খাদ্য ঘাটতি ও মংগা মোকাবেলায় কাসাবার গুরুত্ব অপরিসীম

কাসাবা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত কর্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ কন্দ জাতীয় ফসল। খাদ্য হিসেবে কাসাবার পরিস্কার টিউবার সরাসরি বা সেদ্ধ করে অথবা কাঁচাও খাওয়া যায়। কাসাবা থেকে উন্নতমানের সাদা আটা পাওয়া যায় যা দিয়ে রুটি, বিস্কিট, চিপস্সহ নানাবিধ খাবার তৈরী করা সম্ভব। এছাড়াও সাগু, বিয়ার, পোলট্রিফিড তৈরিসহ, কাগজ, আ্যডহেসিব, স্টাচ, এলকোহল শিল্পে কাসাবা প্রচুর পরিমানে ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান খাদ্য এবং উৎপাদনের দিক থেকে গম, ধান, ভুট্টা ও গোলআলু পরই কাসাবারস্থান। অতিসম্প্রতি বহুল আলোচিত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন, প্রতি ইঞ্চি জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষে কাসাবা হচ্ছে একটি সম্ভাবনাময় ফসল। আর এটা নতুন কোন ফসল নয়। বাংলাদেশে কাসাবা শিমুল আলু নামে পরিচিত। টাঙ্গাইলের মধুপুর, ভাওয়ালের গারোপাহার ও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অনেক আগ থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে কাসাবার চাষাবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দু’জাতের কাসাবার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে এবং এগুলো ফিলিপাইন থেকে আসছে। একটি লাল অপরটি সাদাটে। কাসাবা হচ্ছে উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ কন্দ জাতীয় ফসল। দেশে ক্রমবর্ধমান খাদ্য খাটতি ও মংগা মোকাবেলায় কাসাবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কাসাবাসহ যেকোন কৃষি কাজের জন্য পূর্ব শর্ত হচ্ছে সঠিক পদ্ধতিতে সুষম সার ব্যবহার করা। এতে উৎপাদন খরচ কমে কিন্তু ফলন বাড়ে। কাসাবা চাষে কোন ঝামেলা নেই বললেই চলে। এ চাষে অল্প পরিশ্রমে অধিক ফলন পাওয়া যায়। কাসাবা একটি উজ্জল সম্ভাবনাময় অর্থকারী ফসল। কাসাবা নিয়ে ইতিপুর্বে অনেক গবেষনা হয়েছে, অতিসম্প্রতি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর পালরদী গ্রামের তরুন গবেষক মোঃ আহছান উল্লাহ সল্প পরিসরে কাসাবা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন।

Kasaba Tree
বরিশাল অমৃত লাল দে আয়ূর্বেদ ও ইউনানী মহাবিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা আয়ূবের্দ মেডিসিন এন্ড সার্জারি (ডি.এ.এম.এস)’র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোঃ আহছান উল্লাহর মতে, কাসাবা চারা রোপনের ৬ মাস পর থেকে টিউবার সংগ্রহ করা যায় এবং সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে হেক্টর প্রতি ২০/২৫ টন কাসাবা উৎপাদন করা সম্ভব। কাসাবা চাষের জমিতে যাতে করে বন্যা অথবা বৃষ্টির পানি জমে থাকতে না পারে সেজন্য নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করতে হবে। কাসাবা যদিও খরা সহনশীল গাছ তথাপিও বারবার খরার ফলে ফলন কমে যায়। তিনি আরো জানান, খরা মৌসুমে সপ্তাহে ২০/২৫ দিন পানি পেলে ফলন ৪৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়।

কাসাবার রোগ ও পোকা মাকড়ঃ কাসাবা সাধারনত যে সব রোগে আক্রান্ত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কাসাবা স্কেল, প্রিপস মাইট হর্নওয়াম, হোয়াইট গ্রাব, উইপোকা নেমাটোড ও ইদুঁর। তবে সঠিক ভাবে রোগ নির্ণয় করে ঔষধ প্রয়োগ করলে এ সব রোগ ও পোকা দমন করা সম্ভব। কাসাবা জৈব প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করলে রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ  কম হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কাসাবার বংশ বিস্তারঃ কাসাবার বংশ বিস্তার সাধারনত ষ্টেম কাটিংয়ের মাধ্যমে করা হয়। ৮ থেকে ১২ মাসের ২/৩ সেন্টিমিটার পুরত্ববিশিষ্ট রোগ ও পোকামাকড় মুক্ত কান্ড চারা তৈরির জন্য আদর্শ। ফেব্র“য়ারি ও মার্চ মাসে রোগ মুক্ত কান্ড সংগ্রহ করে ধারালো ছুড়ি অথবা ডাবল সিকেসা দিয়ে এক বা দুই পর্ব বিশিষ্ট ২০/৩০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের কান্ড পলি ব্যাগে বা সয়েল বেডে ৫ সেন্টিমিটার গভীরতায় ৪৫ ডিগ্রী কোনে দক্ষিনে হেলিয়ে রোপন করতে হয়। আমাদের দেশে কৃষি দ্রব্য উৎপাদনে যে সম্ভাবনা রয়েছে তা বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে বাস্তবায়নে তেমন আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি বরং উৎপাদন ধীরে ধীরে নিন্মগামী হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদী লাভজনক এ কাসাবার গুনাগুন সম্পর্কে তৃণমূল পর্যায়ের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে চাষীদের উৎপাদনের উদ্দিপনা সৃষ্টি হবে। কাসাবা চাষ সমগ্র বাংলাদেশে সম্প্রসারণ করে কৃষি ক্ষেত্রে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের বৃহত্তর ভূমিহীন শ্রেণীকে উৎপাদন কাজে নিয়োজিত করে শ্রেণী বিভক্ত সমাজে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর এ জন্য প্রয়োজন কাসাবা চাষীদের প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও উৎপাদনের অনুকুল পরিবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। কাসাবা চাষের মাধ্যমে এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। সমগ্র বাংলাদেশের আবহাওয়া কাসাবা চাষের জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী। কৃষি ও শিল্পভিত্তিক এই কাসাবা উৎপাদনের মাধ্যমে মংগা প্রবন জনপদের হতদরিদ্র ও গ্রামীণ জনগণের বাড়তি আয়, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, সল্প পুঁজিতে কুটির শিল্পের প্রসার তথা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে এ পন্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার একটি উজ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।