চার সিটির ফলাফল নিয়ে ফেসবুকে নানা মন্তব্য

প্রেমানন্দ ঘরামী ॥  দেশের চারটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনেই ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা মন্তব্য করেছেন দেশ-বিদেশের তরুন ও যুব সমাজ। একেক জনে একেক ধরনের মত প্রকাশ করেছেন বর্তমান সময়ের আলোচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তবে এসব আলোচনা ও সমালোচনার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সরকারের ভুলত্র“টি ধরিয়ে দেয়াসহ কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে।

ফজলুল বারী নামের একজন লিখেছেন, হেফাজতকে আদর করার সময় বলেছিলাম, এদের একটা ভোটও আওয়ামীলীগের বাক্সে পড়বেনা। অনেকে তখন মাইন্ড করেছিলেন! কিন্তু সরকার হেফাজতকে খুশি করতে গণজাগরণ মঞ্চকে চট্টগ্রামে যেতে দেয়নি। ঢাকায় গণজাগরণ মঞ্চ রাতের বেলা ভেঙ্গে দিয়েছে! সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে আটকে রেখেছে গোলাম আযমের মামলার রায়! এসবের কঠিন মাশুল তাদের এড়াবার সুযোগ ছিলোনা!! তার এ লেখায় কমেন্টস বক্স্ েহুমাইরা ফেরদৌস লিখেছেন, মানুষের কিছু মনে থাকেনা বারী ভাই, কিছুই না। আওয়ামীলীগ যদি সাঈদী-সাকাদের বিচার শেষ না করে তবে জীবনে কখনো আওয়ামীলীগকে ভোট দিবনা। আমরা মেকি পছন্দ করিনা। হয় দেশটা বাংলাদেশ থাকবে না হয় পাকিস্তান। মাঝামাঝি কোন কিছু আমি পছন্দ করিনা।

সুমানা নাজমুল হোসাইন নামের একজন কমেন্টস্ বক্সে লিখেছেন, মনে রাখবেন আজকের ভোটারদের একটা বড় অংশ হচ্ছে শহরবাসী, মধ্যবিত্ত যারা গণজাগরণ মঞ্চ এবং প্রগতিশীল ধ্যানধারনার প্রতি সহানুভূতিশীল, তাতেই ভোটের এ ফলাফল। গ্রামীণ জনগনের রায় আরো কঠিন হবে। সাঈফ রহমান নামের একজন প্রবাসী লিখেছেন বরিশালবাসী যা দেখাইলো তা মীরজাফরের বিশ্বাস ঘাতকতাকেও হার মানায়। তোমাগো লাইগা টিনের চালার লঞ্চ ঘাট, আবর্জনা ভরা নদীর পার আর সদর রোডের চিপা রাস্তাই ভাল। সবার পেটে ঘি সয় না, তোমরা মুড়ি খাওয়া লোক, সেটাই চিবাও। কাজী রূমকি নামের একজন লিখেছেন, আওয়ামীলীগ কারচুপিতে নয়, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। ফল যাই হোক, একে আওয়ামীলীগ স্বাগত জানাবে। নির্বাচনের ফল বড় কথা নয়; অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়াটাই বড় কথা। জনগণের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তিনি আরো উল্লেখ করেন, জাতি হিসেবে বাঙালী জাতি উন্নয়নে নয়, পরিবর্তনে বিশ্বাসী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয়, ধর্মান্ধতায় বিশ্বাসী। আজ বাঙালীর জয় হয়েছে। ধন্যবাদ বাঙালী জাতিকে। আশাকরছি ভবিষ্যতে তারা এর সুফল প্রতিটি পদক্ষেপেই ভোগ করবে। আর.এম মাসুম লিখেছেন, চার সিটি কর্পোরেশনেই বিজয়ী বিএনপির প্রার্থীরা। আওয়ামীলীগের জনসমর্থন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে বুঝতে পারছেন? এখনও সময় আছে আ’লীগের ভুল শুধরানোর।

কালুরঘাট সাইবার কেন্দ্র থেকে বেগম খালেদা জিয়ার নামে পোষ্ট করা লেখায় উল্লেখ করা হয়, মিডিয়ার মিথ্যাচারে অনেকে আতংকিত হয়েছেন। মিডিয়ায় ক্রমান্বয়ে বিএনপি ও জোটভুক্তদের নিয়ে বিষোদগার, মিথ্যা খবর প্রচার, সত্য খবর গোপন, একপেশে তথ্য প্রদান, এগুলো দেখে মানুষ হতাশ হয়েছেন। কী লাভ হয়েছে? লাভটা কী হল? আজ প্রমাণ হয়ে গেছে বাংলাদেশের মালিক কোন মিডিয়া নয়, কোন পরিবার নয়, নয় কোন দূতাবাস বা কোন প্রতিবেশি বৃহৎ রাষ্ট্র। বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশিরা। এই দেশকে নিয়ে কী করা হবে সেটা আখেরে তারাই ঠিক করবে ইনশাল্লাহ। বেসরকারী ভাবে ঘোষিত ফল অনুযায়ী আজ অনুষ্ঠিত চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের চারটিতেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। সকল ভোটারদের অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং সংযত হয়ে এই বিজয় উদযাপন করার জন্য অনুরোধ করছি। মিথ্যা অভিযোগে পোলিং এজেন্টদের গ্রেফতার করে আতঙ্ক সৃষ্টি, বিভিন্ন কেন্দ্র হতে পোলিং এজেন্টদের জোর করে বেড় করে দেয়া এবং ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা না দেয়া হলে এই বিজয়ের ব্যবধান আরো বৃহৎ হবার কথা ছিলো। তাই এই নির্বাচনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবী আরো দৃঢ় হলো। নির্বাচিত মেয়রগন তাদের নিজ নিজ নগরের উন্নয়নে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের জাতীয় নির্বাচনের জন্য তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন বলে আশা করছি।

কাজী রূমকি নামের এক বোন লিখেছেন, এখন সবাই নিশ্চিত যে, অন্যসব সিটি কর্পোরেশনের ব্যাপারে তেমন জানি না, তবে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ‘আলহাজ্জ্ব শওকত হোসেন হিরণের বিজয়ী হওয়াটা আকাঙ্খিত ছিলো।  পূর্ববর্তী বরিশালের সাথে পরবর্তী বরিশালের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য করেছেন হিরন। তিনি ব্যাপক উন্নয়ন কার করা সত্বেও বরিশালবাসী তাকে পুর্ণরায় নির্বাচিত করলেন না। হিরণ তাঁর কাজেরও পুরস্কার পেলেন না। একজন জনপ্রতিনিধি পর্যাপ্ত কাজ করার পরেও মানুষ যখন তাকে পুর্ণনির্বাচিত না করে, তখন সেটা খুব দুঃখজনক এবং মেনে নেয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এখন মনে হচ্ছে কোনো কাজ না করে লুটপাট করাই শ্রেয় ছিল। কেননা, তিনি তো নির্বাচিত হবেনই না; তার চেয়ে বরং ৫ বছর লুটপাট করে যা কামাই করা যায়, তাই সই। পরের বারতো আবার মেয়র হবেনই। জনগণ কখনো কি সচেতন হবে না? ভালো মানুষের কাজ, কথাবার্তাকে আদৌ কি মূল্যায়ণ করবে না?

ফজলুল বারী সরকারকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, সিটি নির্বাচন শেষ হলো, আল্লাহর ওয়াস্তে তাড়াতাড়ি এখন গোলাম আযমদের ফাঁসির ব্যবস্থা করেন। কেউ আবার বলার ‘চেষ্টা করিয়েন্না’ যে চার সিটির ভোটাররা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে! তিনি আরো উল্লেখ করেন, নির্বাচনের ফলাফল যা দেখছি তাতে একটি হরতালের সম্ভাবনা বাতিল হয়ে গেল বলে! এছাড়াও তিনি লিখেছেন, সিটি নির্বাচনে ভোটে জিতছে বিএনপি, নির্বাচন সুষ্ঠু করে জিতছে সরকার!

এসব লেখায় অসংখ্য লাইক ও কমেন্টস লিখে নানা মন্তব্য করছেন দেশের বিভিন্নস্থানসহ প্রবাসে থাকা বাংলাদেশী তরুন-যুবক ও সচেতন নাগরিকেরা। তাদের সকলেরই একটাই দাবি, চার সিটি নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনা করে আওয়ামীলীগের তৃণমূল পর্যায়ের ভুল ত্র“টিগুলো এখনই শুধরে নেয়া উচিত। নতুবা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব পরতে পারে।