ইভ্যালির অস্বাভাবিক ব্যবসা: আলেমগণ কী বলেন

সম্প্রতি ‘ইভ্যালী ইকমার্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে মিডিয়ায় এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। ইসলাম টাইমসের কাছেও অনেকে জানতে চেয়েছেন এবিষয়ে আলেমদের অভিমত কী।

এ বিষয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে কথা বলা হয় ঢাকার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকার মুদির মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সাথে। তিনি জানান, আমাদের দেশে ইভ্যালি যখন তার কার্যক্রম শুরু করে তখন মানুষ আমাদের কাছে মৌখিকভাবে এবং লিখিতভাবে জানতে চায়। মানুষ আমাদেরকে তাদের প্রতারণা সম্পর্কে যা বলে আমরা তাদের ওয়েব সাইটে এবং সাধারণভাবে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে সেগুলোর কিছু কিছু অংশ না পেয়ে প্রশ্নকারীদেরকে পাল্টা জিজ্ঞেস করি, তাদের প্রতারণাপূর্ণ বিজ্ঞাপনগুলো কোথায়। তারা আমাদেরকে তাদের ফেসবুকের লিঙ্ক দেন। আমরা সেখানে ইভ্যালির চটকদার বিজ্ঞাপনগুলো দেখতে পাই। মানুষ সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানার জন্যে ওয়েবসাইটে ঢুকে। ইকমার্সগুলোর পরিচয় ওয়েবসাইটে থাকে। তো ইভ্যালি তার কিছু পরিচয় ওয়েব সাইটে দিল আর ফেসবুকে দিল তার আরো কিছু চটকদার পরিচয়- এ থেকে বোঝা যায় যে তারা কিছু জিনিস কিছু মানুষ থেকে লুকাতে চায়। এটা শরীয়া পড়াশোনা করা ছাত্র কেন যে কোনো বিবেকবান মানুষই বুঝতে পারার কথা যে, দাল মে কুছ কালা হ্যায়।

সাধারণত আমাদের দেশের ইকমার্সগুলোর পদ্ধতি, গ্রাহক পণ্য কেনার পর মূল্য পরিশোধ করবে। আগে থেকে তাদের কাছে গ্রাহকের একাউন্টে টাকা জমা রাখার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে ইভ্যালি বিভিন্ন সময় গ্রাহকদেরকে চটকদার অফার করে প্রলোভন দেখায় এবং ইভ্যালির নিকট অগ্রিম টাকা জমা রাখতে বলে।

এর দৃষ্টান্ত হল এমন যে, আপনি একটা দোকানে কোনো কিছু কিনতে যাবেন। দোকানদার আপনাকে বলল, আমার এখানে পন্য কিনতে হলে আমার কাছে আগে আপনার টাকা জমা রাখতে হবে। সেই জমা টাকা থেকে আপনি অমুক তারিখে অত দিন পরে আমার মাধ্যমে পণ্য এই এই সুবিধাসহ ভোগ করবেন। বলা বাহুল্য, এমন কারবার সাধারণভাবে কেউ মেনে নিবে না। কিন্তু আশ্চর্য ইভ্যালি এই কাজটিই দেশে প্রকাশ্যে দিনের পর দিন করে যাচ্ছে। মাত্র ৫০ হাজার টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে কিভাবে একজন মানুষ দেশের লক্ষ লক্ষ জনগণের কোটি কোটি টাকা জমা করছে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রণালায়-অর্থমন্ত্রণালয়সহ এত এত নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার নাকের ডগায় প্রশ্ন তোলেন মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মদ আবদুল্লাহ।

মুফতি আবুল হাসান আবদুল্লাহর কথা হল, শরীয়তে জায়েজ কি নাজায়েজ সেই প্রশ্ন পরে। যে প্রতিষ্ঠান প্রথমেই একথা বলে, পণ্য কেনার আগে এত টাকা দিন। পরে পণ্য দিব। সেই কোম্পানি পরিস্কার এক ধাপ্পাবাজ কোম্পানি। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে এ কোম্পানির পদ্ধতি ভুল। শরীয়তও কখনো এজাতীয় কোম্পানির কারবারকে বৈধ বলে না। এই কোম্পানির সাথে লেনদেনকারী ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে, কোম্পানির অ্যাপ, ওয়েব সাইট, বিজ্ঞাপন পড়ে আমাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, এই কোম্পানির কার্যক্রম শরীয়তের দৃষ্টিতে কোনো ব্যবসার মধ্যে পড়ে না। এ কথা আমরা আরো এক বছর আগেই বলেছি, যোগ করেন আবুল হাসান মুহাম্মদ আবদুল্লাহ।

কি কারণে ইভ্যালির কার্যক্রমকে শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয বলা হবে এমন প্রশ্ন করলে মুফতি আবুল হাসান আবদুল্লাহ বলেন, ইভ্যালির অনেক কারবারেই রিবা তথা সুদ বিদ্যমান। অনেক ক্ষেত্রে তারা বলে, আমাদের কাছে টাকা জমা রাখার এত দিন পর অমুক কম্পানির পণ্য খরিদে আপনি এত টাকা ডিসকাউন্ট বা ক্যাশব্যাক পাবেন। প্রশ্ন হচ্ছে, অগ্রিম টাকা জমা নেয়ার এ কৌশল কেন? সাধারণ অর্থনীতির দৃষ্টিতে অনেকে এখানে প্রতারণার ফাঁক খুঁজে পাবেন। আর শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা এক প্রকার রিবা (সুদ)ও বটে। কারণ মানুষের টাকা নিজের কাছে ধার নিয়ে এর জন্য অতিরিক্ত সুবিধা দেয়ার চুক্তি করা হচ্ছে, যা সুস্পষ্ট নাজায়েয। তাদের কাজকর্মের প্রতারণার কথা যদি আপনি বাদও দেন তারপরও এখানে এই সুদ পাওয়া যাচ্ছে।

মন্তব্য করুন