাসুম ও তার বোন নুপুর বেগম। ভবন ধ্বসের সময় তারা দু’জনেই ডিউটিরত ছিলেন। মাসুম নিজে বেরিয়ে এসে বোনকে না দেখে তাকে উদ্ধারের জন্য আবার দৌড়ে ধ্বসে পড়া ভবনের মধ্যে ঢুকে বোনকে উদ্ধার করে নিজেই আটকে পড়ে সেখানেই তার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। বোন নুপুর ঢাকা এনাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শুক্রবার মাসুমের লাশ বরিশালের নিজ বাড়িতে পৌঁছলে স্বজনদের আহাজারিতে ওই এলাকার আকাশ বাতাস ভাড়ি হয়ে ওঠে। পুত্রের লাশ দেখে তার বৃদ্ধা মা হাজেরা বেগম ও বাবা শাহ আলম তালুকদার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

সন্ধ্যান মেলেনি গৌরনদীর জুয়েলের ॥ “বাবা মুই টাহা পয়সা কিছুই চাই না-খালি মোর পোলাডারে ফিরত আনি দাও”-এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ধানডোবা গ্রামের সোবাহান হাওলাদার। তার ছেলে জুয়েল হাওলাদার সাভারের রানা প্লাজায় পঞ্চম তলার গার্মেন্টসে কর্মরত ছিলো। এ দুর্ঘটনার পর থেকে তার কোন সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। জুয়েলের বন্ধু জামালপুরের জয়নাল আবেদীন মোবাইল ফোনে জানিয়েছে, ভবন ধ্বসের আধাঘন্টা পূর্বে জুয়েল ও সে একত্রে অফিসে প্রবেশ করেছে। ভাগ্যক্রমে জয়নাল গুরুতর আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে গেলেও জুয়েলের কোন সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। জয়নাল বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

দোয়া-মিলাদ ও প্রার্থনা ॥ রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় নিহতের রুহের মাগফেরাত ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় শুক্রবার বরিশাল নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলার মসজিদে দোয়া-মিলাদ, মন্দির, গীর্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

লাইফ শো দেখে দম্পত্তি অসুস্থ্য ॥ সাভার ট্রাজেডির ঘটনায় তৃতীয় দিনেরন্যায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সরাসরি লাইফ শো দেখে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন এক দম্পত্তি। মুর্মুর্ষ অবস্থায় তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের গৌরনদী পৌর এলাকার গেরাকুল মহল্লায়। ওই মহল্লার বাসিন্দা সুমন বেপারী ও তার স্ত্রী লাকী বেগম টিভিতে সাভার ট্রাজেডির লাইফ শো দেখে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।