অরক্ষিত অবস্থায় পরে রয়েছে

সরেজমিন গিয়ে কথা হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাল মুহুর্তে পাক হানাদারদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের নিরব স্বাক্ষী কাঠীরা গ্রামের প্রমত্তা রানী অধিকারী (৬৫) সাথে। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, যুদ্ধ চলাকালীন সময় আগৈলঝাড়ার বিভিন্ন এলাকার প্রায় সহস্রাধীক মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ আশ্রয়স্থল ভেবে কাঠিরা গ্রামে আশ্রয় নিয়ে সংঘঠিত হতে থাকেন। এ খবর পেয়ে পাকসেনারা ১৯৭১ সালের ২০ মে সকালে কাঠিরা বাজারে দু’জন ভিক্ষুককে হত্যা করে পুরো গ্রামটি ঘেরাও করে রাখে। ওই সময় হানাদাররা কাঠিরা গ্রামে আশ্রয় নেয়া ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে ফায়ার স্কট (গুলিকরে) হত্যা করে। প্রমত্তা অধিকারী আক্ষেপ করে বলেন, এ্যামোনতো কথা ছিলোনা, মোগো ইজ্জত, স্বামী, বাপ, মা হারাইয়া এই দ্যাশটা স্বাধীন হইছে। হেইয়ারপরও মোরা এতদিনেও শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পাইনায়। মোরা মইরা গেছি না বাইচ্চা আছি হেই খবরও কেউ নেয়নায়।
একইভাবে আক্ষেপ করে জানালেন, শতিশ চন্দ্র রায় (৫৫)। তার পিতা শ্যাম কান্ত রায়কেও ওইদিন ফায়ার স্কট দিয়ে হত্যা করে পাক সেনারা। পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে শতিশ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশ স্বাধীন করেন। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পেড়িয়ে গেলেও আজও তার ভ্যাগে জোটেনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্বীকৃতি। এমনকি তার নামও অন্তরভূক্তি হয়নি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। তিনি আরো জানান, মুক্তিযোদ্ধার তালিকার নাম অন্তভূক্তির জন্য একাধিকবার জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেও কোন সুফল পাইনি। বর্তমানে পাঁচ সদস্যর পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি একটি জীর্ণ কুটিরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
হরেন মধূ (৭০) জানান, ১৩৩৮ সালের ৮ জৈষ্ঠ পাকসেনারা তাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ওইসময় তার পিতা নারায়ন মধূ, চাচা মনোরঞ্জন মধু, জগীন্দ্র মধূ, রনজিত মধূকে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা।
ওই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি মনোহর অধিকারী (৯০) জানান, পাক হানাদাররা কাঠীরা গ্রামের গীর্জার সামনের একটি ডোবায় গুলি করে ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধার লাশ ফেলেছিল। পরবর্তীতে এলাকাবাসী ওই ডোবার মধ্যেই লাশগুলো চাপা মাটি দিয়ে রাখেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এলাকার সর্বস্তরের মানুষের দাবি ছিল ওই বধ্যভূমির ওপর শহীদদের স্বরনার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করার। হিমাংশু কর্মকার (৬৮) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনের পর কতো সরকার আইলো আর গ্যালো কেউ শহীদদের স্মরন করেননি। মোরা এলাকাবাসি ভিক্ষা কইরা ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিসিডিবির সহযোগীতায় ১৯৯৭ সালের ২০ মে বধ্যভূমির ওপর একটি সৃতিস্তম্ভ নির্মান করেছি। বর্তমানে স্তম্ভটির গোড়ার অংশ ভেঙ্গে ডেবে গিয়েছে। যেকোন সময় স্তম্ভটি ধসে পরার আশংকা রয়েছে।
এলাকাবাসি ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বধ্যভূমিতে সরকারিভাবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানসহ শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।