বিরুপ প্রতিক্রিয়া : একদিকে ঘূর্নিঝড়ের মাইকিং অন্যদিকে উচ্ছেদ

আহমেদ আবু জাফর, ঝালকাঠি ॥  ঝালকাঠি শহরে ঘূর্নিঝড় মহাসেনের মাইকিং চলাকালে দুপুরে শহরের মসজিদ বাড়ি সড়কের দুটি অবৈধ স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযান করা হয়েছে। দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়া চলাকালে ঘর দুটি ভেঙ্গে ফেলার ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের মাঝে ক্ষোভ ও বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার দুপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিজের উপস্থিতিতে ও অফিসের লোকজন এ স্থাপনা দুটি ভেঙ্গে ফেলে। দু’ঘন্টা ব্যাপী অভিযানে স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলে পরিবার দুটির শিশুদের নিয়ে খোলা আকাশের নীচে বসিয়ে রেখে গেছেন। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত লোকজন এ্যাসিল্যান্ডসহ প্রশাসনের ওপর ধীক্কার দিয়েছে। আর এ কাজে ঝালকাঠি সদর থানা পুলিশকেও ব্যবহার করা হয়।
 
ঝালকাঠি শহরের মসজিদ বাড়ি রোডের বাসিন্দা মায়া বেগম জানায়, আমি ৩০-৩২ বছর ধরে মালিকের ঘরে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকছি। গতকাল রাতে ভূমি অফিসের একজন লোক এসে ঘর ভাঙ্গার মৌখিক কথা জানিয়ে যান এবং আজ বুধবার বেলা ১২টার দিকে এসে ভাঙ্গা শুরু করে। মায়া বেগম আরো জানান, আমি তাদেরকে ঘূর্নিঝড়ের কথা বলে দু’এক দিনের সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা সময় দিতে পারবেনা বলে ভাঙ্গা শুরু করে।

জেলা প্রশাসক শাখাওয়াত হোসেনকে ঘূর্নিঝড় চলাকালে অবৈধ স্থাপনা ভাঙ্গার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, এটা আমার বিষয় না সদর ইউএনওকে বলুন’। তখন বলা হয় আজকের দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার মধ্যে এ ধরনের অভিযানের যথার্থতা আছে কীনা জানকে চাইলে তিনি প্রশ্ন এড়িয়ে যান।

সূত্রমতে, ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন সড়কে সরকারী জমিতে বহুভবন রয়েছে। সেগুলো প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় ঐ স্থাপনাগুলো ভাঙ্গার সুযোগ না পেলেও এরা দরিদ্রদের স্থাপনাগুলোতে একের পর এক হানা দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি অফিসের এক শ্রেনীর দালাল কর্মচারীর মাধ্যমে সরকারী জমিতে থাকা প্রভাবশালীদের স্থাপনাগুলোর মালিকদের মাধ্যমে টুপাইস কামিয়ে তাদের ধারে কাছেও যান না।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের জেলা সম্পাদক আবু সাঈদ খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে বলেন, আজ এই দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার মাঝে একদিকে ৭ নাম্বার সতর্ক সংর্কেত অন্যদিকে মাথা গোঁজার ঠাই না দিয়ে ভূমি অফিসের লোকজনের এহেন উচ্ছেদ অভিযানের তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে ঘটনার সাথে জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্দের দাবী করেন। তারা কী কারনে আজ দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার মাঝে উচ্ছেদ অভিযানটি পরিচালনা করে সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করলো? এ ঘটনায় ঝালকাঠি নাগরিক ফোরামের পক্ষ থেকে ভূমি অফিসের ন্যাক্কারজনক কাজটিকে ধীক্কার জানানো হয়। সংগঠনটির আহবায়ক আহমেদ আবু জাফর তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অবৈধ দখলকারীরা ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে দখল করে আসলেও ৭ নাম্বার সিগনাল চলমান অবস্থায় ঘর ভাঙ্গার ঘটনা কতটা যৌক্তিক, সেটা ভাবনার বিষয়। এ ঘটনার সাথে জড়িতরা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তিনি তদন্তপূর্বক মানবতা বিবর্জিত এ কাজের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনেরও দাবী করেন। পৌর মেয়র আফজাল হোসেন রানা বিষয়টি শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন।