অশ্লীল নাচ গান ও জুয়ার আসর চলছে। জুয়াড়ীদের কয়েকটি সিন্ডিকেট স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মীয় ব্যক্তিদের ব্যবহার ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নামেই প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বেশ রমরমা জুয়ার আসর বসাচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে ধর্মীয় ও নৈতিকতা বিবর্জিত নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে একটি চক্র সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে নির্বিঘ্নে হাতিয়ে নিচ্ছে। কোন উৎসব পার্বণ ছাড়াই যখন যেখানে ইচ্ছা সেখানে বসছে মেলার নামে জুয়ার আসর। এসব অনুষ্ঠানের ফলে এলাকায় সামাজিক অবক্ষয় দেখা যাচ্ছে।
জানা গেছে, গত দু’মাস ধরে পাহাড়ি উপজেলা আলীকদমে বৌদ্ধ ধর্মীয় মেলা, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের নামে কয়েকটি অসাধু জুয়াড়ী চক্রের রমরমা ব্যবসা চলছে। মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে মেলার স্থলে অশ্লীল নাচ গান ও জুয়ার আসর বসে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের সুত্রে জানা গেছে। রাত গভীর হলে এসব অনুষ্ঠান চলে উলঙ্গ নৃত্য।
বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নামে আবেদন করায় এসব অনুষ্ঠানের অনুমতিও সহজে মেলে যায়। থানা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কয়েকটি জুয়াড়ী চক্র ঘুরে ফিরে বিভিন্ন এলাকায় মেলার নামে জুয়ার আসর বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এ ফাঁদে পড়ছে গ্রামের সহজ সরল মানুষ। থানার অনুমতি নিয়ে বসে মেলা। মেলার আয়োজকরাও স্বীকার করেছেন অনুমতি নিয়ে তারা মেলা বসায়।
গত দু’মাস ধরে অন্ততঃ ১০টি স্থানে বিভিন্ন মেলার নামে জুয়ার আসর বসে। সুত্র জানায়, বাবু পাড়া, মংচা পাড়া, রেপাড় পাড়া, ছিনারী বাজার, পানবাজার সিলেটি পাড়া, চৈক্ষ্যং উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ, নয়াপাড়া, মংপাখই হেডম্যান পাড়া, মংচিং হেডম্যান পাড়া ও চিওনি পাড়ায় মেলার নামে জমজমাট জুয়ার আসর বসেছে। বৌদ্ধ ধর্মীয় মেলার নামে এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন হলেও মূলত: জুয়াড়ীরাই মূল আয়োজক বলে জানা যায়। এর অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও মেলা বলা হলেও স্থানীয় সচেতন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এর সাথে একমত নন। তাদের মতে এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মের নীতি আদর্শ ও ঐতিহ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানের নেপথ্যচারী হিসবে কাজ করছে জুয়াড়িদের নেতা মুছা গং।
জানা গেছে, এসব অনুষ্ঠান ও মেলাকে কেন্দ্র করে একটি চাঁদবাজ চক্রও নিয়মিত মাসোহারা নেয় বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। অপরদিকে, আইন-শৃঙ্খলাও নষ্ট হচ্ছে। নয়াপাড়ায় মেলার দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে এর জের ধরে সৃষ্ট ঘটনায় থানায় একটি মামলাও দায়ের হয়েছে। স্থানীয় সচেতন লোকজন জানান, এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকায় সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে।
বৌদ্ধ ধর্ম মতে এসবের কোন বৈধতা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আলীকদম কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ বলেন, শুধু বৌদ্ধ ধর্ম কেন আমার জানামতে কোন ধর্মই এই অশ্লীল নাচ গান ও জুয়াকে সর্মথন করেনা। বৌদ্ধ ধর্মের ১০টি শীলের মধ্যে ষ্পষ্ট বলা হয়েছে ‘ নাচ-গান-বাজনা-উৎসব উপভোগ করবো না’। বৌদ্ধ ধর্মকে কলংকিত করতে যারা এসব অনুষ্ঠান করছে প্রশাসনের উচিত এদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
যোগাযোগ করা হলে বান্দরবান জেলা জেএসএস এর ভূমি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক মংসানু মার্মা ও আলীকদম উপজেলা জেএসএস এর ভূমি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ছাথোয়াই মং মার্মা জানান, বৌদ্ধ ধর্মে এ ধরনের অশ্লীল নাচ গান ও জুয়াকে সার্পোট করেনা। এ চক্রটি বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধ্বংস করছে। তারা এ জাতীয় অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়ার আগে প্রশাসনের যাচাই বাছাই করার দাবী জানান।
এ বিষয়ে আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)‘র দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি বলেন, এগুলো তো উপজাতীয়দের অনুষ্ঠান। আমাদের কোন অনুমতি নেই। আমাদের আবার কিসের অনুমতি। বাধা দিলে তারা ক্ষেপে যায়। আমাদের কাছে তো আসে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য। ওখানো আমরা কেউ যায়না। থানার পারমিশন দেয়ার কোন ক্ষমতা নাই।
মমতাজ উদ্দিন আহমদ
আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি