নিহত সাংবাদিকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ ॥ মামলা দায়ের ॥ সর্বত্র শোকের ছায়া

কাউন্সিলর পদপ্রার্থী মনির হোসেন রাঢীর (৩৫) লাশ নিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বরিশালসহ বিভিন্ন উপজেলার সাংবাদিকরা। বিক্ষোভ শেষে বরিশাল প্রেসক্লাবের সম্মুখ সহকর্মী সাংবাদিকের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে ওইদিন বিকেলে মনিরের ভাই জসিম উদ্দিন খোকা বাদি হয়ে ৫ জনকে আসামি করে মুলাদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত সাংবাদিকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ ॥ মামলা দায়ের ॥ সর্বত্র শোকের ছায়াসূত্রমতে, দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর মাইনুল হাসান সড়কস্থ প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক মনির হোসেন রাঢ়ীর মরদেহ নিয়ে আসা হয়। এসময় সেখানে এ হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। সহকর্মী কলমযোদ্ধারা তাদের সহকর্মী সাংবাদিকের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর লাশ নিয়ে নগরীতে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে প্রেসক্লাবের সম্মুখে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি এস.এম ইকবাল, সাধারন সম্পাদক লিটন বাশার, সাবেক সাধারন সম্পাদক নুরুল আলম ফরিদ, জিএম বাবর আলী, মুরাদ আহমেদ, কাজী আবুল কালাম আজাদ, কাজী মিরাজ প্রমুখ। সহকর্মী কলমযোদ্ধার লাশ কাঁধে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে শোকাবহ সাংবাদিকরা তাদের বক্তব্যে অনতিবিলম্বে সাংবাদিক মনিরের হত্যাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক ফাঁসির দাবি করেন।

নিহত সাংবাদিক মনির হোসেনর চাচাতো ভাই এডভোকেট আব্দুল মালেক বলেন, মঙ্গলবার রাতে মনিরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মাওয়া ফেরিঘাটে পৌঁছলে রাত ১টা ২০ মিনিটের সময় মনির মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাংবাদিকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ ॥ মামলা দায়ের ॥ সর্বত্র শোকের ছায়াপারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মুলাদী পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মরহুম সুলতান আহম্মেদের পুত্র মনির হোসেন রাঢ়ী। মনিরের চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন রাঢ়ীর সাথে তুচ্ছ ঘটনার জেরধরে প্রতিবেশী দলিল উদ্দিন মাস্টারের দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিলো। অতিসম্প্রতি আলাউদ্দীন রাঢ়ী প্রতিবেশীদের চলাচলের কোন পথ না রেখে ঘর নির্মান কাজ শুরু করে। বিষয়টি দলিল উদ্দিন মনিরকে অবহিত করে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মনির ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলাউদ্দিনকে পথ (রাস্তা) রেখে ঘর নির্মানের জন্য সাংবাদিক মনির হোসেন অনুরোধ করেন। এসময় আলাউদ্দিন ও মনিরের মধ্যে বাকবিতন্ডা বাঁধে। একপর্যায়ে আলাউদ্দিনের সন্ত্রাসী পুত্র রাসেল ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে সাংবাদিক মনিরকে গুরুতর জখম করে। স্থানীয়রা মুর্মুর্ষ অবস্থায় মনির হোসেনকে উদ্ধার করে প্রথমে মুলাদী ও তাৎক্ষনিক বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক মনিরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। ওইদিন (মঙ্গলবার) রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য এ্যাম্বুলেন্সযোগে মনির হোসেনকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়া হয়। পথিমধ্যে মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় পৌঁছলে রাত ১ টা ২০ মিনিটের দিকে সাংবাদিক মনির মৃত্যুরকোলে ঢলে পরেন।

এ ব্যাপারে মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আমিরুজ্জামান আমিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাংবাদিক মনিরকে হত্যা ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে (যার নং-২২)। মামলার আসামিরা হচ্ছে-আলাউদ্দিন রাঢ়ী, সোহেল, রাসেল, মোতালেব ও আলাউদ্দীনের স্ত্রী আলেয়া বেগম। আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের জোর প্রচেষ্টা চলছে বলেও তিনি উল্লেখ্য করেন।

সাংবাদিক মনির হোসেনের মৃত্যুর খবরে বরিশালসহ মুলাদী, গৌরনদী, বাবুগঞ্জ, উজিরপুর, আগৈলঝাড়া, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জ, মেহেন্দীগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। পৃথক ভাবে ওইসব উপজেলায় ও বাংলাদেশ গ্রামীণ সাংবাদিক সংগঠন বরিশাল বিভাগীয় কমিটি এবং Gournadi.com’র উদ্যোগে সাংবাদিক মনির হোসেনের হত্যাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।