গৌরনদী পৌরসভার ভোটারদের ভাবনা

“যারা প্রতিশ্রুতি রাখেন না তাদের ভোট দেয়ার প্রশ্নই আসেনা” এ নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উন্নয়ন কর্মকান্ড যা হয়েছে, তারও কোনো রক্ষণাবেক্ষণ নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তৈরি করা নালায় ময়লা-আবর্জনা জমে থাকে দিনের পর দিন। সেদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো নজরই নেই। শুরু থেকে অদ্যবর্ধি পৌরবাসী তাদের নাগরিক সুবিধা থেকে অনেকাংশেই রয়েছেন বঞ্চিত। ১৪ বছরের পৌরসভাটি নামে মাত্রই পৌরসভা। এ পৌরসভার নাগরিকদের রাস্তা-ঘাট, সুপীয় পানি, পয়ঃনিস্কাশন, আলোসহ কোন সুবিধাই দিতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌর এলাকায় পাকা নর্দমা আছে ৪ কিলোমিটার, আর কাঁচা ৫ কিলোমিটার। পৌর এলাকার ২৩ হাজার ৫’শ পরিবারের মধ্যে এ পর্যন্ত পানি সরবারহ পেয়েছে মাত্র একহাজার। পৌর এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজারের অবস্থাও নাজুক। শহরে কোন রিকসা ভ্যানের ষ্ট্যান্ড না থাকায় যানজট লেগেই রয়েছে। এক কথায় এটা শুধু নামেমাত্রই প্রথম শ্রেনীর একটা পৌরসভা” ক্ষোভের সাথে কথাগুলো বললেন গৌরনদী পৌরসভার নাগরিক পরিষদের সাধারন সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জহির। তিনি আরো বলেন-“আসলে, নির্বাচিত হওয়ার পর জনপ্রতিনিধিরা জনসাধারণের স্বার্থরক্ষার বিষয়টি ভুলে যান। এ বিষয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া উচিত”। পৌর এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন সরদার, ফিরোজ রহমান, নজরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, এ পৌরসভায় নর্দমা আছে কিন্তু তা পরিস্কার করা হয়না। চিত্ত বিনোদনের জন্য নেই কোন ব্যবস্থা, কাঁচা বাজারে কাঁদা, ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পরেছে গনশৌচাগারগুলো, কসাই খানা না থাকায় যত্রতত্র ভাবে গরু জবাই দেয়ায় পরিবেশ দুষিত হচ্ছে প্রতিদিন। গেরাকুল মহল্লার বাসিন্দা আকফাত আলী বেপারী, শাহজাহান হাওলাদারসহ অনেকেই বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই তাদের মহল্লার একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির মাঠে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। ফলে হাটু সমান পানি দিয়েই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। নির্বাচন আসলেই শুধু প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়। নির্বাচিত হওয়ার পর সেই প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যান সবাই। পৌর শহরের দক্ষিণ পালরদী মহল্লার বাসিন্দা বন্যা সরকার বলেন-“যারা প্রতিশ্রুতি রাখেন না-তাদের ভোট দেয়ার প্রশ্নই আসে না”।

বরিশালের গৌরনদী পৌরসভাটি গঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর। ওইসময় পৌরসভাটি ছিলো ‘গ’ শ্রেনীতে। ১৯৯৮ সালে ‘খ’ শ্রেনীতে এবং ২০০৬ সালে ‘ক’ শ্রেনীতে পৌরসভাটি উন্নিত হয়। মোট ১১ দশমিক ৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ১৭ টি মহল্লায় ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে এ পৌরসভাটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সালের হিসেব অনুযায়ী ২৩ হাজার ৫’শত ৫০টি পরিবারে ৫২ হাজার ৩’শ ৯২ জন মানুষ এ পৌরসভায় বসবাস করেছেন। গৌরনদী পৌরসভার তৃতীয় নির্বাচনে এবছর মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন মহাজোট মনোনীত মোঃ হারিছুর রহমান হারিছ ও চারদলীয় জোটের মনোনীত প্রার্থী, পৌর মেয়র নুরুল ইসলাম নুর আলম হাওলাদার। গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি কালিয়া দমন গুহ বলেন, “দলের তৃনমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থদের সাথে মতবিনিময় সভা করেই মহাজোটের একমাত্র মনোনীত প্রার্থী হিসেবে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম ইদ্রিস মিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র হারিছুর রহমান হারিছকে মনোনীত করা হয়। বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ মহাজোট মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষনা করেছেন। সেক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে মহাজোটভুক্ত দলগুলো এখন হারিছের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনের প্রচার প্রচারনা কাজ করছেন। গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের পরামর্শে বর্তমান পৌর মেয়র নুরুল ইসলামকে চারদলীয় জোটের এককপ্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে।