গৌরনদীর দধি-মিষ্টির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন সুশীল ঘোষ

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও এ পেশাকে ধরে রেখেছি। দেশের ঐতিহ্য গৌরনদীর দধি-মিষ্টি-ঘি আর্ন্তজাতিক ভাবেও খ্যাতি অর্জন করেছে। ভোজন বিলাসী মানুষের কাছে গৌরনদীর দধি মিষ্টি ছাড়া ভোজন রসনা যেন অসমাপ্ত। ঐতিহ্যগত কারনেই ক্রেতা সাধারনের কাছে দধি মিষ্টি লোভনীয় সামগ্রী। চাহিদার সাথে সাথে গৌরনদীর কতিপয় ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে গুনগত মান খারাপ করে থাকে। তারই মধ্যে সুনামকে ধরে রাখতে অধিক মুনাফার কথা চিন্তা না করে গৌরনদীর ঐতিহ্য দধি মিষ্টি তৈরী করে আসছি। বর্তমানে ভালো জিনিস তৈরী করা খুবই কষ্টকর। কথাগুলো বলছিলেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সুনামের সহিত ব্যবসা পরিচালনাকারী বরিশালের গৌরনদী উপজেলার শ্রী গুরু মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্তাধীকারী সুশীল ঘোষ (৭৪)। সুনামের সহিত ব্যবসা পরিচালনা করায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলার দীর্ঘ মেয়াদী সেরা করদাতা হিসেবে সুশীল ঘোষ পদক প্রাপ্ত হন। গৌরনদীর ঐতিহ্য দধি, মিষ্টি, ঘি’র শুনাম শুধু বাংলাদেশেই নয় বহিবিশ্বেও এর কদর রয়েছে। বহুকাল থেকে দধি, মিষ্টি, ঘি’র জন্য গৌরনদী বিখ্যাত।


জানা গেছে, প্রায় দু’শ বছর পুর্বে ডাওরী ঘোষ নামে এক ঘোষ গৌরনদীতে তৈরী করেন এ লোভনীয় খাবার। পরবর্তীতে গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী ভোজ্যপন্যের ধারা ধরে রাখার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন সুশিল ঘোষ। পর্যায়ক্রমে গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী ভোজ্যপণ্যের ধারা ধরে রেখেছিলেন সুশীল ঘোষ, গেদু ঘোষ, সচিন ঘোষ ,জীবন ঘোষ, ঝন্টু ঘোষ ও দিলীপ ঘোষ। তারা ঐতিহ্যবাহী দধি, মিষ্টি, ঘি তৈরী করে সারাদেশে সরবারাহ করে সুনাম কুড়িয়েছেন। পরে তাদের পাশাপাশি কিছু কিছু মুসলিম ব্যবসায়ী ঘোষ কারিগরের সহয়তায় এ ব্যবসা শুরু করে সুনাম ধরে রাখেন। সারাদেশে গৌরনদীর দধি, মিষ্টি, ঘি’র যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। বিবাহ অনুষ্ঠান, বৌ-ভাত, জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং বিভিন্ন তদবিরে দধির জন্য দুর-দুরান্ত থেকে লোকজন আসেন গৌরনদীতে। প্রতিদিন শত শত মন দধি, মিষ্টি এখান থেকে ঢাকা-বরিশাল, চট্রগ্রাম, খুলনা, দিনাজপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে চালান দেওয়া হয়। দেশের বাইরে ও  ব্যাপকভাবে গৌরনদীর দধি, মিষ্টি, ঘি’র সুনাম রয়েছে।

গৌরনদীর দধির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ১০/১৫ দিনেও স্বাভাবিক আবহাওয়ায় নষ্ট হওয়ায় সম্ভাবনা নেই। যে কোন যানবাহনে সহজে বহন করা যায়। শুকনো মিষ্টি ১ মাসেও নষ্ট হয় না। ঘি ১ বছরেরও নষ্ট হয় না বলে সুশীল ঘোষের পুত্র বলরাম ঘোষ জানান।

বলরাম ঘোষ বলেন, বাবার (সুশীল ঘোষের) পাশাপাশি ১৫ বছর ধরে আমি নিজেকে এ পেশায় জড়িয়ে নিয়েছি। বয়স বেড়ে যাওয়ায় বাবা অসুস্থ্য থাকায় গত দশ বছর থেকে আমিই বাবার পেশাকে আকঁড়ে রেখেছি। তিনি আরো বলেন, আমার বাবা সুশীল ঘোষ ১শ’ ২০ প্রকারের লোভনীয় মিষ্টি তৈরী করতে পারেন। তবে বর্তমানে ১৫ প্রকারের মিষ্টান্ন দ্রব্য তৈরী করা হয়। এরমধ্যে দধি, চমচম, কালোজাম, শুকনো মিষ্টি, লাদেন মিষ্টি (বড় রসগোল্লা) রসমালাই, ছানার সন্দেশ, ক্ষীরপুরী, মাওয়া, ছানার জিলাপিই হচ্ছে উল্লেখযোগ্য।

ঘোষেরা জানান, ১৯৭৪ সালে ঘোষেদের জন্য রেশম পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর থেকে সরকারি কিংবা বেসরকারি ভাবে সহযোগিতা পাচ্ছে না গৌরনদীর মিষ্টি, দধি প্রস্তুতকারীরা। ব্যবসায়ীরা চড়া দামে দুধ ক্রয় করে ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর, লাকরি খরিদ, কর্মচারিদের বেতন, টালীসহ বিভিন্ন দ্রব্য ক্রয় করে তাদের ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পরেছে।

ব্যবসায়ীরা আরো জানান, গৌরনদীর ঐতিহ্যবাহী দধি, মিষ্টি, ঘি’র ঐতিহ্য ধরে রেখে ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ বিতরন, ডেইরী ফার্ম স্থাপন এখন জরুরি হয়ে পরেছে। আর এ জন্য তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।