দক্ষিণাঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে দুস্থ পরিবারে চরম দুর্ভোগ

বর্তমানে অসহনীয় শীত অনুভূত হওয়ায় দুস্থ পরিবারের লোকজন চরম দুর্ভোগের মধ্যে পরেছেন। এর সাথে সাথে বেড়ে গেছে জ্বর, শ্বর্দি, কাশির মতো ঠান্ডাজনিত রোগ। হঠাৎ করে শীত জেঁকে বসায় ভাটা পরেছে পৌর নির্বাচনের প্রচার প্রচারনা ও গণসংযোগে। সেই সাথে গত কয়েকদিন ধরেই দিনের তাপমাত্রাও কমতে শুরু করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কয়েকদিন ধরে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। এতে শীতের তীব্রতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মাঝে মধ্যে মৃদু বাতাসের কারনে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে গেছে। শীত বাড়ার সাথে সাথে দরিদ্র ও দুস্থ মানুষের দুর্ভোগও বেড়ে চলেছে। হঠাৎ করে শীতের প্রকোপে সবার শরীরে উঠেছে শীতের ভাড়ি পোশাক। প্রচন্ড শীতের কারনে নগরীসহ উপজেলার দোকানপাটে দেখা গেছে গরম কাপড় ও শীতবস্ত্র কেনার হিড়িক। এ সুযোগে কতিপয় শীত বস্ত্র বিক্রেতারা অধিক মুনাফার লোভে প্রতিটি শীত বস্ত্রের দাম হাকিয়েছেন আকাশ ছোঁয়া। ফলে মধ্য ও নিন্মবিত্তদের ভাগ্যে মার্কেট ও দোকানের শীত বস্ত্র না জুটলেও তারা ফুটপাতের কম দামের শীত বস্ত্র ক্রয় করে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারো দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার প্রায় ১০ লাখ দুস্থ পরিবারকে শীতবস্ত্রের অভাবে পোহাতে হচ্ছে শীতের অসহনীয় কষ্ট। অর্থাভাবে শীত বস্ত্র ক্রয় করতে না পেরে ওইসব পরিবারের সদস্যরা একত্রিত ভাবে সন্ধ্যার পর পরই আগুন জ্বালিয়ে চালাচ্ছেন শীত নিবারনের চেষ্টা। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর শীতের দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্রতর হতে পারে। এ অবস্থায় সরকারী ও বেসরকারীভাবে দুস্থ মানুষদের জন্য শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করা না হলে গরিব দুস্থদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হবে। 

জেলার গৌরনদী উপজেলার উত্তর বিজয়পুর গ্রামের বাসিন্দা ইমতিয়াজ আহম্মেদ কোরাইশী বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শুরুতেই বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার গৌরনদীতে শীতবস্ত্রের দাম বেশ চড়া। শীতের পোশাকের দাম বাড়ায় নিন্ম ও স্বল্পআয়ের মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। সবেচেয়ে বেশি ভিড় ছিল নগরীর চক বাজার মার্কেটে। ক্রেতারা জানিয়েছেন, এই মার্কেটে তুলনামূলক ভাবে কম দামে সব ধরনের শীতবস্ত্র পাওয়া যায়। এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, শীতের নতুন কাপড়ের আমদানি কম, তাই দাম একটু বেশি। তবে আগামি ২/৩ দিনের মধ্যে শীতবস্ত্রের নতুন মালামাল আসবে বলেও তারা উল্লেখ করেন।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর লেপ-তোষক তৈরির মজুরি বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পূর্বে বাজারে একটি ডাবল লেপ গার্মেন্ট তুলা দিয়ে তৈরি করতে খরচ পড়ছে ৫’শ টাকা, কাপাস তুলার লেপ ৭’শ টাকা। বর্তমানে ৭ থেকে ৮’শ টাকার নিচে কোন লেপ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছেনা। টরকী বন্দরের ধুনক জাকির হোসেন জানান, শীতের আগমনে লেপ-তোষক তৈরির কাজ বেড়ে গেছে। গত ৩-৪ দিন ধরে শীত জেঁকে বসায় সন্ধ্যার পর পরই বরিশালের রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কাজ না থাকলে আর কেউ বাহিরে অবস্থান করছেন না। অধিক শীতের কারনে শীত বস্ত্রের অভাবে অসহায় হয়ে পড়েছেন জেলার টরকী, নলচিড়া ও পয়সারহাট গুচ্ছ গ্রামের দুস্থ পরিবারের সদস্যরা। এরা সারা বছরই অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটায়, শীত বস্ত্র ক্রয়ের মতো সামর্থ্য এদের নেই। তাই প্রতি বছরই এদের সইতে হয় অসহ্য শীতের কঠিন কামড়। আর ভুগতে হয় শীতজনিত নানা রোগে।