আওয়ামী লীগে হাসানাতই, বিএনপিতে একাধিক

দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক মেরুকরণের আসন বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া)। দক্ষিণে নিজেদের রাজনীতির চাকা সচল রাখতে সব দলই এই আসনকে বেশ গুরুত্ব দেয়। আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। আগামী নির্বাচনেও তিনিই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন, তা প্রায় নিশ্চিত। তবে বিএনপিতে রয়েছেন একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী। আলোচনায় আছেন আব্দুস সোবহান ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন। মাঠে সক্রিয় জাতীয় পার্টির এস এম রহমান পারভেজ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাসেল সরদার মেহেদী।

দেশ স্বাধীনের পর এ আসন থেকে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আসনটিতে জয়ী হন শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর অনুপস্থিতিতে বিএনপির প্রার্থী আব্দুস সোবহানকে হারিয়ে এমপি হন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। ২০১৮ সালেও তাঁর দখলেই থাকে এই আসন। আসনটিতে এই পরিবারের প্রভাব দীর্ঘদিনের। আর হাসানাতেই ভরসা স্থানীয় আওয়ামী লীগের। তাই এবার দলের পক্ষে আর কেউ মনোনয়নও চাইছেন না।

অপরদিকে, একসময়ের শক্ত ঘাঁটি গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় বিএনপি এখন কোণঠাসা। একে তো মামলা, তার ওপর রয়েছে অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল। এর মধ্যেও আগামী নির্বাচনে আসনটি নিজেদের দখলে নিতে চাইছে দলটি। ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জহির উদ্দিন স্বপন। দলও সরকার গঠন করেছিল। আগামী নির্বাচনেও এই আসনের দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে তিনিই এগিয়ে। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আব্দুস সোবহান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গাজী কামরুল ইসলাম সজল।

টানা তিনবার নিজেদের দখলে থাকা আসনটিতে বেশ শক্ত অবস্থানে আওয়ামী লীগ। এ কারণে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া নিয়েও বেশ নির্ভার দলটি। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পার্বত্য চুক্তি কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী) এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘আমাদের অভিভাবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। শুধু এই আসন নয়, পুরো দক্ষিণাঞ্চলে তাঁকে ঘিরেই আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে। এ ছাড়া এই আসনে তিনিই আমাদের একক প্রার্থী।’

সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ ও সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড
অব্যাহত রেখেছে। আসনটিতে নৌকার প্রার্থী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন বিধায় নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা জোট বেঁধেছেন বলে নেতা-কর্মীরা দাবি করছেন। তাঁরা বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে নৌকা প্রতীকের বিজয় সুনিশ্চিত।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলায় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে বিএনপির। নেতা-কর্মীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ নেতাদের তেমন যোগাযোগ নেই। এ অবস্থায় দলীয় কর্মকাণ্ডে নেতা-কর্মীদের অংশ নেওয়া তো দূরের কথা, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই যেন কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে আগামী নির্বাচনে এই ‘অচলাবস্থা’ কাটাতে চায় দলটি। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন লাল্টু জানান, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপির জয় সুনিশ্চিত।

আব্দুস সোবহান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে গত ১৫ বছর মার খেয়েছি, মামলা খেয়েছি, অর্থ ব্যয় করেছি। নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিকূল অবস্থায় দলকে টিকিয়ে রেখেছি।’ তবে মনোনয়নের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম জানান, বড় দল হিসেবে একটু মতভেদ থাকতেই পারে। ভোটের আগে সব মতভেদ দূর হয়ে যাবে।

বড় দুই দলের বাইরে তেমন শক্তিশালী কোনো প্রার্থী না থাকলেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আলোচনায় এসেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাসেল সরদার মেহেদী। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আগৈলঝাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি। সাধারণ মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি করেছেন মোটরসাইকেল শোডাউনও। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করলে এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম রহমান পারভেজ। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন জাতীয় পার্টির ঢাকা দক্ষিণ শাখার সদস্য সেকেন্দার আলী।

মন্তব্য করুন