ঘুমের জন্য সহায়ক ১১টি টিপস

ঘুম এবং খাদ্যাভাস একে অপরের পরিপূরক। কোন কোন খাদ্য আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে আর কোন কোন খাদ্য গ্রহণের ফলে আমরা সঠিক সময়ে নির্বিঘ্নে ঘুমোতে পারবো, তা জানা উচিত। কেন আপনার ভালো ঘুম প্রয়োজন? কারণ আমরা যতই ত্বকের যত্ন নেই না কেন, যদি ঘুমের ক্ষেত্রে অনিয়ম করি তাহলে চেহারায় সতেজ ভাব ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না। সুস্থতা ছাড়া সৌন্দর্য ধরে রাখা কঠিন। এখন তাহলে জেনে নেই কোন খাদ্য আমাদের ঘুমের জন্য সহায়ক আর কোনগুলো নয়।

১) ট্রিপটোফেন (Tryptophan) যুক্ত খাদ্য
দুধ এবং দুধের তৈরি বিভিন্ন খাদ্যে Tryptophan থাকে যা ঘুমের জন্য সহায়ক। বিশেষ করে গরম দুধ। এছাড়া বাদাম, ডিম, কলা, মধুতেও এই উপাদানটি রয়েছে যা আপনার ঘুমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে ।

২) কার্বহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাদ্য
শর্করা জাতীয় খাদ্যের সাথে দুধের তৈরি বিভিন্ন খাবারের সঠিক কম্বিনেশন (Combination) আপনার জন্য আরামদায়ক ঘুম এনে দিতে পারে। তবে অবশ্যই হালকা এবং অল্প পরিমাণে খেতে হবে। যেমন- একটু দুধ আর দইয়ের সাথে পাতলা মচমচে ২টি বিস্কুট সামান্য পনিরের সাথে ছোট একটি রুটি।

৩) ঘুমোতে যাবার আগে খুব অল্প পরিমাণে হালকা কিছু খাওয়া
যদি আপনি অনিদ্রা (Insomnia) তে ভোগেন তাহলে বিছানায় যাবার আগে খুব হালকা কোন খাবার হয়ত আপনার ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে। ঘুমোতে যাবার আগে কখনোই অনেক বেশি খাবার খাওয়া যাবে না। ঘুমোতে যাবার ঠিক আগে অনেক বেশি খাবার খেলে তা আপনার হজম শক্তি কে দুর্বল করে দিতে পারে। তাছাড়া এক ধরনের অস্বস্তি অনুভব করবেন যা উল্টো আপনার ঘুমকে আপনার কাছ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে।

৪) High Fat খাদ্য পরিহার করুন
গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে যারা প্রায়ই হাই ফ্যাট এবং ফাস্ট ফুড খান তাদের শুধু ওজন বৃদ্ধি নয় ওজনের কারণে একইসাথে ঘুমের সমস্যাও হয়ে থাকে। তাদের ঘুমের Cycle-টাই বদলে যায়।কাজেই খাদ্য তালিকা থেকে বার্গার আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই-এর মত খাদ্য বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৫) Caffeine থেকে সাবধান
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা অনেকেই কফি পান করি, যা আমাদের শরীর ও মনকে সতেজ করে তোলে। কিন্তু সন্ধ্যাবেলায় অথবা রাতের এক কাপ কফি হয়ত হুট করে মাঝ রাতে আপনার ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণ হতে পারে। এমনকি আপনার ঘুম দেরীতে আসার কারণ হতে পারে। কফির তুলনায় কম ক্যাফেইন (Caffeine) যেগুলোতে আছে সেগুলো হলো- চকোলেট, চা, Decaffeinated কফি। সঠিক সময়ে ভালো মত ঘুমোতে চাইলে আপনি যে সময়ে ঘুমোতে চান তার ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা আগে থেকে Caffeine এড়িয়ে চলুন।

৬) বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করুন
অনেক ওষুধেই Caffeine থাকে। যেমন- ব্যথানাশক এবং ওজন কমানোর ওষুধ, Diuretics (Urine-এর Flow বৃদ্ধি করে)। এরকম অনেক ধরনের ওষুধে এক কাপ কফির চাইতেও বেশি Caffeine থাকে। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ গ্রহণ করা একেবারেই ঠিক নয়, তারপরেও যদি আপনার কোন পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ কিনতে হয় তাহলে ওষুধের লেবেল পড়ে জেনে নিবেন যে সেটাতে এমন কোন উপাদান আছে কিনা যা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে।

৭) অ্যালকোহল (Alcohol) থেকে দূরে থাকুন
অনেকেই হয়ত বলবেন রাতে কিংবা সন্ধ্যায় Alcohol-এর কারণে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসে। কিন্তু এ কথাটাও মনে রাখতে হবে যে আপনাকে তাড়াতাড়ি ঘুম এনে দিলেও সেই ঘুম আরামদায়ক হবে না। একটু পর পর আপনার ঘুম ভেঙে যেতে পারে, উদ্ভট স্বপ্ন দেখতে পারেন, প্রচন্ড মাথা ব্যথা হতে পারে।

৮) অনেক মশলা যুক্ত কিছু খাবেন না
ঠিক ঘুমোতে যাবার আগেই পেট ভরে খাওয়া দাওয়া করা, অনেক মশলাযুক্ত কিছু খাওয়া- এই ধরনের অভ্যাস শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে।

যদি ঘুমোতে যান তাহলে আপনি এক ধরনের অস্বস্তি তে পরবেন যা আপনাকে ঘুমোতে দেবে না। বুকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।

৯) ঘুমোতে যাবার আগে প্রোটিন জাতীয় কিছু খাবেন না
প্রোটিন আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার একটি অপরিহার্য অংশ। তবে সময় বুঝে খেতে হবে। রাতের জন্য নিয়ম একটু আলাদা। প্রোটিন জাতীয় খাদ্য হজম হতে একটু সময় লাগে তাই অনেক বেশি প্রোটিন আছে এমন কিছু রাতে ঘুমোতে যাবার আগে না খেয়ে যেগুলো ঘুমের সহায়ক সেগুলো খাওয়া যেতে পারে। যেমন- এক গ্লাস হালকা গরম দুধ অথবা পাতলা মচমচে ২/৩ টি বিস্কুট।

১০) সঠিক সময়ে পানি পান করুন
আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যাবলি সঠিকভাবে যেন হয় এবং ত্বকের যত্নের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সারাদিনে আমাদের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা দরকার। কিন্তু রাতে ঘুমোতে যাবার আগে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করাতে আপনাকে কয়েকবার ঘুম থেকে উঠতে হবে। তাই সারাদিন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন এবং ঘুমোতে যাবার আগে পরিমাণটা কমিয়ে দিন। তাহলে নির্বিঘ্নে সারারাত ঘুমোতে পারবেন।

১১) ধূমপান এড়িয়ে চলুন
ভুলে যাবেন না যে Nicotine আর Caffeine-এর প্রভাব প্রায় একই রকম। তাই ঘুমের সময় হলে তখন ধূমপান করবেন না। এমনকি গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে সে সময়ও ধূমপান করবেন না।