সবজি চাষ করে সুখ লালের সংসারে লেগেছে সুখের ছোঁয়া

পরিজন নিয়ে কোন একমতে যেমন নুন আন্তে পান্তা ফুরাতো এমনি করেই চলছিলো সুখ লাল হালদারের সংসার। আন্তপ্রত্যয়ী সুখ লাল স্বপ্ন দেখতেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। অবশেষে তার সেই স্বপ্ন পুরন হয়েছে নিজের একাগ্রতায় (আগ্রহে)। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখে দীর্ঘ ১৫ বছর পূর্বে তিনি বাড়ির পার্শ্বের একটি জমিতে শুরু করেন সবজি চাষ। স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে ও নিজের মনবল দিয়ে মাত্র অল্পদিনেই সবজি চাষ করে তা অধিক মুনাফায় বিক্রি করে সুখ লাল তার অভাবের সংসারে সুখের ছোঁয়া লাগিয়েছেন। আজ তিনি এলাকার একজন সফল সবজি চাষী হিসেবে সবার কাছে পরিচিত।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত জল্লা ইউনিয়নের কারফা গ্রামের প্রিয়লাল হালদারের পুত্র সুখলাল হালদার (৪৫)। স্ত্রী, ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানকে নিয়েই সুখ লালের সংসার। সুখ লাল হালদার জানান, প্রথমতো সবজি চাষ করার মতো কোন অর্থ ছিলোনা তার কাছে। এ সময় তার স্ত্রীর পরামর্শে এনজিও থেকে ঋণ উত্তোলন করে বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ৪০ শতক জমিতে সে সবজি চাষ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। ওইসময় স্থানীয় কৃষি অফিসারদের কাছে সবজি চাষ করার পরামর্শ চান। কৃষি অফিসাররা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে মাটি পরীক্ষা করে ওই মাটি সবজি চাষের জন্য প্রজোয্য নয় বলে জানান। এতে মনবল হারায়নি কঠোর পরিশ্রমী সুখ লাল। অর্থসংকটে নিজেই দিনভর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মাটিকে সবজি চাষের জন্য উপযোগী করে তোলেন। এরপর থেকে তিনি ওই জমিতে পর্যায়ক্রমে তিনি আগাম লাল শাক, ওলকপি, ফুলকপি, করল্লা, বাঁধাকপি ও টমেটোরর চাষ শুরু করেন। গৌরনদী উপজেলার টরকীসহ সাহেবেরহাট বাজার থেকে বীজ ক্রয়ের পর চারা করে জমিতে রোপন করে মাত্র অল্পকয়েকদিনের মধ্যেই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি প্রতিটি সবজির বাম্পার ফলন ফলান।

সুখ লাল হালদার আরো জানায়, বর্তমানে তার সবজি ক্ষেতে ওলকপি রয়েছে। এ কপি চাষে তার সর্বমোট খরচ হয়েছে ১১ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে তিনি ২৫ হাজার টাকার কপি বিক্রি করেছেন। জমিতে আরো যে পরিমান কপি রয়েছে তা আরো তিনি ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন। বাজারে কপির যথেষ্ট চাহিদা থাকায় ভাল দামও পাচ্ছেন। গৌরনদীর ভুরঘাটা, টরকী বন্দর, আগৈলঝাড়া, উজিরপুরের কাঁচা মালের আড়ৎদাররা জমিতে এসে সুখলালের জমির সবজি ক্রয় করে নিয়ে যায়। শুধু সবজি চাষ করেই ক্ষ্যান্ত থাকেননি আত্মপ্রত্যয়ী সুখ লাল। অভাবী সংসারের সুখের জন্য তিনি ৫ বছর পূর্বে সবজি চাষের জমির চারিপার্শ্বে মাটি কেটে ঘের নির্মান করে চিংড়ি মাছের চাষও শুরু করেছেন। এছাড়াও তিনি ওই জমির পার্শ্বেই আরেকটি জমিতে শুরু করেছেন আলু চাষ। এককালের অভাবী সুখ লাল হালদার তার নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আজ সবজি চাষ করে সংসারের সুখের ছোঁয়া লাগিয়েছেন।

উজিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর বিশ্বাস বলেন, সুখ লাল হালদার তার নিজের অধিক আগ্রহে সবজি চাষ করে সংসারে সুখের ছোঁয়া লাগিয়েছেন। এভাবে সুখলালের মতো উপজেলার অন্যান্য আগ্রহী চাষীদের উৎসাহ দিয়ে সরকারি ভাবে যদি সাহায্য সহযোগীতা করা হয় তাহলে উজিরপুর উপজেলাকে সবজি চাষের মডেল হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।