ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের

তিনি ওই গ্রামের কাজী আব্দুল মাজেদের জ্যেষ্ঠপুত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন করেন। ওই বছরের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে অনুষ্ঠিত হরতাল কর্মসূচীতে পিকেটিং করতে গিয়ে তিনি গ্রেফতার হয়ে কারা বরন করেন। কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হয়ে ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি তৎকালীন সময়ের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমদ্দিন কর্তৃক উর্দুকে পাকিস্তানে একামাত্র রাষ্ট্রভাষার ঘোষনা দিয়ে পল্টনে বক্তব্যে রাখার পর নতুন করে ভাষা আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি সর্বদলীয় সভার আয়োজন করেন। ওইসভায় তাকে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক করা হয়। ’৫২-র ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় তৎকালীন পাকিস্তানের প্রশাসন তার ওপর হুলিয়া জারি করা হয়। ২০০৬ সালের ১৯ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক কাজী গোলাম মাহবুব ঢাকার ধানমিন্ডস্থ বাসায় শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। ২০ মার্চ তার জন্মভূমি গৌরনদীর লাখেরাজ কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়।

ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের পিতা কাজী আব্দুল মাজেদ তাদের বাড়ির সম্মুখেই ১৯৫১ সালে লাখেরাজ কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছর পরেও ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজো নির্মিত হয়নি কোন শহীদ মিনার। ভাষা সৈনিকের গ্রামে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ধর্ম মন্ত্রনালয়ের পরিচালনায় ইসলামী মিশন। ১৯৯৪ সাল থেকে মিশন প্রধান হিসেবে কর্মরত ডাঃ আব্দুল মান্নান জানান, মিশনের উদ্যোগে কোন সময়ই শহীদ মিনার নির্মান করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়নি। একই অবস্থা কসবা নূরানী মাদ্রাসা, কসবা ইসলামী প্রি-ক্যাডেট স্কুল, রামসিদ্ধি ও বড় কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
ওই গ্রামের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র হাফিজুর রহমানের কাছে ভাষা সৈনিকের গ্রামে কোন শহীদ মিনার না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সে ক্ষোভের সাথে বলে, কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশন প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে, পোষাক, টিফি ও শিক্ষা উপকরন বিতরন করেন কিন্তু তারা ভাষা সৈনিকের সমাধীর পার্শ্বের স্কুলে আজো কোন শহীদ মিনার নির্মানের উদ্যোগ গ্রহন করেননি। আর এ কথা কেউ কখনও ভেবেও দেখেননি। লাখেরাজ কসবা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী ছাদিয়া ও পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রী হাফিজা খানমসহ একাধিক ছাত্র-ছাত্রীরা জানায়, ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিবছর তারা কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মান করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে পরবর্তীতে তা ভেঙ্গে ফেলে দেয়।

ভাষা সৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব ফাউন্ডেশনের গৌরনদী উপজেলা শাখার সহসভাপতি কাজী নুরুল মতিন মাসুকের কাছে ভাষা সৈনিকের সমাধীর পার্শ্বে এখনো কেন শহীদ মিনার নির্মান করা হয়নি এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুলের নতুন ভবনের সম্পত্তি নির্ধারনের জটিলতায় এখনো শহীদ মিনার নির্মান করা হয়নি। তবে অচিরেই শহীদ মিনার নির্মান করা হবে।


ওরা ১১ জন

লাখেরাজ কসবা গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুরে যাওয়া পথে মান্নান বেপারী বাড়ির পার্শ্বে চোখে পরে ওরা ১১ জন কিশোর কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওই গ্রামের হাফিজুর রহমান নয়ন বলে, ভাষা সৈনিকের গ্রামের আমাদের জন্ম। অথচ সেই গ্রামেই কোন শহীদ মিনার নেই। এ বছর আমরা ১১জন বন্ধু নিজ উদ্যোগে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মান করছি। তারা ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আরো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানায়।