স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাতের আধাঁরে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে বিষয়টি নিস্ফত্তি করার এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ওই বৈঠকে অভিযুক্তদের অভিভাবকদের কাছ থেকে জরিমানা বাবদ নগদ এক লক্ষ টাকা আদায়ও করা হয়েছে। সালিশ বৈঠকের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য একটি প্রভাবশালী মিডিয়া ম্যানেজের নামে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ঘটনাটি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাকাই নিরাঞ্জন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ওই স্কুলের শহীদ মিনারটি গত ১৩ এপ্রিল রাতের আধাঁরে গুড়িয়ে দিয়েছে অজ্ঞাতনামা দুস্কৃতকারীরা। বিষয়টি নিয়ে অতিগোপনে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয়রা অনুসন্ধান করতে থাকে। ঘটনার দীর্ঘদিন পর স্থানীয়রা ঘটনার সাথে জড়িত সাত জনকে চিহ্নিত করে। এ নিয়ে স্কুলের একটি কক্ষে গত ৫ মে সন্ধ্যায় এক সালিশ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে সালিশ বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে খাঞ্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকন সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা নুর আলম সেরনিয়াবাত, ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক অখিল দাস, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র দাস, ইউপি সদস্য সাইদুল হাওলাদার, স্থানীয় সমাজ সেবক মোহাম্মদ আলী হাওলাদার, বিপ্ল¬ব চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সালিশ বৈঠকে শহীদ মিনার ভাংচুরের কথা স্বীকার করে, উপজেলার মাগুরা-মাদারীপুর গ্রামের বিশ্বনাথ বেপারীর পুত্র উজ্জ্বল বেপারী, তালুকদার মাহামুদ আলমের পুত্র নাজমুল সাকিব, বাবুল হাওলাদারের পুত্র রাজিব হাওলাদার, আরজ আলী সরদারের পুত্র আরিফ সরদার, মোশারফ সন্যামাতের পুত্র আরিফ ইসলাম, চাঁন মিয়া সরদারের পুত্র সাইফুল ইসলাম, সিদ্দিক সরদারের পুত্র হাফিজুল। এরা সবাই ওই স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র। তাদের অভিভাবকদের সম্মুখে দেয়া স্বীকারোক্তিতে ওই সাতজনেই উল্লেখ করে, বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে ঘটনার দিন (গত ১৩ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে তারা সাতজন সহপাঠী বসে গল্প করছিলো। এ সময় শহীদ মিনারটি পুরাতন বলে শহীদ মিনারের পিলার তিনটি ভেঙ্গে ফেলে। তাদের স্বীকারোক্তি পেয়ে পরবর্তীতে ওই গ্রাম্য সালিশ বৈঠকে অভিযুক্ত সাত জনের অভিভাবকদের কাছ থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
জরিমানা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে খাঞ্জাপুর ইউপির চেয়ারম্যান আকন সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অভিযুক্ত ছাত্রদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মামলার দিকে যাওয়া হয়নি। বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি পুনর্নির্মাণ করে দেয়ার জন্য সালিশরা অভিযুক্ত সাত ছাত্রের অভিভাবকদের নির্দেশ দিয়েছে। এ ব্যাপারে গৌরনদী থানার ওসি আবুল কালাম বলেন, শহীদ মিনার ভাঙ্গার খবর পেয়ে গত ১৪ এপ্রিল আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সালিশ বৈঠক সম্পর্কে আমি অবহিত নই। তবে বিষয়টি থানার এস.আই মুজাহিদ তদন্ত করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।