বরিশাল বিভাগে বিএনপির ভড়াডুবির নেপথ্যে!

সমর্থিত মহাজোটের মহাবিজয় হয়েছে। আবারো ভোটের ফলাফলে বিএনপির ভড়াডুবি হয়েছে। ১৯ টি পৌরসভার মধ্যে একটি পৌরসভায় বিএনপির মনোনীত ও একটিতে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ১৭টিতেই মহাজোট মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তবে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে বলেন, এটা আওয়ামীলীগের মহাবিজয় নয় মহাকারচুপি। তারা মহাকারচুপির মাধ্যমেই তাদের দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করেছে। তবে রাজনৈতিক বিশেষ্ণদের মতে বিএনপির ভড়াডুবির অন্যতম কারন হচ্ছে দলীয় কোন্দল। বিএনপির কেন্দ্রীয় হেভিওয়েট কোন নেতাই পৌর নির্বাচনের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেননি। তারা কেবল কেন্দ্রীয় নির্বাচন মনিটরিং সেলে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করতেই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।

অপরদিকে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ বিভাগের প্রতিটি পৌরসভার মহাজোট মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে অনুষ্ঠিত প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও পথসভায় অংশগ্রহন করেছেন। এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানদ্বয়, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, জনতা ব্যাংকের পরিচালক এডভোকেট বলরাম পোদ্দার বাবলু এ বিভাগের প্রতিটি পৌরসভার নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করে ভোট ভিক্ষার মাধ্যমে ভোটারদের মনজয় করে নিয়েছেন। এছাড়াও রাজনৈতিক দলের অতীত বর্তমান নিয়ে ভোটাররা চুলছেড়া বিশ্লেসন করে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীদের দিকেই ঝুঁকে পরেছেন। সবমিলিয়ে বিএনপির অতীতের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতিবাদ স্বরূপ এসব পৌর এলাকার সাধারন ভোটাররা বিএনপির প্রার্থীদের বর্জন করেছেন বলে বিশেষ্ণরা অভিমত দিয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি এডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার-এমপি বলেন, বরিশাল বিভাগের দুটি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেছে। এর মানে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। তিনি আরো বলেন, রাজশাহীর ফলাফল দেখে তা মেনে নিতে পারেননি আওয়ামীলীগ। যে কারনে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ভোট কারচুরি মাধ্যমে মহাজোট প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, সুষ্ঠ নির্বাচন হলে বিএনপি কমপক্ষে ১০টি পৌরসভায় বিজয়ী হতো। বরিশাল বিভাগে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ন পরিবেশে ভোট চলে। বেলা ১১টা থেকে বিভাগের বিভিন্ন পৌরসভায় আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ভোট কেন্দ্র দখলের অভিযোগ তুলে বিএনপি। অভিযোগ উঠে বরিশালের গৌরনদী, মুলাদী, মেহেন্দিগঞ্জ, বানারীপাড়া পৌরসভার কয়েকটি কেন্দ্রের বিএনপি এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়ার।

অবশ্য বিএনপির এ অভিযোগ অস্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা সফিকুর রহমান রেজাউল সিকদার বলেন, চারদলীয় জোটের প্রার্থীর পক্ষে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা উপজেলার টরকী বন্দর ভিক্টোরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র দখল করতে গেলে আমারা তাদের বাঁধা প্রদান করি। এসময় বহিরাগতদের সাথে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানের সাথে আমাদের বাকবিতন্ডা হয়েছে। এরপর পরই বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টরা ভোট কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যায়। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ভোট কেন্দ্র প্রবেশ করতে বাঁধা দেয়ার কিছুক্ষণ পরই বিএনপির প্রার্থী নুরুল ইসলাম হাওলাদার নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা করেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বিএনপির নেতৃবৃন্দ ত্রি-ধা বিভক্ত হয়ে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ত্রি-ধা বিভক্ত হওয়া বিএনপির নেতৃবৃন্দদের সাথে ইতোমধ্যে কয়েকদফা হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা মনে করেছিলেন পৌর নির্বাচনের পূর্বে কেন্দ্রীয় ভাবে দলের অভ্যন্তরীন কোন্দল মিটানো হবে। কিন্তু সে আশা শেষ মেষ গুড়ে বালি হয়েছে। এ কারনেও পৌর নির্বাচনে বিএনপির ভড়াডুবি হতে পারে বলে নির্বাচন বিশেষ্ণরা মনে করছেন।